আটপৌরে কবিতা : অলোক বিশ্বাস
সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০
নস্টালজিয়া ২৬ || পৃথা চট্টোপাধ্যায় || ন্যানো টেক্সট
নস্টালজিয়া ২৬
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
'তুমি পারবে না ' এই কথাটা ছোটদের কখনই বলতে নেই। বিশেষ করে মা যদি শিশুকে বারবার বলতে থাকে 'তুমি পারবে না' শিশুর মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ধারণা জন্মে যায় যে মা যখন বলছে তখন আমি পারব না। যত কঠিন কিছু হোক শিশুটিকে যদি বারবার উৎসাহিত করা হয় 'তুমি পারবে' তাহলে অনেক সাহস আর মনোবল খুঁজে পায় সে, জীবনের কঠিন বাধা অনায়াসে অতিক্রম করতে শেখে। এই 'আমি পারি'(I can) মন্ত্রে শৈশব ও কৈশোর থেকেই শিশু কিশোরদের দীক্ষিত করে তুলতে হয় এই অভিজ্ঞতা আমার ব্যক্তিগত জীবন সঞ্জাত।
খুব শান্ত আর ভিতু ছিলাম ছোটবেলা থেকেই। শান্ত শিষ্ট আমার স্বভাব, কিন্তু অহেতুক ভয়টা মা নিজের অজান্তেই আমার মনের মধ্যে তৈরি করে দিয়েছিল এটা আমি বড় হয়ে বুঝতে পেরেছি । আমার আগে ও পরে যে দুটি সন্তান মায়ের জন্মেছিল তাদের শৈশবই মৃত্যু হয়েছিল। একটির জন্মের পরেই আর একজনের তিনমাসে পক্স হয়ে। আমিও প্রি ম্যাচিওর বেবিছিলাম, আট মাসের শুরুতেই জন্মেছিলাম। সময়ের আগেই এত শান্ত মেয়েটি কীভাবে যে ছটফট করে পৃথিবীর আলো দেখতে বেড়িয়ে এসেছিল জানি না। অনেক যত্নে সাধ্য সাধনা করে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল মা- বাবা। ছোটবেলায় টাইফয়েড হয়েছিল তিন বার। বারবার জ্বর হতো আর তখন ডাক্তার কিছুতেই ভাত খেতে দিত না বলে আমার খুব খারাপ লাগত। যাই হোক এইসব কারণে আমাকে মা পক্ষীমাতার মত ডানা দিয়ে আগলে বড় করে তুলেছিল। পরে অবশ্য এই আমাকেই জীবনের অজস্র ঝড় ঝামেলা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে বারবার অনেক বেশি আর আমার 'পারব না' এই গন্ডি ভেঙে বেরিয়ে আসতে খুব কষ্ট হয়েছে । আসলে ছোটবেলা থেকেই মায়ের মনে আমার জন্য সবসময় একটা ভয় ছিল ,যদি কিছু হয়ে যায়! খুব আলতো করে রাখতে চেষ্টা করত আমাকে সবরকম বিপদ আপদের হাত থেকে। পড়াশোনা ছাড়া কোনো কাজ আমাকে করতে দিত না মা। ফলে আমি অনেক বড় পর্যন্ত ভয়ে দেশলাই জ্বালাতেও পারতাম না। চা ছাড়া আর কোনো কিছু করতে পারতাম না বিয়ের সময়েও আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা একথা জানে। যে কোনো কাজ করতে গেলেই মা বলত 'তুই পারবি না', এটা অতিমাত্রায় স্নেহের বশে বলা, কিন্তু সেটা আমার মনে গেঁথে বসেছিল। আমি সব কাজ থেকে গুটিয়ে রাখতাম নিজেকে 'পারব না' ভেবে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে কখনো "পারবে না" এই কথা মা বলত না। তবুও মায়ের অজস্র 'না' আমার জীবনে সব কাজের মধ্যেই কিছুটা নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া করেছিল , আমার মনোবল নষ্ট করেছিল বড় হয়ে তা উপলব্ধি করেছি। পড়াশোনা ও জীবনের শিক্ষায় এই 'না'-এর গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করেছি। মাকেও বলতাম সে কথা, মাও পরে বুঝতে পেরেছিল।
অতৃপ্তি || দীপক কর || অন্যান্য কবিতা
অতৃপ্তি
দীপক কর
যে-কবিতা পাঠে
এবড়ো খেবড়ো
শব্দ-পাথরের হোঁচট
ক্ষত-বিক্ষত পাঠক-হৃদয়
তৃষ্ণার শান্তি কোথায়!
পাঠকের আনন্দাশ্রু
সুখাস্বাদনে
' উপল ব্যথিত হৃদয়'
অতৃপ্ত অসহায়!
কবি, তোমার পথচলা
একাকিত্বের নির্জনে
পাঠকের আবেগ-রশ্মি
প্রবেশাধিকার হীন!
শব্দব্রাউজ ২৯ || নীলাঞ্জন কুমার || "আই-যুগ"-এর কবিতা
শব্দব্রাউজ ২৯ । নীলাঞ্জন কুমার
এ যেন এক অভ্যাস । এই অভ্যাসে তেঘরিয়ার বিপাশা আবাসনের তিনতলার ফ্ল্যাটের মধ্যে একটি পুরোনো খাটে বসে লিখতে চাই এই ২৮।১১।২০২০ তারিখের সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে শব্দব্রাউজ । অধুনা প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ঘা এখনো শুকোয়নি ফেসবুক ইউটিউবে । বড় মনে পড়ছে খিদ্দার ' ফাইট কোনি ফাইট ' । তা যে কোন সৃষ্টিশীল ব্যক্তির কাছে আপ্তবাক্য ।
শব্দসূত্র : ফাইট কোনি ফাইট
ফাইট মানে গুন্ডাগর্দি যে নয় তা খিদ্দা বুঝিয়েছে 'কোনি ' তে। কোনিকে ভুললেও খিদ্দাকে ভোলা যায় ? আজীবন প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে সাঁতরে যেতে যেতে বড় জীবন্ত হয়ে ওঠার যে স্বপ্ন শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত যাদের, তারা বোঝেন খিদ্দা মানে বাস্তব, মুরলী দে র কবিতা । চেনা দিন চেনা স্বপ্নের বাইরের ফাইট তারা পুষে রাখতে পারেন ।
কোনি মানে খিদ্দার সাটেলাইট। অথচ বিখ্যাত হয় সে । পারফরমেন্সের কি গুণ ! গীতিকার সুরকার গান তৈরি করে অথচ শিল্পী লুটে নেয় বৈভব ।
ফাইট করার বিশেষ আনন্দ শেষ হলে মৃত্যুই একমাত্র কাম্য হওয়া উচিত .....
কিছু বই কিছু কথা ২০৮ || নীলাঞ্জন কুমার || বেঁধে নাও আমার প্রপাত || অঞ্জনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
কিছু বই কিছু কথা ২০৮ । নীলাঞ্জন কুমার
বেঁধে নাও আমার প্রপাত । অঞ্জনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । সমাকৃতি প্রকাশন । দেড় টাকা ।
' ঢেউ স্পর্শ করে যায় তোমার দু-পা/ কেউ স্পর্শ করে যায় তোমার দু- পা ' - র মতো সাবলীল অথচ ব্যন্ঞ্জনা সমৃদ্ধ কবিতা অনেকেই লিখতে পারেন, কিন্তু অন্ঞ্জনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেড় টাকা দামের এক ফর্মার অতি চটি বইটির ভেতরে আরো কিছু পাওয়ার তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয় ।শিরোনামহীন বারোটি কবিতার এই কাব্য পুস্তিকা ' বেঁধে নাও আমার প্রপাত ' তে সেরকম কবিতা পাই : ' তোমার সঙ্গে একা একা কথা বলি হেমন্তের রাতে/ অন্ধকার! অন্ধকার! / চাপ চাপ অন্ধকার পড়ে আছে চাঁদের করাতে । ' , ' আগুন অনেক পারে ; / কিন্তু পারেনা শুধু/ ভেঙে নিতে সম্যক
আঁতাত । '
এত সত্বেও তবু একটা কথা বলতে হয়, এই ছোট্ট ছোট্ট কবিতাগুলোর ভেতরে ভালো কবিতা থাকা সত্বেও কি করে: ' আমি ভাবতাম একদিন তবে ঠিক/ আমার দু-হাত তুমি ছেড়ে দিতে যদি ' কিংবা,
' আমাদের প্রথম আলাপ ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে ' - র মতো সাদামাঠা পংক্তিগুলিকে নির্বাচন করা হল বোধগম্য নয় । ফলে বইটির ভেতরে টিউনিং- এর অভাব অনুভব করি । আফশোস ১৯৯৭সালের এই পুস্তিকার ভেতরে আরো কিছু ভালো পংক্তি থেকে বন্ঞ্চিত হলাম ।
অঞ্জন বাবুর কবিতার ভেতরে যে চেষ্টা আছে তাকে সন্মান জানাতে হয় । তাঁর পংক্তির পরিণত রূপ (কিছু কিছু ক্ষেত্রে) তন্নিষ্ঠ করে তোলে, তখন মনে হয় ভালো কবিতার কাব্যগ্রন্থ পাঠ করার আগ্রহ না পাওয়ার এই আকালের যুগেও কিছু ব্যতিক্রমী কাব্যসম্ভারও মজুত আছে । তবে বহুদিন এই কবির কবিতা পাওয়া যাচ্ছে না ।খারাপ লাগে যখন ভালো কবিরা কেন যে নিজেদের গুটিয়ে যেতে দেন! তার ফলে বাংলা সাহিত্যের কতখানি ক্ষতি হয় তা সিরিয়াস কবিতা পাঠক বর্গ ভালো বোঝেন । উৎপল চক্রবর্তীর প্রচ্ছদ ভালো লাগে ।
সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য ২১০ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক গদ্য
সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
২১০.
কবিতাপাক্ষিক ৩০০ প্রকাশিত হয়েছিল ২০ মার্চ ২০০৫ । বহরমপুরের ঋত্বিকসদনে। যার কথা গত কয়েক দিন ধরে লিখলাম।
এই সংখ্যাটি আলাদা করে গ্রন্থাকারেও প্রকাশ করা হয়। এর উৎসর্গপত্রটি একবার দেখানো যেতে পারে :
বাংলাকবিতা পত্রিকার প্রথম এবং প্রধানতম রূপকার
বুদ্ধদেব বসু-কে
পরম শ্রদ্ধায়
প্রথম সংখ্যাতে যেমন বুদ্ধদেব বসু-র প্রতি আনুগত্য ছিল , ৩০০ তম সংখ্যাতেও সেই আনুগত্য অটুট ছিল। আগাম বলে রাখি যতদিন বেঁচে থাকব , বুদ্ধদেব বসু-র অনুগত থেকে যাব।
ওই ৩০০ সংখ্যায় আমার সম্পাদকীয় লেখাটির শিরোনাম ছিল : কথার কথা ।
বা কথার পিঠে কথা। কথার ধারাবাহিকতা-ই ইতিহাস। সেই ইতিহাস-কে সম্মান জানিয়ে আমি লিখেছিলাম :
' একবার যে মানুষ নিজেকে স্বাধীন ভেবেছে তার পক্ষে কোনোদিনই স্বাধীনতা বিসর্জন দেওয়া সম্ভব নয়। '
বা তখন বলতে চেয়েছিলাম ' স্বাধীন মানুষকে পোষ মানানো যায় না।
এই কথার সমর্থনে ঠিক কী লিখেছিলাম সেটাও পড়া হোক :
' আমরা যদি শাসকদলের অনুগামী হতাম অনেক আগেই আমাদের রবীন্দ্রসদনে সংবর্ধনা জানানো হত, আমরা যদি বিরোধীদলের সমর্থক হতাম তাহলে টাউন হলে আমাদের সংবর্ধিত করা হত।শাসকদলের অনুগামী হওয়া কিংবা বিরোধীদলের সমর্থক হওয়া খুব একটা দুরূহ কাজ নয়। কবিতাপাক্ষিকের আগে আমার যে অতীত ছিল , সেই অতীতের প্রথম পর্বে অর্থাৎ ১৯৬৭-র আগে তৎকালীন শাসকদলের বিরোধিতায় ছিলাম, দ্বিতীয় পর্বে ৬৭-র পর ছিলাম তৎকালীন শাসকজোটের সমর্থনে। কাজেই দুটো রাস্তাই আদৌ অপরিচিত নয় আমার কাছে '।
এই লেখাটা লিখেছিলাম ১৩ .০৫. ২০০৫ -এ । পরবর্তীতে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর মনোভাবের বদল ঘটেছিল। তারা হয়ে উঠেছিল দাম্ভিক , অহংকারী তথা স্বেচ্ছাচারী। আমরাও আমাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের লড়াকু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।
আর এখনকার অবস্থান , ব্যক্তিগতভাবে আমার, তা কারো অজানা নয় । সেসব পরে লেখার অনেক সময় পাবো। এখন লিখছি কবিতাপাক্ষিক ৩০০ -র কথা , কথার কথা। যেখানে লিখেছিলাম :
' আর মাত্র ২০০ সংখ্যার পরে কবিতাপাক্ষিক ৫০০ প্রকাশিত হবে। ততদিনে আমার ডানায় অনেক নতুন পালক গজাবে , আপনারা দেখবেন তখনও আমি এরকমই থেকে যাব '।
আরো লিখেছিলাম :
' কবিতাপাক্ষিক ১০ বছর শীর্ষক সংকলনটির প্রাথমিক প্রস্তুতি ছিল , মূলত সেটিকে update করেই কবিতাপাক্ষিক ৩০০ করা হল। কবিতাপাক্ষিক-এ সেই সময় পর্যন্ত ১২৭৮ জন কবিতা লিখেছেন , ১ - ১০০ সংখ্যার সম্মিলিত সূচি কিনতে পাওয়া যায়। এই সংকলনে মাত্র ৪২১ জনের কবিতা নেওয়া গেল। একটা কথা সততার সঙ্গে বলে রাখা ভালো, সম্পর্ক এবং ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া কবি নির্বাচনে, এ কারণে কাঙ্ক্ষিত বহু নাম বাদ পরেছে। কবি হিসাবে সেরকম স্বীকৃত নন এরকম প্রায় ১০০ জনের বহু কবিতা জায়গা পেল না যেগুলি এই গ্রন্থের সংকলিত কবিতার সমমানের, সমতূল্য। নিরপেক্ষ থাকা শিখিনি , এখানেই আমার যাবতীয় ত্রুটি এবং বিচ্যুতি। '
ত্রুটি এবং বিচ্যুতির কথা স্বীকার করাটাকে প্রশংসা করা যেতেই পারে। কিন্তু সময় বা মহাকাল অনেক কিছু মুছে দেয়। এখন মনে হচ্ছে সে সময় কোনো বিশেষ কারণে কয়েকজন বিশিষ্ট কবিকে বাদ দেওয়াটা কেবল মাত্র আমার একগুঁয়েমির জন্য। এখন মনে হচ্ছে এদের বাদ দেওয়াটা একটা ঐতিহাসিক ভুল। এরজন্য আমি এখন ক্ষমাপ্রার্থী।
ধরা যাক অলোক বিশ্বাস কপা -র প্রথম সংখ্যা থেকে লিখেছে বা অনিন্দ্য রায় ছাত্রাবস্থা থেকে কপা-তে লিখে এসেছে। কবিতা-কে update করার প্রকল্পে এদের অবস্থান কারো থেকেই কম নয় , এমনকী আমার থেকেও কম নয় , এই দুজন সহ আরো কয়েক জনের বাদ যাওয়াটা সম্পাদক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত ভুল।
রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০
উপগ্রহের বার্তা || দেবব্রত রায় || গল্প
উপগ্রহের বার্তা
দেবব্রত রায়
ববিতা জিগ্যেস করলো, ডিঙগো ডিয়ার, তুমি কি জান সত্যি এবং মিথ্যের মধ্যে পার্থক্য কতটা মানে, হাও মাচ ডিফারেন্স বিটুইন ট্র্যু অ্যান্ড ফলস ? ববিতা ডিঙগোর দিদুন অর্থাৎ ,মায়ের মা । স্কুলের বেবিদের মতন করে দিদুনের কাঁধ পর্যন্ত চুল ছাঁটা।মাঝে মাঝেই ডিঙগোর দিদুন তাতে আবার রঙিন হেয়ার-ব্যান্ড ব্যবহার করেন আর, কথা বলার সময় সেই ঝাপঝুপো চুলগুলো খুবই ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে তিনি কথা বলেন। দিদুনের এইধরনের বেবি-বেবি অ্যাটিটিউড ডিঙগোর মোটেই ভালো লাগে না। ও ঘাড় শক্ত করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ববিতা আবারও বলে, ডিঙগো, প্লিজ নটি বয়ের মতো অমন গোঁজ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকো না ! কথাগুলো বলেই , সে ডিঙগো-র কার্লি চুলের একটা গোছা ধরে একটু জোরেই টান দেয়। বলে, "শোন, চোখে যা দেখবে তাই সত্যি আর, কানে যা শুনবে জেনো তার সবটাই মিথ্যে!...আর, যেহেতু আমাদের চোখ এবং কানের মাঝখানের দূরত্ব হচ্ছে চার আঙুলের তাই, সত্যি এবং মিথ্যের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে মাত্র চার আঙুলের ! " বলেই, ববিতা একটা বিজ্ঞের হাসি হাসলো। দিদুনের এই কথাগুলোর লক্ষ্য যে আসলে জিকো সেটা বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না ডিঙগোর। কাল বাঁকুড়ার থেকে জিকো ফোন করে ডিঙগোর বাপি মানে, জিকো তার ছেলেকে হাঁটুর ব্যাথা নিয়ে ডাক্তার কী-কী অ্যাডভাইজ দিয়েছেন সেই বিষয়েই আলোচনা করছিল। অথচ, জিকো কিন্তু ,একেবারেই অন্যরকম কথা বলে। সে বলে, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তা পরীক্ষা করে বুঝে নিতে হয় ! প্রয়োজনে তুমি কারোর সাহায্য নিতে পার কিন্তু , সিদ্ধান্তটা নিতে হবে তোমাকেই ! কলকাতার এই বাড়িতে জিকো খুব কমই আসে । সে থাকে অনেক দূরে। সেই বাঁকুড়ায়। মাঝেমধ্যে যখন সে ডিঙগোদের সঙ্গে এসে থাকে তখন ডিঙগোর খুব ভালো লাগে, ভিতরে ভিতরে ভীষণ আনন্দ হয় কিন্তু, মায়ের ভয়ে ডিঙগো সেটা প্রকাশ করতে পারে না। সেসময় বাবাও ওই ক-দিনের জন্যে ডিঙগোর মতোই যেন একেবারে ছোট্টটি হয়ে যায় ! অফিস থেকে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে নিয়ে সটান জিকো-র কোলে শুয়ে পড়ে বলে, মাথাটা একটু টিপে দাও দেখি মা ! ডিঙগো ক্লাস-টু পর্যন্ত জানত ,ওর ঠাম্মি-র নাম জিকো তাই, ঠাম্মি যখন ডিঙগোকে জিকো বলে ডাকত তখন ও বলত আমি তো ডিঙগো ,তোমার নাম তো জিকো ! ডিঙগো এখন জানে পৃথিবীর একজন বিখ্যাত ফুটবলারের নাম জিকো।যাঁর জন্ম ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে। ঠাম্মি তাঁর নামেই ওর নাম রেখেছিল জিকো। কিন্তু, মা আর,দিদুনের সেই নামটা পছন্দ নয় ! মা যখন ঠাম্মির সঙ্গে মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলে তখন হেসে হেসে কী সুন্দরভাবে কথা বলে কিন্তু, ফোনটা নামিয়ে রেখেই সে যেন জায়ান্টের মতো গরগর করতে থাকে ! বলে, ডাইনি বুড়িটা মরলে বাঁচি ! ব্যাঙ্কের টাকাগুলো হাতে পেলে অন্তত এই সময় কাজে লাগাতে পারতাম....
ডিঙগো ওর মায়ের সব কথাগুলো-র মানে ঠিকঠাক বুঝতে পারে না কিন্তু , এটুকু সে বুঝতে পারে যে কথাগুলো খুবই নোংরা !
একটা ছুটির দুপুরে সবাই যখন খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছে ডিঙগো তখন ওর বাবার ফোনটা নিয়ে চুপিচুপি নিজের পড়ার ঘরে এসে ঢোকে । এইসময় খাওয়াদাওয়া সেরে ঠাম্মি তার প্রিয় ক্রেডলটাই বসে গল্পের বই পড়ে। ডিঙগো ওর অনভ্যস্ত হাতে ঠাম্মির ফোন-নাম্বারটা টেপে।ও পাশে একটা সুন্দর রিংটোন বেজে ওঠে, আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে...... " হ্যালো ! " ঠাম্মির গলা শুনতে পায় ডিঙগো। সে বলে, আমি এখন জিকো বলছি ! ঠাম্মি ওপাশ থেকে হাসি হাসি গলায় বলে, " এখন জিকো! " বেশ, বলো ! ঠাম্মির কথায় জিকো লজ্জা পায়। সে বলে, না, না , আমি জিকো-ই বলছি। তারপর, খুবই সিক্রেট একটা বিষয় আলোচনার মতো করে সে চুপিচুপি গলায় বলে, শোনো , আমি আর, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আদ্রিজা রিসেন্ট একটা ম্যাটার ডিসকাভার করেছি ! ওপাশ থেকে ঠাম্মির কৌতুহলী গলা ভেসে আসে। বলে, তোমরা দুজনে ! তাই ! তা, কী ডিসকভার করেছো বল তো ! না, মানে বিষয়টা আদ্রিজা-ই ডিসকাভার করেছে তবে ,আমিও সেটা গ্রান্ট করেছি ! কথাগুলো আবারও লজ্জা পাওয়া গলাতেই বললো জিকো ! বেশ তো ! তা, বিষয়টা কী ? ওপাশ থেকে বিশেষ আগ্রহ নিয়ে জানতে চায় ঠাম্মি । আমরা ডিসকাভার করেছি, কথাটা বলেই, জিকো কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে তারপর,বলে, না, মানে তুমি মোটেই নও কিন্তু, বেশিরভাগ বড়োরা-ই, মানে দিদুন,মায়ের মতো বড়োরা ফোনে যা কিছু বলে জেনো তার বেশিরভাগ-ই মানে 99.9% একেবারেই ফলস ! কিন্তু, এই যে আমি ফোন করছি আমি কিন্তু , সত্যি বলছি! মানে, আমি বলতে চাইছি আসলে , সব শোনা কথাই কিন্তু , মিথ্যে নয়..... জিকোর নরম মনের ভিতরে যে একটা নিদারুণ টানাপোড়েন চলছে সেটা আন্দাজ করতে পেরে জয়তীর বুকের কাছটা মুহূর্তে ভীষণ ভারি হয়ে ওঠে ! কোলের উপর রাখা বইখানা সে ধীরে ধীরে পাশে নামিয়ে রাখে । ছেলের মাত্র তিন বছর বয়সে নীলাঞ্জনকে হারায় জয়তী ! তারপর থেকে শুধুই লড়াই আর, লড়াই ! একদিকে অধ্যাপনা আরেকদিকে ছেলে মানুষ করা। সেসময় নীলাঞ্জনের মা, মানে জয়তীর শাশুড়ি ওদের ছেলে আর মাকে একেবারে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন অবশ্য,জয়তীও ছেলে আর, বৃদ্ধা শাশুড়ির প্রতি কর্তব্যে অবহেলা হবে ভেবেই একবারের জন্যেও ওর নিজের মাকে সংসারের বিষয়ে মাথা ঘামাতে দেয়নি কারণ, জয়তী খুব ভালো করেই জানত , ওর মা সংসারে এলে শুধু নিজের মেয়ের কথা-ই ভাববে ! না তার ছেলের কথা ভাবতো , না ভাবতো নীলাঞ্জনের মায়ের কথা ! জয়তীর মা অবশ্য এসবের মধ্যেই জয়তীর জন্য দু-দুটো সম্বন্ধও দেখে ফেলেছিল ! ডঃ অরুণাংশু-ও ওকে ভালোবাসার কথা বলেছিলেন । সেও ছিল আরেক লড়াই !মাত্র পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের জয়তীর মনের সঙ্গে সেদিন লড়াইটা হয়েছিল এক মায়ের, এক পুত্রহারা বৃদ্ধার বৌমার দায়িত্ববোধের ! জয়তী যদিও ,ওর মা, ডঃ অরুণাংশু বসু এদের কারোর ডাকেই সেদিন সাড়া দেয়নি ! আজ পাঁচবছর হলো জয়তীর মা মারা গেছেন! শাশুড়ী তারও অনেক আগেই। ছেলে সেই সবে জয়েন্টে চান্স পেয়ে ডাক্তারিতে ভর্তি হয়েছে ! ডঃ অরুণাংশু বসু এখন সাউথ -অস্ট্রেলিয়ায়। ওখানকারই এক ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিবাহসূত্রে সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়ে সেই কবেই দেশ ছেড়েছেন তিনি ।
জয়তী কনসিভ হওয়ার একেবারে প্রথম দিন থেকেই নীলাঞ্জনের ইচ্ছে ছিল ওদের ছেলেই হোক বা, মেয়েই হোক সে ডাক্তার হবে ! জয়তী বলেছিল, ছেলে-মেয়েদেরও তো নিজস্ব একটা 'সে ' থাকে ! নীলাঞ্জন কেন যে সেদিন হাসতে হাসতে বলেছিল, দেখো তুমি বললে সে ঠিক রাজি হয়ে যাবে ! তাহলে কি, নীলাঞ্জন আগে থেকেই বুঝতে পেরে গিয়েছিল তাদের সন্তান বড়ো হওয়া পর্যন্ত সে থাকবে না ! নীলাঞ্জনের অনেক কথাবার্তা জয়তীর কাছে আজও রহস্যই থেকে গেছে ! দেখতে দেখতে আটান্নটা বছর কীভাবে যে কেটে গেল, জয়তী এখন আর সেসব যেন ভাবতেই পারেনা ! হয়তো,এরকমই হয় কিন্তু, নিজের জীবনে একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিশ্চয়ই সেসময় ভীষণ জটিল বলেই মনে হয়েছিল তার ! নদীর স্রোতে ভেসে যাওয়া পুরানো কাঠামো কি ফিরে আসে,জয়তী বুঝতে পারেনা ! তার এইটুকু জীবনে ঘটে যাওয়া কত ঘটনায় না জমে ছিল কোনো এক অন্ধকার গুহার ভিতরে ! আজকাল একে একে সব যেন ফিরে আসছে জোয়ারের কলস্রোতে ! নীলাঞ্জন আর, জয়তীর একমাত্র সন্তান শঙখসুভ্র চ্যাটার্জি এখন কলকাতায় ভীষণ ব্যস্ত একজন ইয়াং অ্যান্ড হাইলি প্রমিসিং কার্ডিওলজিস্ট ! জয়তী ভাবে নিজের শরীর থেকে ছিন্ন হয়ে সুদূর কক্ষপথে চলে যাওয়া উজ্জ্বল চাঁদের জন্য মাঝরাতে এই গ্রহটা যখন একেবারেই নিঃসঙ্গ ওহয়ে পড়ে তখন কি, সকলের চোখের আড়ালে তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে ! ক্রমশ এক নিরবচ্ছিন্ন ভাবনায় তলিয়ে যেতে যেতে জয়তীর কানে দূর উপগ্রহ থেকে যেন একটা বার্তা ভেসে আসছিল, হ্যালো, হ্যালো....আমি জিকো বলছি ! হ্যালো.......হ্যালো........
একটা চিঠি || নিলয় মিত্র || কবিতা
একটা চিঠি
নিলয় মিত্র
খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে
কোথায়,কেমন আছ তুমি
ঘোলাটে ছবির মতো সময়টা,
শুধু বেঁচে বর্তে থাকা।
ভেবেছি অনেকবার কেমন হয়
যদি একবার,আর একবার
দেখা হয়ে যায়
এই বাংলার কোন আঙিনায়
কালজানির দিন,যুবতী মুখ
ফিরে পাওয়া যায়।
তোমার সেতারের সুর ঠোঁটের
কম্পন
আঙুলের সঞ্চারমান
চঞ্চলতায় সময় হারায়
বয়সের দীর্ঘ ছায়া পরে গেল
পাতা খসে পড়ার দিন।
বুকের ভিতরেমোচড়ানো কষ্ট
চোখের জলে ভেজা বাদামি
একটা মুখ দেখি
বহু বছর রোদে পুড়েছি জলে
ভিজেছি
তবু, কিজানি,কেন ভুলতে...
চিঠিটা পাবে কিনা যানিনা
পেলে.....।
কিছু বই কিছু কথা ২০৭ || নীলাঞ্জন কুমার || ওগো দুর্বা কিছু ঘাস || মুরলী দে || সমাকৃতি প্রকাশ
কিছু বই কিছু কথা ২০৭ । নীলাঞ্জন কুমার
ওগো দুর্বা কিছু ঘাস। মুরলী দে। সমাকৃতি প্রকাশ । দেড় টাকা ।
অতিক্ষীণতনু কাব্য পুস্তিকার ভেতরে এগারো খানি কবিতা এগারো মিনিটে পড়ে ফেলার পরও তার রেশ এগারো দিন থেকে যাবার মতো করে অনায়াসে লিখে যেতে পারেন কবি মুরলী দে । বাঁকুড়া জেলার এই কবির পরিচয়ে কলকাতা কলকাতা গন্ধ না থাকার কারণে অনেকেই চিনবেন না, কিন্তু একবার যদি কবিতায় চেনা যায় তবে কবিতা পাঠক তাঁকে বিশেষ জায়গা দিতে বাধ্য হবেন । যেমন রেখেছি আমি । তার সমস্ত অমোঘ পংক্তি মাত্র দেড় টাকার বই ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত 'ওগো দুর্বা কিছু ঘাস ' -এর ভেতরে যা স্থান পেয়েছে সেগুলোর কয়েকটি: ' ওগো অনন্ত , আগুন থেকে/ উঠে এসে, অনন্ত জড়াও জীবন! ' ( ' অনন্ত ') , ' আমি দাঁড়িয়ে থাকি, / দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিলিয়ে দিই ছায়া/ কিন্তু নরম আশা ঝিকমিক কাঁপে ..... ' (' কিছু নরম আশা ' ) , ' রাত বাড়ে আরছা অন্ধকারের শেষ নেই/ দূরে নদীর বালি কাশফুলের স্তুপ/ একা,বড়ো একা , ভেসে যাচ্ছি শাদার উপর ' ( ' একা ') -র মতন বুকেতে ছলকে ওঠা উচ্চারণগুলি ।
কবির এগারটি প্ল্যাটিনাম কবিতার ভেতর দিয়ে কবি ফুটিয়ে তোলেন তাঁর চিত্রময়তা এক পরমাশ্চর্য অনায়াস চলাচলের মাধ্যমে । সব বোঝা যায় কিন্তু এই বোঝার ভেতর কোথা থেকে ভালোবাসার দ্যোতনা আমাদের গভীরে আদর করে দিয়ে যায় । অথচ কত সহজে বাস্তবতার নকশিকাঁথা তিনি বোনেন :
' সন্ধ্যে হলে কেবলই একটি লন্ঠন, / সন্ধ্যে হলে সামান্য কিছু ভাত, / সন্ধ্যে হলে ছেলে ঘুমোলে/ সন্ধ্যে হলে পাড়া জুড়োলে/ কত দুঃখ, কত দুঃখ সারারাত ! '
( ' সন্ধ্যে হলে ' ) আমরা পুষে ফেলি পরম মমতায় লাইনগুলো । তাই এগারোটি কবিতা যদি তুলে ধরে এই আলোচনায় কোন কথা না বলে আলোচনাটি শেষ করতে পারতাম তবে গভীর আনন্দ পেলাম । কবি মুরলী দে সেই জাতের কবি যাঁর ক্ষেত্রে কোন আলোচনা যথেষ্ট নয় । উৎপল চক্রবর্তীর প্রচ্ছদে নামাঙ্কন কিছুটা দুর্বোধ্য, কবির কবিতার মতো সহজভাবেই করতে পারতেন ।
শব্দব্রাউজ- ২৮ || নীলাঞ্জন কুমার || "আই-যুগ"-এর কবিতা
শব্দব্রাউজ- ২৮ || নীলাঞ্জন কুমার || "আই-যুগ"-এর কবিতা
তেঘরিয়ার বিপাশা আবাসন ২৭।১১।২০২০ সকাল ৮টা । সকালে চা বিস্কুট খেতে খেতে মোবাইলে হরিনাম শুনতে শুনতে ছুটে এলো বহু স্মৃতি । যার ভেতর দিয়ে অন্তত কিছুটা অতীতকে পর্যবেক্ষণ করা গেল ।
শব্দসূত্র - স্মৃতি তুমি বেদনা
অষ্টআশি হাজার স্মৃতির ভেতর থেকে ষেষট্টি হাজার বেদনার স্মৃতি বড় বেশি জ্বাজ্বল্যমান । তাদের নিয়ে ছুটে আসে মনখারাপের সময় । অপমানের শক্ত স্তুপ সরিয়ে দিতে চাইলেও সে অনড় । স্মৃতির ভেতরের বত্রিশ হাজার পাপ চিনে নিই , কিন্তু তা বিবেকের ভেতর
থেকে সরিয়ে দিতে পারি না । ' স্মৃতি তুমি বেদনা ' গাইতে গাইতে মন খারাপের বিকেলের জমা কালো মেঘের থেকে বৃষ্টি নামিয়ে পাপ ধুইয়ে দিতে পারিনা । বুঝিনা সকালের স্মৃতির আর বিকেলের স্মৃতির সঙ্গে এত প্রভেদ কেন? হিসেব মেলাতে গিয়ে হাজার দশেক
ভুল ধরা পড়লেও বাকিটা ভুল হয়ে থেকে যায় । তারা আমার মন খারাপ করায় বারেবারে ।
তুমি- র সঙ্গে হরেক স্মৃতি । ভালো মন্দ । একাধারে বন্ধু আবার শত্রু। অবসরে অবদমন থেকে বেরিয়ে আসে ।
বেদনা সরাতে গিয়ে হাজার বেদনা এসে পড়ে । ষেষট্টি হাজার বেদনা আমায় দাস করে রাখে । অনিচ্ছের সঙ্গে মনে করতে থাকি । অবিরত ।
সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য ২০৯ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক গদ্য
সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
২০৯.
দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর শুরু হল উৎসবের পরবর্তী পর্যায়। সঞ্চালনা নাসের হোসেন। সহায়তা মুরারি সিংহ ।
প্রথমে বাউল গান।গেয়েছিলেন লাল মহম্মদ দিলীপ দাস সুনীতা দাস।
এরপর উপস্থিত কবিদের কবিতাপাঠ। যাঁরা কবিতা পাঠ করেছিলেন তাঁদের কারো নাম প্রভৃতিতে রাখলাম না । এটাকে আমি ইতিহাসের দলিল মনে করছি। কাজেই কারো নাম বাদ দেওয়ার অধিকার আমার নেই। নামগুলি :দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় অমিত কাশ্যপ বিশাল ভদ্র গৌরাঙ্গ মিত্র ঠাকুরদাস চট্টোপাধ্যায় মবিনুল হক রীণা কংসবণিক নীলিমা সাহা গীতা কর্মকার স্বপন দত্ত তমাল মুখোপাধ্যায় ভগবাহাদুর সিং তাপসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সমরেন্দ্র রায় সুপ্রীতি বিশ্বাস এমদাদ-উল-হক নুরুল আমিন বিশ্বাস রাজকুমার শেখ শ্যামল রায় কমলেন্দু ভট্টাচার্য জয় সিংহ মুরারি সিংহ সুশান্ত বিশ্বাস অজয়কুমার সাহা রাজন গঙ্গোপাধ্যায় দেবাশিস সাহা অমিতাভ বিশ্বাস এবাদুল হক তপন দাস মুজিবুর রহমান সৈয়দ খালেদ নৌমান শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় সৌমিত্র রায় এবং জাহিদ হাসান মাহমুদ।
আমার লেখা ' উডল্যান্ড থেকে ফিরে / বাবার জন্য পায়রা-ডাক ' কবিতাটি পাঠ করেছিল নাসের হোসেন।দু-জন আবৃত্তিকার ছিলেন শুক্লা ঠাকুর এবং সন্দীপ সেনগুপ্ত , তাঁরা পাঠ করেছিলেন সন্দীপ বিশ্বাস অমিতাভ মৈত্র এবং নিখিলকুমার সরকারের কবিতা।
শেষের দিকে প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের লৌকিক গান ছিল। শেষে মঞ্চে শক্তিনাথ ঝা-র সঞ্চালনায় শুরু হয় লৌকিক গানের দ্বিতীয় পর্ব। সঞ্চালনা সহায়তায় মুরারি সিংহ।
বাউল গান গেয়েছিলেন : শেফালি দাস আলপনা হাজরা সোমা বারিক খ্যাপাফকির মল্লিকা। মুসলিম বিয়ের গান গেয়েছিলেন : সায়েরা মজেদা ওলিমা। কাপ-এ গেয়েছিলেন : গোপাল মণ্ডল এবং জয়দেব মণ্ডল।
উৎসবে কবিতাপাক্ষিক কিয়ক্স-এর বা বই বিক্রির মূল দায়িত্ব পালন করেছিল সৌমিত্র রায়।
রাতের খাবারও বহরমপুর ক্লাবে। খাবার পর ফিরে যাবার পালা। রান্না যে চমৎকার হয়েছিল এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্দীপ -এর প্রিয় ক্যাটারার - এর দায়িত্বে ছিল সেটা।
আমাদের ক-জনের বাসের টিকিট সময় মতো পৌঁছে দিয়েছিল সমরমাস্টার।
রাত ১১টার বাস ধরেছিলাম আমরা। আর নাসের থেকে গিয়েছিল ওর মায়ের চিকিৎসার প্রয়োজনে। ফিরেছিল পরের দিন ভাগীরথী-তে।
আমরা ভোর চারটেয় নেমে পড়লাম। বাসে থেকে গেল গৌরাঙ্গ শিখা ও রতন। অন্ধকার কেটে গেলে তারা যাবে।
আমরা ট্যাক্সিতে প্রথমে কালীঘাট। আমার বাড়ির কাছে চা-দোকান থেকে চা-পান।তারপর ট্যাক্সিতে বিশাল নমিতা এবং ইন্দ্রাণী তাদের বাড়ি ফিরেছিল।
পরদিন সকালে নাসেরের ফেরা হয়নি। আর জাহিদদের লালবাগের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিল সমরমাস্টার।ওরা বেড়ানোর পর উঠেছিল সমরের বাড়িতে । সমরের রান্না খেয়ে ওরা রাতের ট্রেনে উঠিছিল। নাসের তার পরের দিন সকালের ভাগীরথী ধরেছিল।
সেদিন সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছিলাম জাহিদ এবং কানিজকে। মেনু ছিল : গরম লুচি পনির পরমান্ন এবং মিষ্টান্ন। নাসেরও হাজির হয়েছিল। আর ছিল শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। জাহিদ-কে নিয়ে আমাদের কিছু জরুরি কথাবার্তা হয়েছিল। সেসব নোট করেছিল নাসের ।
কবিতাপাক্ষিক ৩০০ সংখ্যাটি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কিছুই বলা হয়নি। বলব আগামীকাল।
শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০
সবাই মিলে সিনেমা হলে ২১ || সিনেমা ও বিরতি || কান্তিরঞ্জন দে
সবাই মিলে সিনেমা হলে ( ২১)
সিনেমা ও বিরতি
কান্তিরঞ্জন দে
নমস্কার । উৎসবকালীন বিরতির পর আবার ফিরে এলাম । আমরা যখন সবাই মিলে সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাই, তখন ছবির মোটামুটি আধাআধি সময়ে পর্দায় ভেসে ওঠে-------" বিরতি "।এ আমাদের চেনা অভিজ্ঞতা।
এই সুযোগে দর্শকেরা
হাত-পা কোমরের খিল ছাড়িয়ে নেন । কেউ প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারেন । কেউ কেউ চা-কফি-ধূমপান করে নেন । অনেকেই পেট ভরানোর কাজটি করেন । আসলে বিরতি হলো সিনেমা দেখার অবিচ্ছেদ্য অংশ । টানা সিনেমা দেখা সত্যিই মুস্কিলের ব্যাপার । ষাটের দশকের বিখ্যাত হলিউডি ছবি " বেন হুর " কিংবা সত্তর দশকে রাজ কাপুর পরিচালিত " মেরা নাম জোকার " সহ আরও বেশ কিছু সিনেমায় দু তিনবার বিরতি দিতে হতো । কেন না, সেগুলো ছিল দু-ঘন্টার চেয়েও অনেক লম্বা সময় ধরে চলা সিনেমা ।
টিভি ধারাবাহিকের যুগে বিজ্ঞাপনের বিরতি একটি বহু চেনা শব্দ । এই সময়ে ঘরোয়া দর্শক বিশ্রাম নিতে পারেন, অথবা হাতের কাজ এগিয়ে রাখতে পারেন। এমনকি , টিভিতে বহুল জনপ্রিয় সিনেমা দেখানোর সময় , কখনও কখনও বিজ্ঞাপনের বিরতি এতই লম্বা হয় যে , হাতের কাজ সেরে ফেলাও সম্ভব হতে পারে । একটি ধারাবাহিকের ২৫ মিনিটের এপিসোডে বিজ্ঞাপন বিরতি আসে সাধারণত , পাঁচ মিনিট পরপর । খবরের ক্ষেত্রে সেটি ১০/১৫ মিনিট অন্তর । ক্রিকেট হলে এই বিরতি আসবে ওভার শেষের কিংবা উইকেট পতনের ঠিক পরেই । ফুটবলের ক্ষেত্রে বিরতি আবার গোল, ফাউল, অফ-সাইড যে কোনও মুহুর্তেই আসতে পারে । অর্থাৎ , সুযোগ পেলেই হলো । এই বিজ্ঞাপনের বিরতিতে দর্শক পাবেন বিশ্রাম অথবা বিরক্তি । আর প্রযোজক বা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ পাবেন টাকা, অর্থাৎ , মুনাফা।
ইউ টিউব কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিনেমা দেখার সময় বিজ্ঞাপন-বিরতি আসতে পারে , যে কোনও মুহুর্তেই ।
অথচ, সিনেমায় বিরতি ব্যাপারটিকে একেবারেই হাল্কাভাবে দেখা চলে না । কেন না , শুধু সিনেমা দেখা বা দেখানোর ক্ষেত্রেই নয় , সিনেমা বানানোতেও বিরতি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । বিরতি সিনেমার অবিচ্ছেদ্য অংশ ।
আমরা যখন কথা বলি, তখন একদমে কখনোই বলি না । সেটা অসম্ভব ব্যাপার । লেখার সময়েও দাঁড়ি কমা ব্যবহার করি । সেও ওই বিরতি দেবার জন্যেই । বিদ্যাসাগর মশাইয়ের আগের আমল পর্যন্ত লিখিত বাংলায় কোনও বিরাম চিহ্ন বা বিরতি চিহ্ন ছিল না । লিখিত ইংরিজি ভাষার অনুসরণে বাংলা ভাষায় দাঁড়ি-কমা-কোলন-সেমি কোলন-জিজ্ঞাসা কিংবা বিস্ময়বোধক চিহ্ন ব্যবহারের শুরু ।
সিনেমা যেহেতু আর পাঁচটা মনের ভাব প্রকাশের ভাষার মতোই শিল্প মাধ্যমের একটি ভাষা , সুতরাং তাতে যে বিরতির ব্যবহার থাকবে, এ আর আশ্চর্যের কথা কি । লিখিত ভাষায় যেমন দাঁড়ি কমা, সিনেমায় তেমনি কাট, ফেড ইন , ফেড আউট, ডিজলভ্ ইত্যাদি পদ্ধতির ব্যবহার । এগুলো সবই সিনেমার বিরতি চিহ্ন ।
আবার গল্প-উপন্যাসে যেমন পরিচ্ছেদ বা পর্ব বিভাগ আছে , সিনেমায় সেগুলোর ব্যবহার সিন ( Scene ) কিংবা সিকোয়েন্স ( Sequence ) হিসেবে ।
অভিনয়ের সময়ে অভিনেতা- অভিনেত্রীদের সংলাপ বলতে হয় , বিরতি দিয়ে দিয়ে । কণ্ঠস্বরের ওঠানামা কিংবা জোরে আস্তে সংলাপ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে চরিত্রের মনের ভাব ও বক্তব্য প্রকাশ করতে হয় । তেমনি কখনও কখনও নীরব অভিব্যক্তি দিয়েও অভিনয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটানো যায় । বস্তুত , সিনেমা যেহেতু দৃশ্যমাধ্যম , ফলে একটি সার্থক সিনেমা শব্দ, সংলাপ , সংগীতের তুলনায় নৈঃশব্দ্যের ভূমিকা নেহাত কম নয় । এই নৈঃশব্দ্য অনেকসময়ই সিনেমায় বিরাম চিহ্নের দায়িত্ব পালন করে ।
মঞ্চ হোক , অথবা পর্দা , একটি কথা খুব শোনা যায় ------পজ অ্যাক্টিং ( Pause acting ) । অর্থাৎ সংলাপের মধ্যে মধ্যে নীরবতার বুনন । তাতে অভিনয়ের অভিঘাত আরও তীক্ষ্ণ হয় । কমেডি অভিনয়ের ক্ষেত্রে এটি এক মোক্ষম হাতিয়ার । যে অভিনেতার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিরতি অভিনয় যত ভালো , তাঁর কমেডি অ্যাক্টিং তত উচ্চপর্যায়ের । উত্তমকুমার কিংবা রবি ঘোষের অভিনয়শৈলী খুঁটিয়ে দেখলেই পাঠক আমার কথার সত্যতার প্রমাণ পাবেন ।
সিনেমায় দৃশ্যের নাটকীয়তা , বিশেষত , ভয়- সাসপেন্স- উদ্বেগের মুহূর্ত তৈরির ক্ষেত্রে একটি তুমুল শব্দময় দৃশ্যের পরে পরেই একটি নিঃশব্দ মুহূর্ত তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করে । সত্যজিৎ রায় সহ আমাদের দেশের অথবা বিদেশের যে কোনও মহৎ পরিচালকের সিনেমা দেখলেই , পাঠক আমার বক্তব্যের সারমর্ম বুঝতে পারবেন।
দুটি দৃশ্যের মধ্যে ডিজলভ্ , মিক্স কিংবা ফেড ইন, ফেড আউট ব্যবহার করে কাহিনীতে সময়ান্তর অথবা সময়ের ব্যবধান বোঝানো সম্ভব । এও বিরতি চিহ্নেরাই কারসাজি ।
সুতরাং সিনেমায় বিরতি মানেই শুধুই পপকর্ণ খাওয়া আর পেপসি কোলায় গলা ভেজানোর অবসর বোঝায় না । শক্তি সামন্ত থেকে সত্যজিৎ রায়----- যে কোনও সিনেমা নির্মাতাকেই তাই সিনেমা তৈরির সময় বিরতি নামক অস্ত্রের সাহায্য নিতেই হয় ।
তাই বলছিলাম , বিরতি সিনেমারই এক অবিভাজ্য অংশ।
অদৃশ্য বিশ্বাস || মৃত্যুঞ্জয় জানা || অন্যান্য কবিতা
অদৃশ্য বিশ্বাস
মৃত্যুঞ্জয় জানা
ছুরি আর লেবু অন্তরে
জবা ফুল লাল হয়ে ভেসে যায়,
ম্যজিক ৷
সাচ্ছন্দে কূল না পাওয়া আঘাত,
অদৃশ্য৷
নতুন ঘোলা জলে
উজানের পাতা ফাঁদ,শূন্য—
বয়ঃসন্ধি
কালবৈশাখি ভাঙ্গে নিজে ক্ষয়ে৷
ঋতু৷
ঘুম
স্নায়ুর অসাড়তা৷
মোহ,
ইন্দ্র এর ব্যর্থতা
দুশো ছয়টি হাড়ের সমষ্টি
কঙ্কাল৷
বায়ু অদৃশ্য
প্রান আছে ,
অন্ধের চোখে পৃথিবী অনন্যা,
বিশ্বাস
কবি হোমার৷
কিছু বই কিছু কথা২০৬ || নীলাঞ্জন কুমার || দুই মেরুর এক আকাশ || পঙ্কজ মন্ডল ও রনজিৎ হালদার
কিছু বই কিছু কথা২০৬ । নীলাঞ্জন কুমার
দুই মেরুর এক আকাশ । পঙ্কজ মন্ডল ও রনজিৎ হালদার । কুড়ি টাকা ।
এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত যৌথ কাব্যগ্রন্থের একটা চল ছিল বাংলা সাহিত্যে । বর্তমানে তা নিশ্চিহ্ন । কারণ কবিদের ভেতরে ইনডিভিজুয়ালিটির আধিক্য । একটু কম বয়সে বহু যৌথ কাব্যগ্রন্থ পড়েছিলাম আর তাতে সমসাময়িক একাধিক কবির কবিতার তুলনামূলক চিন্তাভাবনা করা যেত , যেমন ২০০৯সালে দুই কবি পঙ্কজ মন্ডল ও রণজিৎ হালদার -এর যৌথ কাব্যগ্রন্থ
' দুই মেরুর এক আকাশ ' পুণঃপাঠ করতে গিয়ে
করছি ।
এই ক্ষীণতনু কাব্যপুস্তিকাটিতে দুই কবির বিপরীতমুখী চিন্তার আভাস জাগায় । কবি পঙ্কজ মন্ডলের কবিতার দিকটির নাম ' পাথর কাঁপানো ডাক ' । শিরোনাম পড়ে মনে হতেই পারে, বেশ কিছু উচ্চগ্রামের কবিতা এখানে স্থান পেয়েছে । কিন্তু তা কখনোই নয়, স্বভাব নম্র এই কবি কি কোনদিন উচ্চ গ্রামের কিছু লিখতে পারেন? তাই তাঁর স্বভাবসুলভ পংক্তি পাই: ' অনাথের হাতে যে ছেঁড়া আঁচল পড়ে থাকে মৃত/ তার ফাঁসে মমি বিদ্ধ, ছাই ওড়ে দগ্ধ দেবতার । ( ' ভূমিপুত্র ') , 'পাখির মতো তীব্র মায়ায় ভরে থাকুক চিত্র গীতি / জলের বৃত্তে অপেক্ষা থাক জেলের জালের শেষের ছবি । '(জলের লিখন ) কত চিত্রময়তা ঘেরা এই পংক্তি মনের মধ্যে রিনরিন করে । কবির বর্তমান কবিতার সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে দেখি তাঁর বর্তমানের কবিতার গঠন প্রাথমিকভাবে এখান থেকে শুরু হচ্ছে । তবে এখন তা পরিবর্তন করার সময় এসে
গিয়েছে । বড় বিষয় এই তিনি পংক্তির ভেতর দিয়ে বাধ্য করেন তাঁর কবিতায় তন্নিষ্ঠ হতে গভীর মায়াজাল সৃষ্টির মাধ্যমে ।
কবি রণজিৎ হালদারের কবিতার দিকটির নাম 'জন্ম ও মৃত্যুর উর্দ্ধে ', যেখানে পঙ্কজের কবিতার সঙ্গে তুলনামূলক চিন্তা করলে তাঁকে বেশ খানিকটা ম্লান বলতেই হয় শব্দে ও ব্যন্ঞ্জনায় । ' ...তোমার একাকীত্বের' আকাশেআমি/ ক্রমশ দেবতা হতে হতে ভীষণ সুদূর হয়ে যাবো। ' ( আমার স্বর্গ) ,'আগামীকাল/ খবরের কাগজে হয়তোবা দেখতে পাবো/ পেতলের ঘুঘু
প্রসব করেছে সোনার ডিম । ' ( পেতলের ঘুঘু ও সোনার ডিম ' ) , ' এটা আমার কবিতা নয়/ এ আমার অন্ধকারে সূর্যমুক্তির লালবাজারের চাবি '( ' লালবাজারের চাবি ') কে চেষ্টা বলবো তার বেশি নয় । ভালো লাগলো অঙ্কনহীন প্রচ্ছদ । তবে জমির কালার হাল্কা হলে আরো জমতো ।
শব্দব্রাউজ- ২৭ || নীলাঞ্জন কুমার ||"আই-যুগ"-এর কবিতা
শব্দব্রাউজ- ২৭ । নীলাঞ্জন কুমার
তেঘরিয়ার বিপাশা আবাসন ২৬। ১১।২০২০ সকাল ৮টা ৪৫মিনিট । আজ প্রাত্যহিকতার ভেতর সামান্য বৈচিত্র্য । আজ হরতাল । রাস্তায় গাড়িঘোড়া অনেক কম । স্তব্ধতার ভেতর থেকে আসে কবিতার শব্দসূত্র । তখন আনন্দ বোধ হয় হাজার গুণ ।
শব্দসূত্র : এইতো আমার অঙ্গভূষণ
এইতো আমাদের জীবন, অস্থির ও ভাবনাবহুল । কখনো ভেতরে কবিতা, কখনো হরতালের রাস্তাঘাটের ভাবনা । হরতালের কথা এলেই ছুটে আসে রাজনীতি , তারপর দুর্নীতি, তারপর কুৎসার বক্তৃতা । সুতরাং এইতো আমাদের জীবন মেঘ -রোদের । ঘোড়েল মানুষের থেকে সরে থাকার ভুল সিদ্ধান্ত অভিজ্ঞতাচ্যুত করে । যত অভিজ্ঞতা তত সতর্ক । আমায় কে যেন টেনে রাখে ।
' আমার জীবন পাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী ' কে দান করবে?
জানি না । তবে ভোটের প্রতিশ্রুতির বাহার কিন্তু মনে তা ধিন ধিন করে নাচবে তা অবশ্যম্ভাবী ।
তাহলে আসুন সব নির্বুদ্ধিতা সব ধাঁধালো ইঙ্গিত আমরা অঙ্গভূষণ করি । আসুন হরতাল করি । ফাঁকা রাস্তায় ফুটবল খেলি ।
সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য ২০৮ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক গদ্য
সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
২০৮.
তিনটি সাদা পায়রা লোকনাথ মন্দিরের দিকে উড়ে গেল , আমরা প্রবেশ করলাম ঋত্বিকসদনের ভেতরে।পায়রাদের মুক্তি যেমন আকাশে , আমাদের মুক্তি কবিতাউৎসবে।
ঋত্বিকসদনের মঞ্চে যাঁরা ছিলেন তাঁদের নামগুলি এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক।
সভাপতি : শক্তিনাথ ঝা । বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি : জাহিদ হাসান মাহমুদ। কবিতাপাক্ষিক ৩০০ অনুষ্ঠানের আয়োজক : সন্দীপ বিশ্বাস। তাছাড়া অমিতাভ মৈত্র নাসের হোসেন মুরারি সিংহ গৌরাঙ্গ মিত্র এবং আমি। সঞ্চালক : ঠাকুরদাস চট্টোপাধ্যায়।
মঞ্চের সকলেই দর্শকমণ্ডলীর দিকে পুষ্পবৃষ্টি করলেন। সকালবেলায় ফুলগুলি কিনে এনেছিল স্বপন দত্ত।
শক্তিনাথ ঝা -এর ইচ্ছে অনুসারে মঞ্চে প্রথম গানটি গেয়েছিল এক সদ্যতরুণী ,মল্লিকা আকার। গানটি হল : খাঁচার ভিতর অচিন পাখি । এই পাখির সঙ্গে পায়রা ওড়ানোর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা খুঁজে দ্যাখা যেতে পারে।
কবিতাপাক্ষিক ৩০০ - র প্রথম কপিটি কিনলেন সন্দীপ বিশ্বাস, ১০০ টাকার বিনিময়ে। সন্দীপ বিশ্বাসের হাতে কপিটি তুলে দিয়েছিল মুরারি সিংহ।
উৎসব কমিটির পক্ষে বক্তব্য বলেছিলেন সন্দীপ বিশ্বাস। কবিতাপক্ষিকের পক্ষ আমি। বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য বলেছিলেন বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি জাহিদ হাসান মাহমুদ। তিনি রফিকউল্লাহ্ খান সম্পাদিত ' বাংলাদেশের তিন দশকের কবিতা ' সংকলন-গ্রন্থটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন।
সৈয়দ খালেদ নৌমান সম্পাদিত ' অর্কেস্ট্রা '-র ১৪ বর্ষ ১ম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল কবিতাপাক্ষিক ৩০০ প্রকাশকে উপলক্ষ করে ওই সংখ্যাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেছিলেন শক্তিনাথ ঝা।
এরপর কবিতাপাক্ষিক ৩০০ পুরস্কার ও সম্মানপ্রদান।সনাতন দে স্মৃতি পুরস্কার পেলেন নারায়ণ ঘোষ।তাঁর হাতে স্মারক তুলে দিয়েছিলেন শ্যামল রায়। তুষার চট্টোপাধ্যায় স্মারক সম্মান প্রাপক অজিতেশ ভট্টাচার্য -র অনুপস্থিতিতে স্মারক গ্রহণ করেন অশেষ দাস। তুলে দেন স্বপন দত্ত। কমলেশ চক্রবর্তী স্মারক সম্মান গ্রহণ করেন অশেষ দাস, সন্দীপ বিশ্বাসের হাত থেকে।
৬০-এর প্রয়াত কবিদের নামাঙ্কিত কবিতাপাক্ষিক সম্মান পেয়েছিলেন :
অনাময় দত্ত নামাঙ্কিত সম্মান : ইন্দ্রাণী দত্তপান্না , অমিতাভ মৈত্র-র হাত থেকে।
ফাল্গুনী রায় নামাঙ্কিত : জপমালা ঘোষরায় , দিলেন সৈয়দ খালেদ নৌমান।
মঞ্জুষ দাশগুপ্ত নামাঙ্কিত : নমিতা চৌধুরী , দিলেন দীপংকর ঘোষ।
মানিক চক্রবর্তী নামাঙ্কিত : রতন দাস , দিলেন কানিজ ফাতেমা।
সুব্রত চক্রবর্তী নামাঙ্কিত : শৌভিক দে সরকার , দিলেন শুভ্রা সাউ।
এছাড়াও ছিল দুটি পত্রিকার সম্মান প্রাপ্তি।
কৃষ্ণগোপাল মল্লিক নামাঙ্কিত : উৎপলকুমার গুপ্ত 'সময় ' , তুলে দিয়েছিলাম আমি।
অশোক চট্টোপাধ্যায় নামাঙ্কিত : গোপাল দাশ সম্পাদিত ' এখন নিদাঘ ' , রুদ্র কিংশুকের হাত থেকে সম্মান গ্রহণ করেছিলেন দীপ সাউ।
সম্মান প্রাপকেরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
গান শুনিয়েছিল জপমালা ঘোষরায় এবং শুভ্রা সাউ।তারপর সম্মান প্রাপক কবিদের কবিতাপাঠ।
এরপর মধ্যাহ্নভোজন।
আগামীকাল পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ।
শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২০
কিছু বই কিছু কথা - ২০৫ || নীলাঞ্জন কুমার শিরোনাম নেই শিরোপাও || সুবোধ সেনগুপ্ত || সাংস্কৃতিক খবর ত্রিশ টাকা ।
কিছু বই কিছু কথা - ২০৫ || নীলাঞ্জন কুমার
শিরোনাম নেই শিরোপাও || সুবোধ সেনগুপ্ত || সাংস্কৃতিক খবর ত্রিশ টাকা ।
এমন কিছু কবিতার বই প্রকাশ করা হয় যার সব কবিতা মাথার ওপর দিয়ে যায় । অপরিপক্ক ছন্দের যন্ত্রণা বিঁধে থাকে বইটির শরীরে। যা মনে এলো তাই লিখবো এই চিন্তাভাবনা নিয়ে গড়ে ওঠা বই পড়া যে কি কষ্টের তা কবিতাপ্রেমী বেশ বোঝেন।তবু অভ্যাসবশতঃ
পাঠক পড়েন ' পাইলে পাইতে পারো অমূল্য রতন 'চিন্তা ভাবনার কারণে । অবশ্য সুবোধ সেনগুপ্ত তাঁর কাব্য প্রয়াস ' শিরোনাম নেই শিরোপাও ' তে নিজেই যখন অক্লেশে বলেন : ' আমি যা লিখি তা কেউ বুঝতে পারেন না । এলেবেলে লেখা । অপরিপক্ক ছন্দ ও তার ব্যন্ঞ্জনা । কারো কারো মতে একটু ধ্যান দিলে কবিতা হয়ে যেতে পারতো । যাঁরা বলেন তাঁরা কিন্তু সকলেই কবিতার আসরে নামজাদা । ' তখন এই সত্যকথনকে হাত তুলে সমর্থন জানাতেই হয় । কারণ ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত উক্ত গ্রন্থটির ১৫২ টি কবিতার মাথামুণ্ডু না বুঝলেও তার ভেতর বেজে ওঠার মতো ব্যন্ঞ্জনাটুকু বিন্দুমাত্র নেই । ' এতেই কি পাড়ি দেবে অন্যজন কোথায় শ্রবণ/ নীলশূন্যে চেয়ে দেখে নীলের মমতা বন্দি সে ।' ( ' নীলের মমতা বন্দি '),' কেউ এসে গেছে কি লামাকে/ খবর খুঁড়ে তুলে? '( খুঁড়ে) , ' পাঁচ তারা জ্বলে ওঠে/ অহ্ন ঘেঁটে নিজস্ব ধারায়? ' ( ' ষাট বৎসর পূর্তি উৎসব ')কবিতা পংক্তি পড়লে মাথা আগডুম বাগডুম করে ,তবে পুরো বইটি পড়ার পর পাঠকের কি ঘটতে পারে তা ভেবে আতঙ্কিত হই ।
সত্তর দশকের একশ্রেণীর কবি বাংলা সাহিত্যে দুর্বোধ্য কবিতার যে চল করেছিল, বর্তমানে তা প্রায় নিশ্চিহ্ন । কারণ মাথার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া কবিতা মানুষ কিছুতেই পছন্দ করেন না তা আমরা দুর্বোধ্য যুগের মাধ্যমে শিক্ষালাভ করেছি । আবার যাঁরা কবিতা
শীর্ষশিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেন এই ' যা খুশি তাই 'কবিতা তাঁদের খুশি করে না । আর ' আমার কবিতা খুব খারাপ ' বলে এই কবির মতো যারা প্রকাশ্যে আহ্লাদ করে নিজেকে নিয়ে, তাদের কবিতা প্রকাশক বের করতেই পারেন কিন্তু তা পোকায় কাটবে বলা বাহুল্য ।তপন আদিত্য- র প্রচ্ছদটি সামান্য হলেও অন্য ধরনের ।
তিনটি কবিতা || ফটিক চৌধুরী
তিনটি কবিতা
ফটিক চৌধুরী
ভালো-বাসার বারান্দাা
আজ ভালো-বাসার বারান্দাটা খুলে দেখি
চারিদিক শুনশান। নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে
চারিদিকে।দূরে দেখা যায় ধূসর গাছপালা
কতো কিছু বলা হয়েছে এই বারান্দা থেকে।
মানবিক, মানবচেতনার রূপ, আরও কতো...
বলে গেছো লাঞ্ছিত মেয়েদের কথা, তাই
মাঝে মাঝে খুলি এই ভালো-বাসার বারান্দা
স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে...
একটা বছর কীভাবে যে পেরিয়ে এলাম !
তুমি বলে গেছো 'সই' পরিবারের কথা
পরিবারের প্রত্যেকের কথা এক এক করে,
তা এই ভালো-বাসার বারান্দা থেকেই।
তুমি তো এসব নিয়েই বাঁচতে চেয়েছো,
চেয়েছিলে, তাই মাঝে মাঝে খুলি,
ভালো-বাসার বারান্দা
যেখানে নির্মেদ স্মৃতি ভর করে থাকে।
(** ৭ নভেম্বর নবনীতা দেবসেন এর প্রথম প্রয়াণ দিবস)
নবান্ন
বর্ষায় দেখেছ ধানশিশু
শরতে তার যৌবনের দোলা
হিল্লোলে ভরে যায় সবুজের সজীবতা।
ধানের শিষে দেখ কৃষকের হাসিমুখ
দুধে ভরে ওঠে প্রতিটি ধানের গর্ভ।
আদর মাখামাখি হয়ে সোনালি রোদে
শুয়ে থাকে সোনালি ধান, হেমন্তে
ভরে ওঠে কৃষকের নিকানো খামার
ধান্যসুখে এবার নবান্নের সুবাস।
মেঘ পর্ব
দিনগুলোকে এত এলোমেলো করে রেখেছ
তাকে কিভাবে সাজাই ?
কোন দশক দিয়ে সাজাব ?
কখনও যুক্তির দশক কখনও মুক্তির
অথচ মুক্তি তো হলই না
সেই খাঁচায় বন্দি রয়ে গেলে !
যখন ভাবছ এবার বুঝি মুক্তি এলো
আকাশ ডাকছে, বাতাস বইছে দখিনা
মেঘেরা উড়ে যাচ্ছে, আহা আনন্দ....
তাদেরকে কে আর আটকায় !
জীবনের পর্বকে ভাগ করতে করতে তুমি
যেতে চাও মেঘেদের রাজত্বে ? তাহলে
এলোমেলো দিনগুলো মেঘপর্বে সাজাও।
শব্দব্রাউজ- ২৭ || নীলাঞ্জন কুমার || "আই-যুগ"-এর কবিতা
শব্দব্রাউজ- ২৭ । নীলাঞ্জন কুমার
তেঘরিয়ার বিপাশা আবাসন ২৬। ১১।২০২০ সকাল ৮টা ৪৫মিনিট । আজ প্রাত্যহিকতার ভেতর সামান্য বৈচিত্র্য । আজ হরতাল । রাস্তায় গাড়িঘোড়া অনেক কম । স্তব্ধতার ভেতর থেকে আসে কবিতার শব্দসূত্র । তখন আনন্দ বোধ হয় হাজার গুণ ।
শব্দসূত্র : এইতো আমার অঙ্গভূষণ
এইতো আমাদের জীবন, অস্থির ও ভাবনাবহুল । কখনো ভেতরে কবিতা, কখনো হরতালের রাস্তাঘাটের ভাবনা । হরতালের কথা এলেই ছুটে আসে রাজনীতি , তারপর দুর্নীতি, তারপর কুৎসার বক্তৃতা । সুতরাং এইতো আমাদের জীবন মেঘ -রোদের । ঘোড়েল মানুষের থেকে সরে থাকার ভুল সিদ্ধান্ত অভিজ্ঞতাচ্যুত করে । যত অভিজ্ঞতা তত সতর্ক । আমায় কে যেন টেনে রাখে ।
' আমার জীবন পাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী ' কে দান করবে?
জানি না । তবে ভোটের প্রতিশ্রুতির বাহার কিন্তু মনে তা ধিন ধিন করে নাচবে তা অবশ্যম্ভাবী ।
তাহলে আসুন সব নির্বুদ্ধিতা সব ধাঁধালো ইঙ্গিত আমরা অঙ্গভূষণ করি । আসুন হরতাল করি । ফাঁকা রাস্তায় ফুটবল খেলি ।
একজন বুড়ো মানুষ-৪ || নিরুপমা বরগোহাঞি || অনুবাদ~বাসুদেব দাস,
একজন বুড়ো মানুষ
নিরুপমা বরগোহাঞি
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ~ বাসুদেব দাস,
(৪)
এতদিন যে মানুষ চাকরি জীবনে তার উপরওয়ালা হয়ে তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে এসেছে,তারপর
প্রতি স্নেহ ভালোবাসা জন্মানোয় তাকে নিজের বাড়িতে সাদর আমন্ত্রণ করে এনেছে ,আজ সেই
মানুষটির মেয়ের পাণিপ্রার্থী হয়ে খোলাখুলিভাবে তাকে আবেদন জানাতে হওয়ায় বিজয় যেন লজ্জায়
মরে যাবে,কিন্তু তার বিয়েতে যখন দুর্ভাগ্যক্রমে তাকে নিজেই নিজের অভিভাবকের ভূমিকা পালন
করতে হচ্ছে ,এর বাইরে তার আর কোনো উপায় ছিল না।
সেদিন এসব বলেই কিন্তু বিজয় দ্রুত আরও একটা কথা তার সঙ্গে যোগ করেছিল,কারণ সে
বুঝতে পেরেছিল তার এই উত্তর ইলার পিতাকে কিছুটা অপ্রস্তুত করে ফেলেছে ;কারণ ইলার পিতার
বক্তব্য সে অমোঘ যুক্তিতে খণ্ডন করার পরে তাঁর মনে তৎক্ষণাৎ আর কোনো কথা না আসাটাই
স্বাভাবিক। তাই বিজয় পুনরায় বলল,এবার তার কণ্ঠস্বর আবেগে,সততা এবং নিষ্ঠার ভারে ভারী হয়ে
প্রকাশ পেল—‘আপনি এখন কী বলবেন জানি না,আপনারা সম্মতি দেবেন কিনা জানি না,কিন্তু একটা
প্রতিশ্রুতি আমি এখনই আপনাদের দিয়ে রাখছি--ইলাকে আমি শ্বশুর বাড়ির স্নেহ ভালোবাসা থেকে
বঞ্চিত রাখতে বাধ্য হলেও ,তার সেই দুঃখ ভুলিয়ে দেবার জন্য আমি আশ্রাণ চেষ্টা করে যাব। আমার
পরিবারের স্নেহ ভালোবাসা না পেলেও একটা ছোট্ট সুখী গৃহকোণ তাকে আমি এভাবে তৈরি করে দেব যে
ইলা কখনও শ্বশুরবাড়ির স্নেহ ভালোবাসা থেকে নিজেকে বঞ্চিত ভাবার অবকাশই পাবে না।’
আজ বিজয় ভরালীর সেদিনের কথা মনে পড়লে তার লজ্জা হয়,কত আবেগ ঢেলেই না সে
কথাগুলো বলেছিল,হয়তো দৃশ্যটা বড় নাটকীয় হয়ে পড়েছিল কিন্তু সত্যিই তো আর সেদিন নাটক করার
জন্য কথাগুলো বলেনি,প্রাণের সমস্ত নিষ্ঠা ঢেলে দিয়ে সে কথাগুলি বলেছিল। আজ সেসব ভেবে ভেবে
বিজয় ভরালীর ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে—একদিন যা এত সত্য ছিল আজ যে
কীভাবে সেই সমস্ত কিছু এত অবাস্তব স্মতিতে রূপান্তরিত হতে পারে।
তার কথা শুনে রোহিণী দাসের মুখে হাসির মৃদু রেখা ফুটে উঠেছিল। তিনি খুব স্নেহের চোখে
বিজয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়েছিলেন ,অন্তত তখন তার সেরকমই মনে হয়েছিল। সে মাথা নিচু করে
ছিল বলে রোহিণী দাসের মুখটা দেখতে পাচ্ছিল না। কিন্তু সে সমস্ত অনুভূতি দিয়ে যেন অনুভব করছিল
একজোড়া কোমল চোখের গভীর স্লেহপূর্ণ দৃষ্টির প্রলেপ তার উপর রয়েছে। তারপর সে শুনতে পেল
ইলার বাবা বলছে –‘আমি আর কোনো রকম আপত্তি করব না বিজয়। তোমরা দুজনেই সুখী
হও,তোমাদের জীবন মঙ্গলময় হোক,তোমাদের জীবন সৎ হোক । নিষ্ঠা এবং ঐকান্তিকতার সঙ্গে
তোমরা দুজন যেন সবসময় জীবন পথে চলতে পার আমি সেই আশীর্বাদই করছি। আমি মনে মনে ইলার
জন্য তোমার মতো ছেলের খোঁজই করছিলাম । আমার জামাইয়ের টাকা পয়সা থাকুক বা না
থাকুক,চরিত্র বল যেন থাকে,সৎ সাহস,সাধুতা যেন থাকে এটাই আমার প্রতিদিনের প্রার্থনা ছিল।
আজ ঈশ্বর আমার সেই প্রার্থনা সফল করেছে। অবশ্য জীবনে চিরকাল একটা দুঃখ থেকে
যাবে—তোমার মাতা পিতা ,তোমাদের বাড়ির সবাইকে আঘাত দিয়ে একটা নতুন সংসার গড়ে তুলতে
হল।এটা একটা বিরাট দুঃখ বিজয় । আমি জান তোমার মনের ভেতরে কী হচ্ছে। কত কষ্টে,কত আশায়
মা বাবা ছেলেকে বড় করে তোলে তা নিজেও পিতা হয়ে তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। তাদের তুমি
মর্মান্তিক আঘাত দিয়েছ বিজয়। আমি আর কী বলব--আমি কেবল এটাই কামনা করি তুমি যদি জীবনে
সত্যিই মানুষ হয়ে উঠ,বড় হও,তোমার গর্বে গর্বিত হয়ে তারা একদিন কিছুটা হলেও মানসিক আঘাত
মুছে ফেলতে সক্ষম হবে।’
ইলার বাবা আরও অনেক কিছু বলেছিল।বিজয় কেবল মাথা নিচু করে শুনে গিয়েছিল এবং বিভিন্ন
আবেগের চাপে তার অন্তরে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছিল।
তারপর একদিন ইলাকে বিয়ে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল।বাড়ি মানে ভাড়া বাড়ি।তিনটি
ঘর,রান্নাঘর আলাদা। খুব একটা খারাপ নয় যদিও খুব ভালোও বলা যাবে না। বাড়িটা নামেই পাকা,এত
পুরোনো যে জায়গায় জায়গায় নিচের ইট বেরিয়ে পড়েছে। একটু স্যাঁতসেতে, আলো নেই,অবশ্য সেই সময়
শুয়াহাটি শহরের খুব কম জায়গাতেই বিদ্যুতের আলো ছিল। এই তিনটে রুম ছাড়াও একটা বাথরুম
ছিল,কিন্তু সেটা ছিল কিছুটা দূরে কুয়োর পাশে। বাথরুমটা ও আধা ভাঙ্গা পাকার,দেওয়ালটা বেড়া দিয়ে
তৈরি। অবস্থা দেখে মনে হয় সেই বাঁশের বেড়ায় কোনোদিনই মাটি-গোবর বা চুণ দিয়ে লেপা হয় নি।
কুয়োটা কিন্তু ভালোই বলতে হবে,পাকা কুয়ো,জলও ভালো।
অনেক চেষ্টা চরিত্র করে বিজয় এই বাড়িটা ঠিক করেছিল। নতুন কনেকে আদর করে বরণ
করে নেবার সম্পূর্ণ দায়িত্ব বিজয়ের--তাই তার ভাবনার আর শেষ ছিল না। তাকে সাহায্য করার জন্য
ছিল ফাইফরমাশ খাটার জন্য থাকা বাদল। সেই বাদলকে সঙ্গে নিয়েই বাড়িটা যতটা সম্ভব সাজিয়ে
গুছিয়ে নতুন কনের উপযুক্ত করে তোলার চেষ্টা করেছিল। সাজানো মানে—তার পড়ার অজন্র বইগুলো
এখানে সেখানে পড়ে থাকত--টেবিলে,বাক্সের উপরে,বিছানায় এমনকি বসার চেয়ারে ও। এখন সমস্ত
বইগুলোকে একত্র করে টেবিলের উপরে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল। বাদলকে বলল ঘরটাকে ভালোভাবে
ধুয়ে মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে । এতদিন বাদল কীভাবে বাড়িঘর পরিষ্কার করত সেই জানে
কিন্তু বিজয়ের বিয়ের সময় ঘরের ভেতর থেকে যত আবর্জনা বের হল তা দিয়ে রাস্তার পাশে রাখা
প্রকাণ্ড আকারের ডাস্টবিনটার প্রায় অর্ধেকটা ভরে গেল।
বিজয় এবং বাদল এভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা ঘরে এসে উঠল ইলা । সঙ্গে নিয়ে এল একটা ঘর
ভরে যাবার মতো যৌতুকের জিনিসপত্র-খাট,পালঙ,আলনা চেয়ার,টেবিল,সোফা,আলমারি,মিটসেফ--
সবকিছু। একটা সংসার পাততে গেলে যে সমস্ত জিনিস পত্রের প্রয়োজন,ইলার সঙ্গে তার মা বাবা তার
প্রায় সমস্ত কিছুই দিয়ে দিয়েছিল।
তারপর বিয়ের তিন চারদিন কেটে যাবার পরেই ইল ঘর সাজানোয় উঠে পড়ে লেগে গেল। শোবার
ঘরে ইলা পালংটা, ড্রেসিং আয়না,আলনা এবং বেতের চেয়ারটা রাখল। এই চেয়ারটা ছিল বিজয়ের নিজের
। তাছাড়া বিজয় ব্যবহার করা খাটটাও ইলা নতুন বিছানার চাদর,বেড কভার দিয়ে ঢেকে পালঙ থেকে
একটু দূরে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল। বিজয়ের সময়ে বিছানা চাদর দিয়েই তোষকটা ঢাকা থাকত। খুব
বেশি নোঙরা হলে বিজয় কখনও কখনও বাদলকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে নিত। বালিশের ওয়ারগুলোর
অবস্থাও ছিল সেরকমই। এখন তার শোবার ঘরটিকে সম্পূর্ণ নতুন রূপ লাভ করতে দেখে সে চমৎ্কৃত
হল।
‘বাঃ’ --বিজয় চারপাশটা দেখতে দেখতে খুশি হয়ে বলল –‘বাড়ির চেহারা দেখছি একেবারে বদলে
দিয়েছ ইলা । কী বাড়ি আমার কী হয়ে গেল?’
প্রশংসায় ইলা খুশি হয়েছিল। সে তৃপ্তির হাসি নিয়ে উত্তর দিয়েছিল –‘গৃহিনী আসার পরে তো
ঘরের আগের দুর্দশা থাকতে পারে না?’শোবার ঘরের সংলগ্ন দুপাশে দুটো ঘর। পথের পাশের ঘরটিকে
সোফা সেট দিয়ে সাজিয়ে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করে পাশের ঘরটিকে লাইব্রেরি তৈরি করল।বিজয়
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল কীভাবে তার অযত্ন রক্ষিত বইগুলি ইলা এক এক করে ধুলো ঝেড়ে টেবিলের
ওপর সাজিয়ে রাখল । সেই টেবিলটাও তারই ছিল। এতদিন পর্যন্ত তাতে বিজয়ের সমস্ত কাজই
চলছিল--সেখানেই ভাত খাওয়া বা চা খাওয়া চলত। বাদল টেবিলটির ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বইগুলো
পরম অবহেলায় একপাশে ঠেলে দিয়ে সেখানেই ভাতের থাল এবং চায়ের কাপ-প্লেটের জায়গা করে নিত।
চিঠি-পত্র ইত্যাদি যে কোনো লেখালিখির কাজও বিজয় টেবিলের ওপরেই করে,দাড়ি কাটার সাজ
সরঞ্জাম ও সেখানে রেখে তাতে দাড়ি কাটে। বন্ধুবান্ধব কেউ এলে এ টেবিলেই চা,তামোল দেওয়া হয়।
ইলা যখন টেবিলটার দায়িত্ব নিল তখন সেটা বিচিত্র দাগে পরিপূর্ণ—কালির দাগ,কুপি জ্বালিয়ে
বাদলের নোঙরা পরিষ্কীর করার অভ্যাস না থাকায় কেরাসিনের দাগ এবং মোমবাতির দাগ চুণের দাগ
টেবিলটাকে বিচিত্র রূপ দান করেছিল। ইলা এখন ঘষে ঘষে সেই দাগগুলি পরিষ্কার করল,তারপর
টেবিলে সুন্দর একটা টেবিলক্লথ পেতে দিয়ে বিজয়ের লাইব্রেরি রুম তৈরি করে দিল। টেবিলটা তার
জড়-জীবনে সেদিনই প্রথম আচ্ছাদন পেল।
ইলা বাবার কাছ থেকে ছোট একটা আলমারিও পেয়েছিল। ইলার শৈশব থেকে অনেক পুতুল
জমেছিল—সবগুলোই সেই আলমারিতে রাখা ছিল। মা-বাবা মেয়ের সঙ্গে তার শৈশবের খেলার সাথীদের
সঙ্গে আলমারিটাও পাঠিয়ে দিয়েছিল। ইলা কিন্তু বিজয়ের ঘরে পুতুলগুলি আলমারি থেকে বের করে
খালি বাক্স একটাতে ভরে রাখল। আর আলমারিটা বিজয়ের বইপত্র দিয়ে সাজিয়ে রাখল। সেইঘরে এখন
একটা আলমারি,একটি টেবিল,একটি কাঠের চেয়ার এবং একটি বেতের চেয়ার –এইসবই ইলা এমন
পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখল যে বিজয় মন্তব্য করল –‘ইলা,তুমি এত সুন্দর করে সাজিয়ে তোমার
নিজেরই যে ক্ষতি করলে,সেই কথাটা ভেবে দেখেছেন কি?’
‘তার মানে?’ইলা সত্যিই অবাক হল।
‘তার মানে আর কি? পুরুষ মানুষ বই পত্র পড়লে নাকি মেয়েরা খুব রাগ করে --অর্থাৎ তারা
চায় পুরুষ মানুষদের সম্পূর্ণ আনুগত্য কেবল তাদের প্রতিই থাকবে,অন্য কিছুর প্রতি আকর্ষণ
থাকাটা তারা মোটেই পছন্দ করে না। তা সে বইয়ের মতো অচেতন পদার্থ হলেও । তুমিও তো সেই
মেয়েদেরই একজন-এত সুন্দরভাবে ,আরামপ্রদ করে আমার পড়ার রুম সাজিয়ে দিয়েছ, আগে থেকেই
আমি বই পড়তে ভালোবাসি,এখন তো আর লাইব্রেরি ঘর ছেড়ে বাইরে বেরুতে ইচ্ছাই করবে না’
‘ও,এই ব্যপার। আমি আরও ভাবছিলাম না জানি কী।’ ইলা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল-এর
জন্য আমি খুব একটা ভয় করি না--আমি খুব একটা বিদ্বান নই ,শিক্ষা-দীক্ষা তো জানই--কিন্তু
পড়াশোনার প্রতি আমার ভীষণ আগ্রহ রয়েছে, আমি পড়াশোন করতে ভীষণ ভালোবাসি । এখন আপনি
যখন পড়াশোনা করবেন আমিও তখন একটা বই নিয়ে আপনার পাশে বসে থাকব।তবে আপনাকে কিন্তু
বিরক্ত করব,কিছু বুঝতে না পারলে জিজ্ঞেস করব,বুঝতে পারলে আপনার কাছে আমার বিদ্যা জাহির
করার জন্য আপনাকেই বোঝাতে শুরু করব। কোনো বই পড়ে ভালো লাগলে আপনাকে সেই বিষয়ে বর্ণনা
দিতে শুরু করব,খারাপ মনে হলে লেখককে সমালোচনা করে আপনার সামনে একটা দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে
বসব। বই পড়ে হাসি পেলে আপনাকেও সেই রসের ভাগ দিয়ে আমার সঙ্গে আপনাকেও হাসাব,বই পড়ে
দুঃখ পেলে হাউমাউ করে কাঁদব-
‘অর্থাৎ-, বিজয় ইলার কথার মাঝখানেই বলে উঠেছিল -সেই পড়ার ঘরটা আমার না হয়ে
তোমার হবে এবং তখন তোমার থিয়োরিটাকেই আমাকে উল্টিয়ে বলতে হবে যে বউ বই পড়লে স্বামীরা
খুব খারাপ পায় –’
হো হো করে ইলা হেসে উঠেছিল।
সেই হাসির ধ্বনি যেন আজও দূর অতীত থেকে ভেসে এসে বিজয়ের বুকে ধাক্কা মারল। ইলার
সেই মন ভুলোনো হাসি। মেয়েটি এত প্রাণখুলে হাসতে পারত। মুখে এমনিতেই সব সময় হাসি লেগেই
থাকত,মনে হত যেন ইলার মুখ হাসির খোরাকের জন্য অপেক্ষা করে থাকত। তারপর সুযোগ পেলেই
হাসির উচ্ছ্বাসে মেতে উঠত। মাঝেমধ্যে বিজয় তার জন্য বিরক্ত ও হত। --এত হাসলে আশেপাশের
মানুষ কী ভাববে? ইলা সঙ্গে সঙ্গে অনুতপ্ত হয়ে পড়ত--ছিঃ,এই বাজে অভ্যাসটা আর কোনোমতেই
ছাড়তে পারলাম না। মা আমাকে সংশোধন করার কত চেষ্টা করেছে আমি যে ছেলেদের মধ্যে বড় হয়ে
অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েসুলভ নম্রতা ভদ্রতা ভুলে যাই সে কথা মা আমাকে কতদিন বলেছে --ছিঃ কেন
যে বারবার ভুলে যাই-'
কিন্তু তারপর ও ইলা বারবার ভুলে যেত,আবার উচ্ছ্বসিত হাসিতে ভেঙ্গে পড়ত,আর মাঝে
মধ্যে বিজয় বিরক্ত হয়ে উঠত। আজ এত বছর পরে সেই হাসিভরা মুখটিকে স্মরণ করে বিজয় ভরালী
অদৃশ্য চোখের জল মুছে চলেছে।
একটা হাসিভরা মুখ। স্ত্রীর যে ছবিটা বিজয়ের চোখের ওপর সবসময় ভাসতে থাকে ,সেটা হল
হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে থাকা মুখের ছবি। একটা গোলাকার মুখ,খুব বেশি ফর্সা নয়,চোখদুটো
উজ্জ্বল,ছোট কপালটিতে একটু বড় টিপ,সিঁথিতে লম্বা করে সিদুরের রেখা । পাতলা ঠোটদুটিতে লেগে
রয়েছে চিরসঙ্গী হাসি।সেই হাসিকে মানুষটা কোনোদিন মলিন হতে দেয় নি। বিজয়ের মনে একটা বড়
কুষ্ঠাবোধ ছিল যে ভালো বাড়ি ঘরে প্রতিপালিত হওয়া ইলা এই আধা ভাঙ্গা ঘরে একটু হলেও
অসস্তুষ্ট হবেই।
প্রথমে না হলেও পরে নিশ্চয় তাকে বলবে যে বাড়িটা ভালো নয়। অসুবিধের লিস্ট দিন দিন
দীর্ঘ হতে থাকবে,হয়তো শেষ পর্যন্ত একটা ভালো দেখে ঘর খুঁজে নিতে বলবে। সেজন্যই ইলা যখন
তার সঙ্গে আনা নতুন চকচকে খাট পালঙ ,চেয়ার-টেবিল অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে এবং খুব পরিপাটি
করে সাজাতে শুরু করল,বিজয় নিজেই কিছুদিন পরে যে প্রসঙ্গ শীঘ্রই অবতারণা করার সম্ভাবনা
রয়েছে তা শুরু করে দিল—
‘এই আধা ভাঙ্গা ঘরগুলো আর নতুন করে কী সাজাবে ইলা?’
আধা ভাঙ্গা হলেও অনেক চেষ্টা চরিত্র করে বাড়িটা পেয়েছ তাই নয় কি? আগে তো এর
থেকেও একটা খারাপ বাড়িতে ছিলে। আমাকে বিয়ে করার জন্যই তো এই বাড়িটা আগের চেয়ে অনেক
বেশি ভাড়া দিয়ে নিয়েছ। পাওয়া গেলে তো আর ও বেশি ভালো একটি ঘর নিতে--নয় কি ?বিজয়ের মুখের
দিকে তাকিয়ে ইলা হাসল।
কী প্রসঙ্গের অবতারণা করতে গিয়ে কী উঠে এল!
এই সমস্ত তথ্য তৃমি কোথা থেকে পেলে?’
‘কোথা থেকে আর-।বাদল বলেছে।সে আরও বলেছে-আপ্নি নাকি তাকে বলেছেন,আমি বেশিদিন
এই শহরে থাকতে চাইব না।আপনাকে আরও একটা ভালো বাড়ি খুঁজে বের করতে হবে।আপনি তো বেশ
বড়লোকের মনের খবর জেনে বসে আছেন।আমি এই ঘরে বাস করার আজ দুই সপ্তাহ পরেও আপনি
আমার মনের খবরটা জানেন না কিন্তু আমি এখানে আসার অনেকদিন আগে থাকেই আমার মনের সেই
খবর জেনে বসে আছেন।’
‘তারমানে এই বাড়িতে থাকতে তোমার আপত্তি নেই-’-বিজয় দ্রুত জিজ্ঞেস করল। ‘মোটেই না।
বাবা আমাদের শৈশব থেকেই শিখিয়েছেন যে মানুষ যতটুকু পায় তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। যে জিনিস
পাওয়া সম্ভব নয় তার জন্য হা-হুতাশ করে মনকে অসুখী করে তোলা উচিত নয়। সবদিক দিয়ে মনের
মতো হওয়া ভাড়াঘর পাওয়া তো অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া আমরা তো এখানে চিরকাল বাস করব না।
আপনার যখন বদলির চাকরি একদিন না একদিন তো এখান থেকে চলে যেতেই হবে।’ তারপর বিজয়ের
দিকে তাকিয়ে হেসে ইলা বলল –‘আমরা যখন নিজেদের বাড়ি তৈরি করব তখন সেখানে নিজেদের মতো
করে সমস্ত কিছু সাজিয়ে গুছিয়ে নেব।'
সেদিন বিজয় সত্যিই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। স্বভাবে সে অলস। এই সামান্য
জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি বদল করেই তার কেমন যেন হাফ ধরে গিয়েছিল। ইলাকে সন্তুষ্ট করার জন্য
কথাটা বললেও ,এখনই এত জিনিসপত্র নিয়ে পুনরায় একটি নতুন বাড়িতে উঠে যাবার সম্ভাবনার কথা
চিন্তা করেই তার কেমন যেন ভীতিপূর্ণ মনে হচ্ছিল। বদলি হলে তো কোনো উপায় না পেয়ে যেতেই হবে।
ইলার প্রতি মনে মনে বিজয় কৃতজ্ঞ বোধ করল। কিন্তু তবুও তার মনে একটা সন্দেহ থেকেই
গেল যে ইলার মনে একটা ভালো বাড়িতে বসবাস করার আকাঙ্থা রয়েছে। কিন্তু এতদিনের পরিচয়ের
পরেও তার অলস স্বভাবের কথা তো ইলার না জানার কথা নয়। তাই এই বাড়িটিকে সে এক মুহূর্তের
জন্যও ভূলে খারাপ বলে বলে নি। তা নাহলে আর কিছু না হোক অন্তত বাথরুমের ব্যাপারে ইলার
আপত্তি করাটা খুবই স্বাভাবিক ছিল--বেড়াগুলি থেকেও না থাকার মতোই। স্নান করতে গিয়ে
প্রতিদিনই ইলা চাদরটা দিয়ে ঢেকে দেয়,আর সে ও এতটাই মহামুর্খ -এতদিনে বাড়ির মালিককে বলে
কয়ে বেড়াগুলিতে মাটির প্রলেপ তো দিয়ে নিতে পারত। বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পরে ইলা মুখ ফুটে
তাকে বলার পরে সে কাজটা করিয়ে নিয়েছিল।
সেদিন বিজয় বড় লজ্জা পেয়েছিল। নিজেকে বড়,অকর্মণ্য,সংসারী হওয়ার অনুপযুক্ত বলে মনে
হয়েছিল। অবশ্য ইলার কাছ থেকে সে এরকম একটা কাজ পাওয়ার ফলেই তার মনে বেশ একটা পৌরষের
গর্ব জেগে উঠেছিল। আধুনিক যুগে প্রাচীন বা মধ্যযুগের মতো পুরুষ অবলা নারীকে নানা বিপদ
আপদ,বিভীষিকা ইত্যাদি রক্ষা করার সুবিধা খুব কমই পায়। টাকার জোগাড় দেওয়া,বাজার করে
দেওয়া,মাঝেমধ্যে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, প্রয়োজনে ডাক্তার ডেকে আনা --এই সমস্ত কিছুতেই তাঁদের
পুরুষের কর্তব্য শেষ হয়ে যায়। নারীর কাছে আর কোনোভাবে তাদের বীরত্ব দেখানোর সুযোগ পায় না।
কিন্তু বিজয় নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করল--যখন বিয়ের পরের দিন রাতে ইলা তাকে ঘুম থেকে
জাগিয়ে তুলে বলল যে সে বাইরে যেতে চায়,কিন্তু বাথরুমটা অনেকটা দূরে,তার খুব ভয় করছে,বিজয়কে
সঙ্গে যেতে হবে। রাতে ঘুম থেকে স্ত্রীর সঙ্গে বাইরে যেতে হবে --এটাই কাজ। স্ত্রী তাকে খুব
কুণ্ঠার সঙ্গে জানায় ,এভাবে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে ইলার খুব খারাপ লাগে । শীতের রাত হলে তো সে
কুগ্ঠা আরও বাড়ে। কিন্তু কী করবে সে,তার যে প্রতিদিনই রাতে বাইরে যাবার অভ্যাস,অথচ এত ভয়
লাগে। এত ভয় যে তাকে রক্ষক হয়ে সঙ্গে যেতে হবে--নব-বিবাহিত যুবকের কাছে তরুণী স্ত্রীর এই
আবদার যে কতটা মাধুর্য বহন করে এনেছিল ,কী এক গৌরুষের গর্বে তার বুক স্ফীত করে
তুলেছিল,আজও সে অনুভূতি যেন নতুন করে বিজয় ভরালী উপভোগ করে৷
ইলার সেই ভয় নিয়ে দিনের বেলা বিজয় তাকে খুব খ্যাপায়। ‘এত ভয় কীসে?’ সে আরম্ত করে।
‘কীসে আর,ভূতে’-বিনা সঙ্কোচে ইলা উত্তর দেয়।
‘ভূত!এই গুয়াহাটি শহরেও ভূতের ভয় কর। তোমার নিজের চোখে কখনও ভূত দেখেছ যে এত ভয়
কর?’
‘বাঃ দেখিনি বলেই তো এত ভয়। বাঘ-সিংহ এরা সব কী কম ভয়ঙ্কর । কিন্তু ওদের দেখেছি
বলে ওদের কে এত ভয় লাগে না। কিন্তু রাতের বেলা ভূতের কথা মনে পড়লেই আমার শরীরের সমস্ত
লোম খাড়া হয়ে যায়।'
বিজয় হেসে ফেলেছিল। তারপর তার মনে হল ইলাকে কিছু তত্ত্বকথা বলা যেতে পারে।
‘ইলা,ভয় কী প্রমাণ করে জান?’
‘কী?’
‘জীবনের প্রতি মানুষের কতটা মায়া,কত মমতা। মত্যুকে ভয় করার মাধ্যমেই তো মানুষের মনে
সাধারণত সকল রকম ভয় সঞ্চারিত হয়েছে। মানুষ মরতে চায় না,বেঁচে থাকতে চায়--সেইজন্যই
পৃথিবীতে এত ভয়।
‘ইস,এ আর নতুন কথা কী। মানুষ তো মরতে চায়ই না। কেউ চায় না। আমিও চাই না।'
ক্ষণিকের জন্য থেমে গিয়েছিল ইলা-তারপর আস্তে করে বলেছিল –এখন আরও বেশি করে চাই
না।’ বিজয় ভালোবাসার দৃষ্টিতে ইলার দিকে তাকিয়ে হাসল। কিন্তু ইলার কথাটা না বোঝার ভান করে
হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেছিল –কেন?’
‘এমনিতেই-’, কপট ক্রোধের সঙ্গে উত্তর দিয়েছিল ইলা।
‘কিন্তু ইলা,আমি কিন্তু মরতে চাই। আজকেই। এখনই।’
‘কেন?’ প্রায় আর্তনাদের সুরে বলে উঠেছিল ইলা।
‘মরে ভূত হয়ে আমার প্রমাণ দিতে ইচ্ছা করছে-আমার মত্যুর পরে তুমি কতদিন কাঁদ।'
‘আপনি বড় নিষ্ঠুর।’ ইলার চোখ সেদিন ছলছল করে উঠেছিল। হাসি ঠিক যতটা সহজ আর
অনায়াস ছিল ইলার কাছে ,কাঁদাটাও ঠিক সেরকমই ছিল।
ইলার মৃত্যুর পরে বিজয় নিজে কিন্তু কাঁদে নি। কাঁদতে পারে নি। ইলা ভূত হয়ে সে কয়দিন
কেঁদেছে তা দেখতে চুপিচুপি এসেছিল কিনা,সে বলতে পারে না। ইলা তাকে ছেড়ে চলে যাবার পরে
কোনোদিন সে ইলার ছায়াটুকুও দেখতে পেল না।
জীবিতকালে যতই প্রিয়জন হোক না কেন,অনেকেই মৃত্যুর পরে কিন্তু সেই প্রিয়জনের
সাক্ষাৎ আর চায় না,অর্থাৎ ভূতের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সাহস থাকে না। কিন্তু বিজয় ভেবেছিল
সে যদি জীবনে কখনও ভূত দেখতে পেত--ইলার ভূত না হলেও অন্য কোনো ভূত দেখতে পেলেও সে
জীবনে হয়তো একটা বিরাট সান্ত্বনা লাভ করত ,কারণ তাহলে একটা বড় সত্যের সন্ধান পেত যে
মৃত্যুর পরে সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যায় না। মৃত্যু মানে শূন্য নয়,তার মানে তার নিজের মৃত্যুর পরে সে
একদিন হয়তো ইলার দেখা পেলেও পেতে পারে।
সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য ২০৭ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক গদ্য
সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
২০৭.
শনিবার দুপুর ৩টের সময় বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে পৌঁছোলেন বাংলাদেশের কবি জাহিদ হাসান মামুদ এবং তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। স্টেশনে উপস্থিত ছিল নাসের স্বপন দত্ত শান্তনু সমরমাস্টার এবং আমি। জাহিদরা পৌঁছে যাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল সন্দীপ বিশ্বাস। ওদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল PWD বাংলোয়। ওখানেই ছিল দীপ ও শুভ্রা সাউ।
সন্দীপ বেশ কিছুক্ষণ ওখানে জাহিদ-কে সঙ্গ দিয়েছিল। কথা প্রসঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল জাহিদদের গ্রামের বাড়ির কাছেই সন্দীপদের পৈত্রিক বাড়ি।
উৎসবের দিন সকাল ৬টায় বেরিয়ে পড়েছিলাম অতিথি-আপ্যায়নে।
PWD বাংলো সার্কিট হাউস PHE বাংলো ঘুরে এলাম । আবার সাড়ে ৬টায় নাসেরের সঙ্গে বহরমপুর ক্লাব। ওখানেই খাবারের ব্যবস্থা , দিনের এবং রাতের। পাশেই ঋত্বিকসদন। ওখানে থার্মোকলের ৩টি হোডিং এসে গেছে। ২টি বাইরে লাগানোর জন্য , একটি সভামঞ্চের। তখন ফ্লেক্স আসেনি। নীল কাপড়ের ওপর থার্মোকলে লেখা কবিতাপাক্ষিক ৩০০। মঞ্চের সামনে ' মানুষ যতদিন পর্যন্ত স্বপ্ন দেখবে ততদিন কবিতাও থাকবে '।
ওখান থেকে গেস্টহাউস। গেস্টহাউস থেকে ব্যানার
ও বইপত্রের ব্যাগ গাড়িতে তোলা হল।এমদাদ -উল- হক গাড়ির ব্যবস্থা করেছিল। গেস্টহাউসের কাছেই মা কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। ওখানে কচুরি ডাল ছানাবড়া। গাড়ি নিয়ে বহরমপুর ক্লাব। দেখা গেল বাস থেকে নেমে ঋত্বিকসদনের দিকে হেঁটে আসছেন দীপংকর ঘোষ তাপসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ভগবাহাদুর সিং রুদ্র কিংশুক মলয় ঘোষ। তাদের ডেকে নিলাম। বহরমপুর ক্লাবের গেটে কবিতাপাক্ষিকের ব্যানার টাঙানো হল। ঋত্বিকসদনের সামনে ১২ টি বিভিন্ন রঙের উৎসবের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল লোহার স্ট্যান্ডে। এই আইডিয়াটা পেয়েছিলাম পার্টির একটা কর্মসূচি থেকে।ব্রিগেড-এর মিটিং । অনেকের সঙ্গে আমিও ছিলাম মঞ্চ এবং মাঠ সজ্জায়। সেখানেও ১২টা অনেকের সঙ্গে আমিও ছিলাম মঞ্চ এবং মাঠ সজ্জায়। সেখানেও ১২টা উৎসবের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। মঞ্চের ব্যানার দুটিও নিজ নিজ স্থানে বসে পড়ল। শুভাশিসের ওপর দ্যাখাশোনার ভার রইলো।
নাসের এবং আমি গেলাম সন্দীপ বিশ্বাসের বাড়ি। ওখান থেকে গেস্টহাউস। ওখানের বইপত্র নামিয়ে এনেছিল রুদ্র কিংশুক তাপসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ভগবাহাদুর সিং।
ঋত্বিকসদনে বইপত্র নামানোর পর নাসের এবং শান্তনু চলে গেল লোকনাথ মন্দিরে। পায়রা আনার জন্য। অশোক সিনহা একটি নাইলনের তিনটি মুখবন্ধ ব্যাগে সাদা পায়রা তুলে দিয়েছিলেন নাসেরের হাতে।নাসের এবং শান্তনু হাতে করে পায়রা ধরা শিখে নিয়েছিল। অশোককেও আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। অশোক আসতে পারেনি। তার প্রতিনিধি একটি ছেলে এসেছিল সাইকেলে।
রবিবার ২০ মার্চ ২০০৫ সকাল ১১টায় বহরমপুর ঋত্বিকসদনের সামনে ৩০০ কবিতাউৎসবের উদ্বোধন হল একটু অন্যরকম ভাবে। প্রবেশতোরণের কাপড়ের ওপর আটকে দেওয়া হয়েছিল কপা ২৯৯ সংখ্যায় প্রকাশিত উত্তম চৌধুরী 'প্রস্তাবনা ' কবিতাটি । তার পাশেই কপা ৩০০ সংখ্যা আমার লেখা ভূমিকাটি 'কথার কথা '।
তারপর পায়রা ওড়ানোর কথা ঘোষণা করল নাসের । আমি প্রথম পায়রাটি , দ্বিতীয়টি শক্তিনাথ ঝা , তৃতীয়টি সন্দীপ বিশ্বাস। পায়রা উড়লো। মুহুর্মুহু হাততালি । ঘোষণায় ঠাকুরদাস।রতন দাস তার মোবাইলে হাততালির ধ্বনি সরাসরি শুনিয়েছিল ধীমান চক্রবর্তী-কে। লোকনাথ মন্দিরের ছেলেটির হাতে ফেরত দেওয়া হল পায়রার ব্যাগ। তারপর ভেতরে ঢোকা হল।
ভেতরের খবর আগামীকাল।
বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০
শিক্ষা-জীবন || চার্লস মিথুন || অন্যান্য কবিতা
শিক্ষা-জীবন
চার্লস মিথুন
জগৎ মাঝে জন্ম নিয়েই,
শিক্ষা জীবন শুরু।
শেখার বয়স শেষ হবে না,
হও না যতই বড়॥
মায়ের কাছে শিখবে প্রথম,
প্রাণের কথা বলা।
ধীরে ধীরে শিখবে তুমি,
সমাজ মাঝে চলা॥
শিখবে তুমি বিদ্যাপিঠে,
পাঠ্যসূচির পড়া।
পাঠ্য সকল দেখবে তুমি,
জ্ঞানের আলোয় ভরা॥
পড়া শেষে হবে তোমার,
কর্ম জীবন শুরু।
সেখানটাতে দেখবে তুমি,
আছেন অনেক গুরু॥
তোমার চেয়ে অনেক লোকে,
অনেক বেশি জানে।
এই বিষয়ে স্মরণ রেখে,
চলবে সকল জনে॥
অনেক জ্ঞানীর দেখা পাবে,
জীবন চলার পথে।
জ্ঞানের সীমা বাড়বে তোমার,
বয়স বাড়ার সাথে॥
তাই তো বলি শুরু সবে,
জন্ম নেয়ার পরে।
শিক্ষা নেয়ার বয়স শেষ,
মৃত্যু হওয়ার পরে॥
আটপৌরে কবিতা || অলোক বিশ্বাস || "আই-যুগ"-এর কবিতা
আটপৌরে কবিতা : অলোক বিশ্বাস
কিছু বই কিছু কথা ২০৪ || নীলাঞ্জন কুমার || আধখানা প্রবাদ || গৌরাঙ্গ মিত্র
কিছু বই কিছু কথা ২০৪ । নীলাঞ্জন কুমার
' একটা প্রিয়স্বপ্ন একশো আট টুকরোয় ভেঙে/ একশো আটটা সাদা বক হয়ে শেষ পর্যন্ত বলাকা হয়ে যায়- ' এর মতো সুন্দর ' উৎসর্গ ' পত্রের কবিতা অবলীলায় লিখতে পারেন ২০১০সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ' আধখানা প্রবাদ ' কাব্যগ্রন্থে কবি গৌরাঙ্গ মিত্র , সেখানে বইটির ভেতরে ঢুকতে আলাদা নির্যাস অনুভব করব তা বলাই বাহুল্য । তাই মিথ্যাচারণকে আশ্চর্যভাবে তাঁকে কবিতায় আনতে দেখি: ' মিথ্যার অশ্বত্থামা আছে, আলোকোজ্জ্বল আলেয়া আছে/ তবে মিথ্যার কোন মিথ্যাচারণ নেই, মিথ্যাপীরও নেই ।'( ' মিথ্যাচারণ ও মিথ্যাপীর ') তখন গৌরাঙ্গের কবিতাচর্চার ফাঁক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে ।পাশাপাশি ' বিতর্ক সভা ' কবিতায় : ' একথা ঠিক বিতর্ক সভায় অনেক তর্কাতর্কির পরেও/ কাকেরা সাদা হয়ে উঠবে না, রাজহাঁস কালো হবে না '-র মতো দৃষ্টিভঙ্গি ও তীব্র শ্লেষ তিনি আমাদের দিকে ছুঁড়ে দেন, তখন 'সমালোচনা মানেই কষাঘাত ' এই মনোভাবকে অস্বীকার করে বইটি ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় ।
আগে বলেছি এখনো বলছি পরেও বলবো , গৌরাঙ্গ ধীরে ধীরে অনেক পরিশ্রমে কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে গড়ে তুলেছেন তাঁর কবিতাজগৎ , তা তাঁর কবিতা পর্যায়ক্রমে পড়লেই বুঝতে পারা যায় । তাঁর এই কাব্যগ্রন্থে পাই: ' সারা গায়ে তোমার দরবারি কানাড়া মেখে/ এখান থেকে আমি চলে যাব ।' ( ' কিন্তু কৃষ্ণজিৎ') , ' ভেবেছিলাম গোরুর গাড়িটার পেছনে ছুটব , / কিন্তু ছোটা হয় না, আমাকে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে স্থবির সময় । ' ( ' গোরুর গাড়ি ') চুম্বন করার মতো পংক্তি ।
বর্তমানে গৌরাঙ্গ মিত্রের কবিতা এমনই , যাকে পুনঃপাঠ করতে গেলে আবার আঁতিপাতি করে পড়তে হয় । কারণ তাঁর ভেতর সত্য বাসা বেঁধে আছে, যে
সত্যের সঙ্গে মনে মনে সকলেই বাস করতে চাই মিথ্যে দূরে ঠেলে । শৈবাল নায়েকের প্রচ্ছদ কে বলতে হয় , বাঃ। কালার, পরিকল্পনা মনকে ধরে রাখে ।
শব্দব্রাউজ ২৬ || নীলাঞ্জন কুমার || "আই-যুগ"-এর কবিতা
শব্দব্রাউজ ২৬ । নীলাঞ্জন কুমার
তেঘরিয়ার বিপাশা আবাসন ২৫।১১।২০২০ সকাল ৮ - ১৫ মিনিট । অল্প ঠান্ডা বাতাসে । প্রেম প্রকৃতি ইত্যাদির কথা ভাবতে গিয়ে মাথায় এলো ' নেংটি ইঁদুরে ঢোল কাটে ' । তাই নিয়ে ধীরে ধীরে ঘটে গেল শব্দব্রাউজের চিন্তা ।
শব্দসূত্র : নেংটি ইঁদুরে ঢোল কাটে
নেংটি ইঁদুর মানে যদি শুধু টম এন্ড জেরি হত তবে কেউ তাকে বিষ দিয়ে পেট ফুলিয়ে মারতো না । কার্টুন আর বাস্তবের মিল কোথায়? নেই, নেই হে । জেরি আর টম এত মারামারি করেও যখন বেঁচেবর্তে থাকে, তখন কার্টুনের অবাস্তবতা হাসির খোরাক হয়ে ওঠে । নেংটির কাছে যখন অনেক কিছুই কুটিকুটি করার ক্ষমতা, তখন কি করে মানুষেরা বাস্তবে মজা পাবে বলুন?
নেংটি ইঁদুরের ঢোল কাটার দৃশ্য দেখার সময় কার আর 'গতরে পিরিতি ফুল ফুটে ' মেলানোর ইচ্ছে জাগে ।নেংটির গতর বড় ছোট, ঢোলের ওপর চড়ে বসে অবলীলায় যেতে পারে দেশ দেশান্তরে । চুপিসারেগানও শুনতে পারে ' নেংটি ইঁদুরে ঢোল কাটে.... ' । টম এন্ড জেরির স্রষ্টা তা দেখলে নির্ঘাত বানিয়ে নিতেন কমিকস্ ফিল্ম । শেষে সবাই হাততালিতে ভরিয়ে দিতো।
Registration (Online)
-
" কফি হাউসের চারপাশে" পত্রিকা প্রকাশ নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা ।। গত ১০ অক্টোবর কলকাতার সূর্য সেন স্ট্রিটের নির্মল ভবনে মৃণাল কান...
-
কবিতা। । আর জি কর কাশীনাথ সাহা প্রতিবাদ আজ পথে প্রান্তরে লক্ষ কণ্ঠে একই স্বর অভয়ার বিচার চেয়ে গর্জে ওঠে আর জি কর। কে কোন দল কোন সে ঝান্...