মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১

ম্মৃতিকথা ১১ :: এই আমি চরিত্র || নীলাঞ্জন কুমার (গত মাসের পর) || Autobiogrphy, Nilanjan Kumar

 ম্মৃতিকথা ১১  


                               এই আমি চরিত্র


                                নীলাঞ্জন কুমার




                                   । ।   ১১।।


                                গত মাসের পর


ছ' জনের একটি পরিবারের কি করে মা কত কম পয়সায় চালাতেন তা বলে বোঝানো যাবে না । অথচ
কত কি না করেছি । খাওয়া দাওয়া মন্দ ছিল না । দিদিদের জামাকাপড় মা বানিয়ে দিত । সকাল থেকে হাড়ভাঙা খাটুনির করে মা আমাদের মুখে ভাত তুলে দিত। এখন বুঝি তা কতখানি কষ্টকর । আমরা চার ভাই বোন যে মানুষ হয়েছি তার প্রধান কৃতিত্ব মাকে দিতে হবে।  মা ছিল সৌন্দর্য বিলাসী । সারা ঘরদোর একদম পরিপাটি করে সাজানো থাকতো । বাবার বন্ধুরা
মা- র কতো প্রশংসা করত । বাবার নাটকের চর্চার ক্ষেত্রে  মায়ের নীরব সহযোগিতা দেখার মতো বিষয় ছিল। মা কোনদিন অভাবকে অভাব বলে মনে করতো না । হিসেবের মধ্যে দিয়ে চলার জন্য ঠিকঠাক চলে যেত ।
সেজন্য বেলা ভবনের ম্মৃতি সবচেয়ে মধুর স্মৃতি বলে মনে করি । দেবেন কাকু ছাড়া সাব টেনেন্ট হিসেবে আরো দুটি  পরিবার এসেছিল । তার মধ্যে বাবার একজন সহকর্মী ব্যানার্জি কাকু ও অন্যজন ভরত কাকুরাও বেশ ভালো ছিল । ব্যানার্জি কাকুর দুই ছেলের সঙ্গে সমবয়সী হিসেবে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল ।
কিছুদিন পর ট্রান্সফারের কারণে ওরা চলে গিয়েছিল ।
ভরতকাকু বেশ ভালো মানুষ ছিল । ওদের একটা ছোট্ট বাচ্চা ছিল , তাকে দারুণ ভালোবাসতাম । এভাবে চলছিল দিন । ধীরে ধীরে ক্লাস টু থেকে থ্রিতে  পৌছোলাম ।
                 এমন সময় বাবার প্রমোশন হল অফিসার পদে। সম্পূর্ণ হঠাৎ করে । বাবা ট্রান্সফার হলো এক্সটেনশন পন্ঞ্চায়েত অফিসার  হিসেবে গড়বেতা শহরের এক নম্বর ব্লকে । এতে সামান্য মাইনে বাড়লো । কিন্তু দুটো জায়গায় খরচ চালাতে মাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল সে সময় । বাবা শনিবার অবধি অফিস করে সোমবার গড়বেতা ফিরে যেত । এভাবে বাবা এক বছর চালিয়েছিল । তারপর একদিন বাবা সবাইকে নিয়ে গড়বেতা শহরে সংসার পাতলো । তখন আমি সবে ফোরে উঠেছি ।
            গড়বেতা শহরেটি ছিল বেশ ছোট । আমরা যখন প্রথমে যে ভাড়া বাড়িতে উঠেছিলাম সেখানে দুটি ঘর ছিল বেশ বড় । সামনে বিরাট উঠোন তার পাশে আরো একটা ঘর। নতুন জায়গায় এসে  সকলের যেমন আনন্দ হয় আমারও তেমনি হয়েছিল । ভর্তি হয়েছিলাম 
বাড়ির কাছে সিলভার জুবিলি প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ফোরে।বাড়ির সামনে দিদিদের কিছু বান্ধবী হয়েছিল ।
দিদিরা খেলতো আইশ পাইস লুকোচুরি খেলা । খেলা শেষ হবার পর হত কপট মারামারি । সকলে বলত ' আদা গদা নুন তেল পাঁচ পুয়া বুন তেল ' ।
                 আমার স্কুল ছিল দুপুর বেলা । মর্নিং স্কুল থেকে হঠাৎ করে দুপুরের স্কুলে পড়াশোনার বিষয়ে প্রথম প্রথম অসূবিধে হত।  খুব ঘুম পেত স্কুলে ,তাছাড়া প্রাকৃতিক ডাক বিশেষ বিপদের সঙ্কেত দিত । আরো একটা বিষয় লক্ষ্য করা  গিয়েছিল বাবা অফিসার হওয়ার কারণে এই ছোট্ট মফস্বল শহরের অনেকেই আমায় এড়িয়ে চলত । কেউ কেউ পেছনে লাগত । আসলে কারো পেছনে লাগা কি জিনিস তার অভিজ্ঞতা হয়েছিল গড়বেতা এসে ।           

                                                ( চলবে)




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...