কিছু বই কিছু কথা ১৯২ || নীলাঞ্জন কুমার
দৃশ্য সংগ্রহ । নিখিলকুমার সরকার । রবিপ্রকাশ । ষাট টাকা ।
আদ্যোপান্ত পোস্টমডার্ন ধারার জামা গায়ে দিয়ে 'মাছঘর' কাব্যগ্রন্থ থেকে শুরু করা ও ধীরে ধীরে যেভাবে সপ্তম কাব্যগ্রন্থ ' দৃশ্য সংগ্রহ ' তে বোধের দরজা কবি নিখিলকুমার সরকার খুলে দিয়েছেন, তাতে সাবাস ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না । তিনি পোস্টমডার্ন ছেড়ে নিজের স্বাভাবিক জায়গায় ফিরে এসেছেন তবু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পোস্টমডার্ন চিহ্নগুলো প্রকট । তার প্রমাণ: ' প্রথম ও দ্বিতীয় চোখ ছানিমুক্ত হলে, স্বাভাবিক নিয়মেই/ তৃতীয় নয়নেরও কোনও ভিশন প্রবলেম থাকে না ' ( ' ভিশন ') , আবার তাঁর নিজস্ব ভাবনায় তিনি অক্লেশে লিখে চলেন: ' নিষিদ্ধ কপাট ডাকছে ইশারায়..../ শরীর থেকে জ্যোৎস্না খুলে বাইরের জ্যোৎস্নায়/ আগন্তুক ঘরের ভেতর ঘরে- অন্ধকারে/ অন্ধকারের ভেজা অন্তর্বাস নিঃশব্দে খসে যায় । ' ( ' প্রথম রিপু ' ) ।
কবির এই পকেট বুকটি কবিকে তরুণ থেকে তরুণতর করে তোলে যখন পাই তাঁর নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে অনবদ্য শব্দপ্রক্রিয়ায় পাঠককে পৌঁছে দেওয়ার পংক্তি: ' শোনা যাচ্ছে- / ভুবনডাঙার শূন্যতার এই শরীর/ আজও খুঁজে চলেছে/ তার নিরুদ্দিষ্ট অন্তর্বাসটি । ' ( ' জলজ -২') , ' মোনালিসার ফেরার অপেক্ষায় ওর বেডপার্টনারের মতোই/ চন্ঞ্চল হয়ে উঠেছে- সমুদ্র থেকে অনেক দূরে/ ঘরের দেওয়ালে রেখে আসা/ ওর শূন্য ফ্রেমটিও ' ( ' দৃশ্য: ঙ')।
' দৃশ্য সংগ্রহ ' সে কারণে সাতটি বইয়ের ভেতর প্রাণবন্ত হয়ে যায় প্রথমতঃ , বইটির টিউনিং কোনোভাবে লঙ্ঘন না করে কবি সাজিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের কবিতা । দ্বিতীয়তঃ , আজকের উচ্চারণ তাঁকে ভিন্ন করে তোলে নতুনকে বরণ করার আগ্রহের কারণে । তৃতীয়তঃ, লেখার গুণে দৃশ্য কিভাবে দর্শন আনে তা কবির ক্যারিশমাতে সচেতন পাঠকের বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না । অনেক কবির মনে মনে সাধ থাকে নিজের ছবি দিয়ে কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ করার । কবি এই কাব্যগ্রন্থে দারুণ সাধ মিটিয়েছেন । কবির সুন্দর মুখশ্রী দেখতে বেশ লাগে । আলোকচিত্রী ভালো অ্যাঙ্গেলে ছবিটি তুলেছেন । তবে তা শুধুমাত্র দৃশ্য, দর্শন হয়ে ওঠে না ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন