রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন-৯ ।। হোমেন বরগোহাঞি ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস (Basudeb Das)

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন

হোমেন বরগোহাঞি

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস (Basudeb Das)





নয়

(৯)

বেচারা রিচার্ডের বর্ষপুঞ্জী

(Poor Richards Almanac)


(Poor richards Almanac) বেঞ্জামিন  ফ্রেঙ্কলিন ইতিমধ্যে ফিলাডেলফিয়ার একজন নেতৃস্থানীয় ধনী মানুষ বলে  পরিচিতি লাভ করেছেন।

১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে  ফ্রেঙ্কলিন  তার ছাপা ছাড়া থেকে প্রতিবছর একটি বর্ষপঞ্জী প্রকাশ করতে শুরু করেন। তিনি বর্ষপঞ্জিটার নাম দেন–Poor richards Almanac–অর্থাৎ বেচারা রিচার্ডের বর্ষপঞ্জী। রিচার্জ ছিলেন একটি কাল্পনিক চরিত্র। মানুষটা ছিলেন অতি সৎ, কিন্তু অতি দরিদ্র।স্ত্রীর কাছ থেকে গালিগালাজ খেয়েই  তাঁর দিন কাটে। প্রকাশ ফ্রাঙ্কলিন প্রতিবছর প্রকাশ করা বর্ষপঞ্জিটা ছিল রিচার্ড নামে এই কাল্পনিক মানুষটির স্বীকারোক্তি।। নিজের জীবনের কথা বলার ছলে রিচার্ড নানা বিষয়ে তার মন্তব্য এবং  নীতি উপদেশ দিতেন।  সেই প্রতিটি কথা তিনি লিখেছিলেন তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। বেচারার রিচার্ডের বর্ষপঞ্জি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকায় এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, ফ্রেঙ্কলিনকে  প্রতিবছর বর্ষপঞ্জীটার দশ হাজার কপি প্রকাশ করতে হয়েছিল। সুদীর্ঘ 25 বছর কাল বর্ষপঞ্জীটি প্রকাশ হয়েছিল। এই বর্ষপঞ্জটি একইসঙ্গে তিনটা কাজ করেছে। প্রথমত, এটি আমেরিকার মানুষের স্বভাব চরিত্র উন্নত করা এবং জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করায় সাহায্য করেছে। দ্বিতীয়ত,বর্ষপঞ্জীটি  বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের  চেয়ারটি এবং জনপ্রিয়তা আমেরিকার চারদিকে  ছড়িয়ে দিয়েছিল। তৃতীয়তঃ, বর্ষপঞ্জী থেকে ফ্রেঙ্কলিন এত ধন উপার্জন করলেন যে তিনি সেই সময়ের আমেরিকার প্রথম সারির ধনীদের মধ্যে একজন বলে পরিচিতি লাভ করলেন।

 বেচারা রিচার্ডের  বর্ষপঞ্জীর কিছু যোজনা পাঠান্তরের পরিচিতি নিচে দেওয়া হল–

নিজের নিকটতম  প্রতিবেশীকে ভালোবাসবে, কিন্তু দুটি বাড়ির মধ্যে সীমানাটা ভেঙ্গে ফেল না।

 তোমার নিজের ভাই তোমার বন্ধু না হতে পারে, কিন্তু তোমার বন্ধু সবসময় তোমার ভাই হয়ে থাকবে।

 মানুষ মাত্রই ভুল করে; ক্ষমা করাটা স্বর্গীয় গুণ; কিন্তু একই ভুলকে বারবার করে থাকাটা শয়তানের লক্ষণ।

‘ কর্কশ’ শব্দ প্রয়োগ করে কেউ কারও বন্ধু হতে পারে না। এক গ্যালন ভিনেগারের চেয়ে  এক চামচ মধু দিলে বেশি মাছি ধরা পড়বে।

 যে মানুষ সুখ শান্তিতে বেঁচে থাকতে চায়, তিনি নিজে  সমস্ত কথা মুখ খুলে বলেন জানা সমস্ত কথা মুখ খুলে বলেন না, আর নিজে দেখা সমস্ত কথার উপরে মন্তব্য করেন না।

 একজন সহজ সরল গ্রামের মানুষ যদি উকিলের পাল্লায় পড়ে; তাহলে তার অবস্থা হয় দুটি বিড়ালের মধ্যে পড়া মাছের মতো।

পচা আপেল  একটি টুকরিতে  থাকলে  বাকি  আপেলগুলি  পচতে আরম্ভ করে।

 কোনো  মানুষ এত খারাপ হতে পারেন না যে তিনি অন্যের ভালো গুণগুলিকে শ্রদ্ধা না করে থাকতে পারেন।

 সহজ উদাহরণই হল সর্বোত্তম উপদেশ।

 নিজের বিবেক সব সময় নির্মল করে রাখবে; তাহলে তুমি অন্যকে ভয় করে চলার প্রয়োজন নেই।

যে মানুষ আদেশ পালন করতে পারে না, তিনি অন্যকে আদেশ দিতে পারেন না।

 মিথ্যা কথা আর একটি, সত্যের পা দুটি।

 সমস্ত মানুষকে খুব সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি পর্যবেক্ষণ করবে নিজেকে।

 জীবন দীর্ঘ হলেও সে ভালো জীবন নাও হতে পারে; কিন্তু ভালো জীবন সব সময় দীর্ঘ বলে প্রমাণিত হয়।

জীবন ধারণের জন্য খাবে,? খাবার জন্য জীবন ধারণ করবে না।

  যে মানুষ কারও কাছ থেকে কিছু আশা করে না , তিনিই সুখী এবং ভাগ্যবান মানুষ। তাকে জীবনে কখনও বিরাশ হতে হয় না।

 তুমি সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকতে চাও কি? যদি চাও, তাহলে যে কাজ করা উচিত, কেবল সেই কাজই করবে, যে কাজ করে খুশি হও, সেরকম কাজ করবে না।

 যদি দীর্ঘ জীবন লাভ করতে চাও, তাহলে আহারের পরিমাণ পরিমাণ কম করবে।

 পিঁপড়ার চেয়ে ভালো নীতি শিক্ষা অন্য কেউ দিতে পারে না; পিঁপড়া  কিন্তু মুখে  কিছু বলে না।

কষ্ট না করে কেউ কিছু জিনিস লাভ করতে পারে না।

দোকানটা ভালো করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে;তখন দোকানটাও তোমাকে সুখে-সন্তোষে রাখবে।

যে মানুষ পরিশ্রম করে না,সে কখনও খ্যাতিমান হতে পারে না।

আগামীকাল কিছু কাজ করার মতো আছে কি?যদি থাকে তাহলে সেই কাজ আজই করে ফেল।

একজন যুবক ব্যবসায়ীর প্রতি উপদেশ

তোমার চাহিদা অনুসারে আমি নিচে কয়েকটি সংকেত দিলাম।আমি নিজে এই কয়েকটি নীতি অনুসরণ করে জীবনে অনেক সুফল পেয়েছি।আমি আশা করি যে তুমিও আমার মতোই সুফল পাবে।

মনে রাখবে যে সময়ই হল ধন।ধরে নাও,তুমি সারাদিন কাজ করে দশ শিলিং রোজগার করতে পার।কিন্তু তুমি মাত্র অর্ধেক দিন কাজ করে দিনটির বাকি সময় শুয়ে বসে কাটিয়ে দিলে।সেই সময়ে তুমি যেন আমোদ-প্রমোদের জন্য ছয় শিলিং খরচ করলে।তুমি ভাবলে যে তুমি মাত্র ছয় শিলিংই খরচ করেছ।কিন্তু আসলে খরচের তালিকায় তোমাকে আরও পাঁচ শিলিং যোগ দিতে হবে।কারণ দিনের অর্ধেক ভাগ সময় তুমি শুয়ে বসে বা রং তামাসা করে না কাটালে তুমি পাঁচ শিলিং অর্জন করতে পারতে।

 মনে রাখবে যে ধনের নিজের সংখ্যা-বৃদ্ধি করার ক্ষমতা আছে।ধন সন্তানের জন্ম দান করে;ধনের সন্তান নতুন করে সন্তানের জন্ম দান করে।এভাবে ধনের সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকে।পাঁচ শিলিং ভালোভাবে ব্যাবসায় বিনিয়োগ করতে জানলে তা একদিন ছয় শিলিং হবে।ছয় শিলিং অতি দ্রুত সাত শিলিং তিন পেন্স হবে।এভাবে বাড়তে বাড়তে তা একদিন গিয়ে একশো পাউণ্ড হবে।ব্যাবসায় ভালো হতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে লাভও দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করবে।কেউ যদি বাচ্চা দিতে থাকা অবস্থায় একটি শূকরীকে মেরে ফেলে ,তাহলে সে ভবিষ্যতে হাজারটা পুরুষের জন্য শূকরীটির সবগুলি বংশধরকে হত্যা করে।ঠিক সেভাবে কেউ যদি একটি শিলিং নষ্ট করে তিনি আসলে সেই শিলিংটা থেকে হতে পারা শত শত পাউণ্ড নষ্ট করেন।

মনে রাখবে যে, যে মানুষ অন্যের কাছ থেকে ধন ধারে নিয়ে সেই ধার সময়মতো পরিশোধ করেন তিনি আসলে অন্যের ধনের থলেগুলির মালিক হন।যখন মানুষ দেখে একজন মানুষ অন্যের কাছ থেকে ধার নেওয়া সমস্ত টাকা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করে,অর্থাৎ তিনি নিজের শপথ রক্ষা করেন,তখন তাঁর প্রয়োজন হলেই অন্যে তাকে     ধন ধার দিতে সঙ্কোচ করে না।ব্যাবসায়ী মানুষকে এই কথাটা খুব সাহায্য করে।ব্যাবসায় উন্নতি করতে চাওয়া যে কোনো যুবকের জন্য অধ্যবসায় এবং মিতব্যয়িতার পরেই সবচেয়ে বড়োগুণ হল আর্থিক লেন-দেনের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা।সেইজন্য কারও কাছ থেকে ধন ধারে নিলে ধার পরিশোধ করা নির্দিষ্ট সম্যের চে্য়ে মাত্র একঘণ্টা সময়ও বেশি সেই ধন নিজের হাতে রাখবে না,কারণ তাহলে তুমি পুনরায় কখনও বন্ধুদের কাছ থেকে ধন ধারে পাওয়ার আশা করতে পারবে না।

তুমি যার কাছ থেকে ধন ধারে নাও তাঁর মনে তোমার সম্বন্ধে সন্দেহ বা অবিশ্বাস জন্মাতে পারা ছোটো ছোটো কথাগুলি সযত্নে পরিহার করে চলতে চেষ্টা করবে।তোমার কারখানায় যদি সকালবেলা পাঁচটার সময় বা রাত নয়টার সময় হাতুড়ির কাজ চলতে থাকে এবং তোমাকে টাকা ধার দেওয়া মানুষটি সেই হাতুড়ির শব্দ শুনতে পায়,তাহলে তিনি তোমার হাতে তার ধনটুকু আরও ছয়মাস বেশিদিনের জন্য ছেড়ে দিতে দ্বিধা করবে না।কিন্তু অন্যদিকে তুমি যে সময়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে থাকা উচিত ছিল সেই সময়ে যদি তিনি তোমাকে তাস খেলায় মত্ত থাকতে বা মদের দোকানে দেখতে পায়,তাহলে ঠিক তার পরদিনই তিনি তোমার কাছ থেকে ধনটুকু ফিরে পাবার দাবি জানাবে।

সবসময় আয় দেখে ব্যয় করবে।তা না করলে নিজের অজান্তেই তুমি একদিন ঋণী হয়ে পড়বে এবং ধারের বোঝা ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকবে।

সেরকম যাতে না হয় তার জন্য তুমি কিছুদিনের জন্য তোমার উপার্জন এবং খরচের হিসেব লিখে রাখার হিসেব করবে।তুমি যদি একটু কষ্ট করে খরচের খুঁটিনাটিগুলি লিখে রাখ,তাহলে খুচরো খরচগুলি কীভাবে একদিন গিয়ে একটা মোটা অঙ্কে পরিণত হয় সেকথা তুমি নিজেই আবিষ্কার করবে।তখন তুমি নিজের জন্য বিশেষ অসুবিধা সৃষ্টি না করে ধন সঞ্চয় করতে শিখবে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে ধনী হওয়ার পথটা বাজারে যাওয়া পথের মতোই সোজা।এটা প্রধানত নির্ভর করে মাত্র দুটি শব্দের ওপরে।অধ্যবসায় এবং মিতব্যয়িতা।অর্থাৎ সময় এবং ধন এই দুটির একটিরও অপচয় করবে না;বরং দুটিরই পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে।অধ্যবসায় এবং মিতব্যয়িতার অবিহনে তুমি কখনও ব্যাবসায়ে সফল হতে পারবে না।অন্যদিকে এই দুটি একত্রিত হলে তুমি ব্যাবসায় সফল না হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।যে মানুষ সৎভাবে পেতে পারা সমস্ত ধন পায় এবং পাওয়া ধনটুকু (অত্যাবশ্যকীয় খরচটা বাদ দিয়ে)সঞ্চয় করে তিনি নিশ্চয় একদিন ধনী মানুষ হবেই হবে।

যে মানুষ ভাবে যে নিজের জোরে তিনি সমস্ত কাজ করিয়ে নিতে পারেন,তাহলে সেরকম মানুষকে এই বলে সন্দেহ করার জন্য জায়গা থাকে যে তিনি প্রত্যেকটা কাজ ধনের জন্য করেন।

কুঠারের একটু একটু আঘাতে একটি বিরাট গাছ গড়িয়ে ফেলতে পারে।

তুমি যত অর্জন কর,তারচেয়ে কম খরচ করার জন্য যদি শেখ,তাহলে নিশ্চয় জানবে যে সমস্ত জিনিসকে সোনায় পরিণত করতে পারা প্রশ-পাথর তুমি পেয়ে গেছ।

তাড়াতাড়ি বিছানায় যাওয়া এবং দ্রুত উঠার অভ্যাস করবে;তখন তুমি স্বাস্থ্যবান,ধনী এবং জ্ঞানী হতে পারবে।

গাড়ির সবচেয়ে খারাপ চাকাটা সবচেয়ে বেশি শব্দ করে।

কৃ্তকার্যতা অনেক মানুষের সর্বনাশ করেছে।

নিজের জ্ঞান গোপন করতে না পারা মানুষের চেয়ে বড়ো মূর্খ অন্য কেউ নেই। 

ছোটো ছোটো দষ-ত্রুটিগুলি সময় মতো শুধরে না নিলে শেষে এটাই গিয়ে বিরাট আকার ধারণ করে।

কাঁচের বাসন,চিনা মাটির বাসন এবং মানুষের খ্যাতি অতি সহজে ভাঙে;সেইসব কখনও সম্পূর্ণভাবে জোড়া লাগে না।

যে নিজেকে সহায় করে,তাকে ঈশ্বরও সহায় করে।

ক্ষুধাই হল সবচেয়ে ভালো তরকারি।

অভিজ্ঞতার পাঠশালা অতিমাত্রায় খরচে 

কিন্তু মূর্খ তার বাইরে অন্য কিছু পাঠশালায় শিখতে পারে না।

যে মানুষের কাঁটা ছড়ানো অভ্যাস,তার কখনও খালি পায়ে হাঁটা উচিত নয়।

তিনজন মানুষের পক্ষে একটা গোপনীয় কথা গোপন করে রাখা সম্ভব-যদি সেই তিনজন মানুষের ভেতরে দুজন মানুষের ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়।

কুয়ো শুকিয়ে তলা বেরিয়ে গেলে তবেই আমরা জলের মূল্য বুঝি।

সময় হল এমন একটি মহৌষধের ,যা সমস্ত ধরনের রোগ নিরাময় করতে পারে।

কেবল জ্ঞানী এবং সাহসী মানুষ নিজের ভুলটা স্বীকার করতে পারে।

খারাপ ইস্পাত দিয়ে কখনও ভালো দা তৈরই করা যায় না।

তুমি যদি তোমার শত্রুর কোনো অপকার কর,তাহলে তুমি তোমার শত্রুর চেয়ে নিচু স্তরের মানুষ বলে পরিগণিত হবে।

তুমি যদি শত্রু তোমার করা অপকারের প্রতিশোধ নিতে চাও,তাহলে তুমি তোমার শত্রুর একই সারির মানুষ বলে গণ্য হবে।কিন্তু যদি শত্রু তোমার প্রতি করা অপকারের জন্য তুমি তাকে ক্ষমা করে দিতে পার,তাহলে প্রমাণ করা হবে যে তুমি তোমার শত্রুর চেয়ে উঁচু স্তরের মানুষ।

রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন -৮ ।। হোমেন বরগোহাঞি ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস (Basudeb Das)

 বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন

হোমেন বরগোহাঞি

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস (Basudeb Das)





আট

(৮)

বেঞ্জামিনের বহুমুখী সাধনা

বেঞ্জমিন কর্মজীবন আরম্ভ করেছিলেন মুদ্রক এবং সাংবাদিক হিসেবে।একজন সফল সাংবাদিক হওয়াটা ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ছাপাখানার ব্যবসা কৃতকার্যতার মুখ দেখার সঙ্গে সঙ্গে তিনি একটি খবরের কাগজ আরম্ভ করলেন।। নাম দা ‘পেনসিলভেনিয়া গেজেট’।

বেঞ্জামিন এখন ফিলাডেলফিয়ার একজন বিশিষ্ট এবং সম্মানিত নাগরিক। তিনি নিজে একটি বড়ো ছাপাখানার মালিক। তাছাড়া তিনি একটি খবরের কাগজের সম্পাদক। কিন্তু বেঞ্জামিন কেবল ব্যক্তিগত কৃতকার্যতায় সন্তুষ্ট হয়ে থাকার মানুষ ছিলেন না। তিনি সবসময় নিজের স্বাস্থ্য স্বভাব চরিত্র এবং ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নত করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার সমান্তরাল ভাবে তিনি আরও একটি ব্রত গ্রহণ করেছিলেন– তিনি যে পরিবেশ এবং যে সমাজে বাস করেন সেই পরিবেশ এবং সেই সমাজের উন্নতি সাধন করার জন্য কাজ করা। নিজের উন্নতি সঙ্গে অন্যেরও উন্নতি– এই সংকল্প তিনি সারা জীবন চোখের সামনে রেখে ছিলেন এবং সেই অনুসারে কাজ করে গেছেন।

  ফিলাডেলফিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তার বিশিষ্ট এবং বিদগ্ধ বন্ধুদের নিয়ে একটি ক্লাব খুললেন। ক্লাবটির নাম দিলেন জুন্টো (Junto)।অহরহ উন্নতির কথা চিন্তা করা বেঞ্জামিনের এই ক্লাবটি খোলার মূল উদ্দেশ্য ছিল আলোচনা সমালোচনার মাধ্যমে ক্লাবের প্রতিটি সদস্যের মানসিক উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করা। ক্লাবের বৈঠক বসত প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যা বেলা। ক্লাবের নিয়মাবলী তৈরি করেছিলেন বেঞ্জামিন নিজে। সেই নিয়ম অনুসারে ক্লাবের প্রতিটি সদস্যই পর্যায়ক্রমে রাজনীতি, দর্শন, নীতিশাস্ত্র এবং অন্যান্য যে কোনো বিষয়ে একটি বা ততোধিক প্রশ্ন উত্থাপন করবে এবং বাকি সদস্যরা সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে। তিন মাস পরে পরে ক্লাবের প্রতিটি সদস্য নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো বিষয়ের উপরে একটি পাঠ করবে এবং বাকি সদস্যরা তার উপরে তর্ক করবে। কিন্তু তর্ক যুদ্ধে জয়লাভ করাটা কারও উদ্দেশ্য হবে না। তর্কের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে সত্যের সন্ধান।

যে সময়ের কথা লিখছি সেই সময় আমেরিকা স্বাধীন ছিল না বা এখনকার মতো একটি বৃহৎ যুক্তরাষ্ট্রও ছিল না।ব্রিটেন থেকে যাওয়া শরণার্থীরা তখন পর্যন্ত উত্তর আমেরিকায় তেরোটি উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।প্রতিটি উপনিবেশই ছিল ব্রিটিশ রাজ শক্তির অধীন।বেঞ্জামিন ক্লাব খুলে বন্ধুদের সঙ্গে নানা বিষয়ে তর্ক এবং আলোচনা করে থাকার সময় তেরোটি উপনিবেশে মুদ্রার অভাব জনসাধারণের জন্য জটিল সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।ক্লাবের বৈঠকে সেই বিষয়েও একদিন আলোচনা হল।সেই আলোচনার ভিত্তিতে বেঞ্জামিনের নিজের নাম না দিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখে ছাপিয়ে মানুষের মধ্যে বিতরণ করলেন।প্রবন্ধটিতে মাটির মূল্যের ওপর ভিত্তি করে কাগজের নোট ছাপার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।সরল ভাষায় লেখা বেঞ্জামিনের অকাট্য যুক্তিতে বিশ্বাস করে পেনসিলভেনিয়ার বিধান সভা কাগজের নোট প্রচলন করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন এবং নোট ছাপার দায়িত্বটাও দিলেন বেঞ্জামিনের ছাপাখানাকে।ফলে একই সময়ে বেঞ্জামিনের হাতে অনেক টাকা এল।যা অল্প কিছু ঋণ পরিশোধ করার জন্য বাকি ছিল সেটা পরিশোধ করে তিনি এখন একজন ধনী মানুষ হলেন।বেঞ্জামিন নিজে স্বীকার করা মতে তাঁর জীবনে উন্নতি এবং কৃ্তকার্যতা লাভ করার একটি প্রধান সম্বল ছিল তাঁর ভালো গদ্য লেখার ক্ষমতা।কাগজের নোট ছাপিয়ে ধনী হওয়াটাও তার একটি প্রমাণ বলে তিনি নিজে লিখে রেখে গেছেন।

ঠিক প্রায় এই সময়ে জনগণের জন্য একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করার চিন্তাও বেঞ্জামিনের মনে এল।এর আগে পর্যন্ত আমেরিকায় গ্রন্থাগারের অস্তিত্ব ছিল না।জুন্টো ক্লাবে পাঠ করা রচনাগুলিতে প্রায় নানা ধরনের বইয়ের উল্লেখ থাকে। সেই প্রতিটি বই ক্লাবের সদস্যদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা বই। বেঞ্জামিন একদিন ক্লাবের বৈঠকে প্রস্তাব করলেন যে সদস্যরা যদি তাদের বইগুলি বাড়ি থেকে এনে ক্লাবে বসার ঘরে একসঙ্গে করে রাখে, তাহলে রচনাগুলোর বিষয়ে আলোচনা করার সময় সদস্যরা প্রয়োজন হলে বই গুলির পাতা উল্টিয়ে দেখতে পারবে; তাছাড়া তারা একে অপরের বই পড়ার জন্য বাড়িতেও নিতে পারবে। বেঞ্জামিনের প্রস্তাবে জুন্টো ক্লাবের সদস্যরা সম্মত হলেন। তারা প্রত্যেকেই নিজের নিজের বইগুলি ক্লাবে জমা দিলেন। কিন্তু এই ব্যবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হল না। যত্ন নেওয়া মানুষের অভাবে বইগুলি নষ্ট হয়ে যেতে লাগল। প্রায় এক বছর পরে সদস্যরা বইগুলি ফিরিয়ে নিয়ে গেল। ঠিক এই সময়ে বেঞ্জামিন একটি সরকারি গ্রন্থাগার স্থাপন করার কথা চিন্তা করতে শুরু করলেন।

বেঞ্জামিনের পরিকল্পনা অনুসারে প্রস্তাবিত গ্রন্থাগারের জন্য প্রথমে পঞ্চাশজন সদস্য খুঁজে বের করা হল। সদস্য হওয়ার জন্য তাদের প্রত্যেককেই চল্লিশ সিলিং করে ভর্তি মাশুল দিতে হল। তাছাড়া ঠিক হল যে পঞ্চাশ বছরের জন্য তাদের বছরে দশ শিলিং করে দান করতে হবে। এই টাকা দিয়ে বই কিনে আমেরিকার সর্বপ্রথম সরকারি গ্রন্থাগার স্থাপন করা হল। বেঞ্জামিন স্থাপন করা গ্রন্থাগার গড়ে তোলার আদর্শে পরবর্তীকালে সমগ্র আমেরিকায় এই ধরনের অসংখ্য গ্রন্থাগার (Subscription Library) স্থাপন করা হল। পরবর্তীকালে এই আদর্শ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ল।বেঞ্জামিন নিজের জীবনকালে তাঁর সৎ কর্মের সুফল দেখে গিয়েছিলেন। তিনি নিজে লিখে রেখে গেছেন–’ এই গ্রন্থাগার গুলি আমেরিকানদের সাধারণ কথাবার্তা মান অনেকখানি উন্নত করল, এবং সাধারণ কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের বুদ্ধিমান করে তুলল। তাছাড়া এই গ্রন্থাগার গুলি সাধারণ মানুষকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলে সেই সমস্ত রক্ষা করার জন্য তাদেরকে প্রেরণা দান করল।’

এই গ্রন্থাগার বেঞ্জামিনের নিজের কতটা উপকার করেছে সেই কথা তিনি লিখে যেতে ভুলেন নি। বেঞ্জামিন তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন–’ নিয়মিত ভাবে বই পড়ে নিজের উৎকর্ষ সাধন করার জন্য এই গ্রন্থাগার আমাকে অনেকখানি সাহায্য করেছে। বাবার ইছা অনুসারে উচ্চশিক্ষা আহরণ করতে না পারার ফলে আমার যে ক্ষতি হয়েছিল সেই ক্ষতি আমি অনেক পরিমাণে পূরণ করতে পেরেছি এই গ্রন্থাগারের সাহায্যে। আমি প্রতিদিন একঘণ্টা বা দুইঘন্টা সময় আলাদাভাবে রেখেছিলাম। বই পড়াটাই ছিল আমার একমাত্র আমোদ প্রমোদ। তাস খেলে বা মজা করে আমি একটি মুহূর্তও নষ্ট করিনি।’

 সবসময় আত্মোৎকর্ষের সাধনা করা বেঞ্জামিন ঠিক এই সময় নিজের নৈতিক উৎকর্ষের জন্য আরও একটি অভিনব পরিকল্পনা হাতে নিলেন। অনেক ভেবেচিন্তে তিনি নিচে উল্লেখ করা বারোটি বিশেষ গুণ আয়ত্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন এবং সেই গুণগুলি একটি খাতায় লিপিবদ্ধ করে নিলেন।–

১) মিতাচার –শরীর ভারী হওয়ার মতো খাবার না খাওয়া, মস্তিষ্ক উত্তেজিত হওয়ার মতো মদ্যপান না করা।

২) নীরবতা– যে কথা বললে তোমার নিজের বা অন্যের কোনো উপকার হয় না, সেরকম কথা বলবে না, তুচ্ছ অর্থহীন কথা বলে সময় নষ্ট করবে না।

৩) পরিপাটিতা – যে জিনিস যেখানে রাখা উচিত ঠিক সেখানে রাখবে, যে কাজ যখন করা উচিত ঠিক তখনই করবে।

৪) সংকল্প– যে কাজ উচিত সেরকম কাজ করার জন্য সংকল্প গ্রহণ করবে; যে কাজ করার জন্য সংকল্প গ্রহণ করবে, সেই কাজ কখনও না করে থাকবে না।

৫) মিতব্যয়িতা– নিজের বা অন্যের উপকারে না আসা কোনো কাজে টাকা পয়সা খরচ করবে না, কোনো ধরনের অপচয় করবে না।

৬) অধ্যবসায়– সময় নষ্ট করবে না; সব সময় কিছু না কিছু একটা কাজে লেগে থাকবে; অপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম সমূলে বাদ দেবে।

৭) আন্তরিকতা– অন্যের অপকার করতে পারা কোনো ধরনের ছলনা বা প্রতারণার আশ্রয় নেবে না, সৎ ভাবে চিন্তা করবে; কথাও বলবে সৎভাবে চিন্তা করা অনুসারে।

৮) ন্যায়পরায়ণতা– অন্যে আঘাত পেতে পারে সেরকম কোনো কাজ করে অন্যের প্রতি অন্যায় আচরণ করবে না; ঠিক সেভাবে অন্যের উপকার করাটা যদি তোমার কর্তব্য, সেটাও না করে থাকবে না।

৯) আত্ম-সংযম– সমস্ত কথায় আতিশয্য পরিহার করে চলবে; প্রাপ্য শাস্তি বা আঘাত পেলে তার জন্য ক্রোধ বা অসন্তোষ প্রকাশ করবে না।

১০) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা– নিজের শরীর, পরা কাপড়-চোপড়, বিছানা পত্র এবং বাসস্থান সমস্ত সময়ে নিখুঁতভাবে পরিষ্কার করে রাখবে।

১১) মানসিক প্রশান্তি– ছোটো ছোটো কথায় বিরক্ত হবে না; সচরাচর হয়ে থাকা বা এড়াতে না পারা বিপদ-আপদে বিচলিত হয়ে মনের শান্তি হারাবে না।

১২) নম্রতা– যিশুখ্রিষ্ট এবং সক্রেটিসের আদর্শ অনুসরণ করে চলবে।

অনুশীলন করার জন্য বারোটি গুণের তালিকা করে নেবার পরে বেঞ্জামিন প্রতিটি গুণের অনুশীলন করার জন্য এক একটি সপ্তাহ উৎসর্গ করা ঠিক করলেন। অর্থাৎ সম্পূর্ণ একটি সপ্তাহ তিনি একটি মাত্র গুণের অনুসরণ করায় নিয়োগ করার কথা ভাবলেন। প্রথম সপ্তাহের জন্য তিনি বেছে নিলেন মিতাচার। প্রথম সপ্তাহের জন্য মিতাচার বেছে নেওয়ার কারণ এই যে, বেঞ্জামিনের মতে পান ভোজনের ক্ষেত্রে সংযম রক্ষা করে চললে মানুষের মগজ শীতল এবং পরিষ্কার হয়ে থাকে। মগজের এরকম অবস্থায় সমস্ত কথা ভালোভাবে চিন্তা করে শুদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।

 এক সপ্তাহ মিতাচারের অনুশীলন করে বেঞ্জামিন দ্বিতীয় সপ্তাহের জন্য বেছে নিলেন নীরবতার অনুশীলনী। যে মানুষ মুখে কম কথা বলে, কিন্তু কান সবসময় খোলা রাখে, সেই মানুষ অন্যের কথা শুনে বেশি করে জ্ঞান আহরণ করতে পারে। অন্যদিকে যে মানুষের অনবরত কথা বলে থাকার অভ্যাস, সে অন্যের কাছ থেকে কোনো কথাই শিখতে পারেনা। সেই জন্যই বেঞ্জামিন নীরবতা তথা কম কথা বলার উপরে বিশেষ জোর দিয়েছিলেন এবং তার গুণের তালিকায় তাকে দ্বিতীয় স্থান দিয়েছিলেন।

 তৃতীয় সপ্তাহে অনুশীলন করার জন্য তিনি বেছে নিলেন পরিপাটিতা। যে মানুষের সমস্ত জিনিস পরিপাটি করে রাখার এবং সমস্ত কাজ পরিপাটি করে করার অভ্যাস, তিনি কাজ করার জন্য এবং পড়াশোনা করার জন্য বেশি সময় বের করে নিতে পারেন।

 চতুর্থ সপ্তাহে তিনি অনুশীলন করতে শুরু করলেন সংকল্পের। এর অর্থ এটাই যে, সেই সপ্তাহের প্রতিটি দিনে তিনি যে যে কাজ করার জন্য সংকল্প নিয়েছিলেন, সম্পূর্ণ না করা পর্যন্ত তিনি কখনও ক্ষান্ত হতেন না।সংকল্পের দৃঢ়তা তার তালিকাটিতে থাকা বাকি গুলগুলি সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করার জন্য তার মনে সাহস জুগিয়ে ছিল।

 মিতব্যয়িতা এবং অধ্যবসায়ের অনুশীলন তাকে সমস্ত ধারের বোঝা থেকে মুক্ত করে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল এবং স্বাধীন করে তুলেছিল। তার ফলেই বাকি দুটি গুণ, আন্তরিকতা এবং ন্যায়পরায়ণতার অনুশীলন করাটা তার পক্ষে বেশি সহজ হয়েছিল।

 অবিরাম সাধনার দ্বারা নিজের স্বভাব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করার জন্য চেষ্টা করা মানুষ বেঞ্জামিন ছাড়াও অন্য অনেকে নিশ্চয় আছে। কিন্তু তার মতো পরিকল্পিত এবং প্রণালীবদ্ধ ভাবে এই কাজ করার উদাহরণ বড়ো বেশি নেই। নিজের চরিত্র গঠনের জন্য বেঞ্জামিন উদ্ভাবন করা এই পদ্ধতি পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথ দেখিয়েছে এবং অনুপ্রেরণা দান করেছে।


বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫

আকাশের বুক চিরে ।। অনিক ইসলাম ।। কবিতা, বাংলাদেশ, Anik Islam

আকাশের বুক চিরে

অনিক ইসলাম




নীল আকাশের বুক চিরে

রক্তাক্ত জামা পড়া ক্রন্দনরত 

শিশুর মতো ভালোবাসার আকুতি

তোমার দিনগুলো ফিরে ফিরে

তোমার পথ দেখে।

কেনো জানি আকাশ বলে

ভালোবাসা-- আমি মিথ্যা বলেছি

তোমার মৃত্যু হয়েছে!

তবুও আমি তোমাকে 

হ্যাঁ, তোমাকেই ভালোবেসেছি,

একটু সময়ের অপেক্ষা 

একদিন তোমার বুকেই ফিরবো

ঠিক যেমন দুজনে বাঁচতে চেয়েছি।

শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

আটপৌরে কবিতা, Atpoure সৌমিত্র রায়

 আটপৌরে কবিতা, Atpoure

সৌমিত্র রায়



১১) আমাদের রাজপথ


    জ্যাম। ঘাম। দুপুর। 

           কলকাতা

পথচারীর পথ এই রাজপথ


১২) মেট্রো রেল, যাত্রাপথে 


     মেট্রো। সিট। ঠাণ্ডা।

            বাতানুকূল

এই আরাম। আনন্দের পথ।


১৩) জীবন, সময়ের কোলাজ 


    অতীত। বর্তমান। স্মৃতি।

                 জীবন 

টুকরো টুকরো সময়ের কোলাজ


১৪) যোগ শৃঙ্খল হোন 

শান্ত হোন। আত্মা।

       পরমাত্মা

যুক্ত হয়েছেন। আনন্দ নাও।


১৫) স্মরণে 

  স্মরণে। জাগে শক্তি।

            আত্মা

তুমি নিজেকে স্মরণ করো

সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

ঐতিহাসিক ভাষা-শহিদ দিবস, 19 May ।।

 ঐতিহাসিক ভাষা-শহিদ দিবস



আজ ঐতিহাসিক ভাষা-শহিদ দিবস। ১৯৬১ সালে ১৯-এ মে আসামের বরাক উপত্যকার শিলচরে বাংলা ভাষা রক্ষা করার আন্দোলনে ১১ জন শহিদ হয়েছিলেন । কমলা ভট্টাচার্য শহিদ হয়েছিলেন ৷ বিশ্বের প্রথম মহিলা ভাষাশহিদ তিনি । শহিদ হয়েছিলেন হিতেশ বিশ্বাস কানাইলাল নিয়োগী সুনীল সরকার সুকোমল পুরকায়স্থ তরণী দেবনাথ শচীন্দ্র পাল কুমুদরঞ্জন দাস সত্যেন্দ্র দেব বীরেন্দ্র সূত্রধর চণ্ডীচরণ সূত্রধর । এই অমর শহিদদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি ৷ ৷৷ শান্তি ৷৷

সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

আটপৌরে কবিতা, Atpoure সৌমিত্র রায়

 আটপৌরে কবিতা, Atpoure

সৌমিত্র রায়



৬) আকাশের দৃশ্য 


জানালা। দৃশ্য। অনুভুতি।

           আকাশ 

পৃথিবীর চিরন্তন ছন্দময় সম্পর্ক


৭) বৈশাখী সম্পর্ক 


হাওয়ায় দুলছে গাছ

          বৈশাখ 

কখনও মৃদুমন্দ, কখনও ঝোড়ো।


৮) দুঃখিত !


   দুঃখ সৃজন করেছো

             নিজেই 

কারণ: হয়তো কিছু চেয়েছিলে


৯) জীবনালেখ্য


শূন্যের ভেতর। শক্তি।

           শক্তিই

দৃশ্যের প্রাণ। জীবন। আলেখ্য। 


১০) প্রকৃতি পূজা


তুলসীমণ্ডপ। ঝারা। পূজা।

           জীববৈচিত্র্য 

ছোলা-গুড়। জল। উপাসনা। প্রাণের।

রবিবার, ১১ মে, ২০২৫

আটপৌরে কবিতা ।। সৌমিত্র রায়, Atpoure

 আটপৌরে কবিতা, Atpoure

সৌমিত্র রায়



১) ওড়াউড়ি, আনন্দে


  মেঘ। পাখি। পতঙ্গ

         ) কবিমন (

যে যার উচ্চতায় ওড়ে



২) জীবন; অনন্ত; চৈতন্য 


ময়ূরপুচ্ছ। ইশারা। ক্লোনিং

          > জনন >

অযৌন। চৈতন্য প্রেম- অনন্ত।



৩) ছন্দ; রস; আটপৌরে 


  প্রেসার কুকার। সিটি।

       # ছান্দসিক #

ডাইনিং টেবিল। অফিস। ট্রেন।


৪) আত্মকথনে মাতি


ফিসফাস। খুনসুটি। আলাপন

             < স্ব-চ্যাট >

নিজে। প্রকৃতির সাথে। আনন্দধ্বনি।



৫) অদৃশ্য সংযোগ 


গ্রহ। নক্ষত্র। পদার্থ

       <প্রাণ>

আসল # সংযোগ # সব # অদৃশ্য

রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

বসন্ত ।। দীপালি মাইতি ।। কবিতা, Dipali Maity

বসন্ত

দীপালি মাইতি



শরীরে ফুটেছে 

আগুন রঙের 

পলাশ শিমুল 


বসন্ত এলে দুলিয়ে 

দিয়ে যায় হৃদয়

আনমনে


সংসারে হারিয়ে যায় 

সুখ দুঃখ 

কপূর্রের মতো ঝুলে

থাকি বাতাসে

কবি দাউদ হায়দার প্রয়াত ।। নিজস্ব সংবাদদাতা, Daud Haidar

কবি দাউদ হায়দার প্রয়াত

নিজস্ব সংবাদদাতা


প্রখ্যাত কবি ও সাংবাদিক দাউদ হায়দার প্রয়াত হয়েছেন।বাংলাদেশে জন্ম স্বনামধন্য কবি নির্বাসিত ছিলেন ১৯৭৪ সাল থেকে। তাঁর কবিতায় গৌতম বুদ্ধ, যীশু খ্রিষ্ট ও হজরত মুহাম্মদ সম্পর্কে  সমালোচনাধর্মী বিষয় ছিল। বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি প্রদর্শন হয়নি, কিন্তু মুসলমান সম্প্রদায়ের আপত্তির কারণে তিনি আর বাংলাদেশে থাকতে পারেন নি। এরপর থেকে তিনি ছিলেন নির্বাসিত। কবি লেখক মুক্তচিন্তকদের নির্বাসনে পাঠানোতে বাংলাদেশের একটা অন্ধকার দিক সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত। কবি দাউদ হায়দার ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি। তিনি সুদীর্ঘকাল জার্মানিতে কাটিয়েছেন। কবি প্রয়াণে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পৃথিবীর নানান দেশের কবিসমাজ।

হোমেন বরগোহাঞি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস (Basudeb Das)

 বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন

হোমেন বরগোহাঞি

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস (Basudeb Das)





সাত

(৭)

 

বেঞ্জামিনের ফিলাডেলফিয়ায় আসার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল উইলিয়াম ব্রেডফোর্ডের ছাপাশালায় চাকরির খোঁজে। কিন্তু বেঞ্জামিন এন্ট্রু বেটফোর্ডকে তার ছাপাশালায় সাক্ষাৎ করে জানতে পারলেন যে তার ছাপাশালাতে সেই সময় কোনো পদ খালি ছিল না। অবশ্য তিনি বেঞ্জামিনকে সম্পূর্ণ নিরাশ করলেন না। তিনি বেঞ্জামিনকে খবর দিলেন যে কাছেই কেইমার নামের একজন ভদ্রলোকের একটি ছাপাশালা আছে। বেঞ্জামিন সেখানে চাকরির জন্য চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি সেখানেও তিনি চাকরি না পান, তাহলে অন্য কোথাও চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বেঞ্জামিন তাঁর সঙ্গে থেকে ছাপাখানার ছোটোখাটো কাজগুলি করে তাকে সাহায্য করতে পারবেন।

কিন্তু বেঞ্জামিনের ভাগ্য ভালো যে কেইমারের কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বেঞ্জামিনকে নিজের ছাপাশালায় নিযুক্তি দিলেন। 

সেই সময়ে পেনসিলভিনিয়ার গভর্নর ছিলেন স্যার উইলিয়াম কীথ।(ফিলাডেলফিয়া পেনসিলভিনিয়া রাজ্যের একটি প্রধান শহর)। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তার কানে গিয়ে পৌঁছালো যে বেঞ্জামিন নামের একজন যুবক পায়ে হেঁটে নিউইয়র্ক থেকে ফিলাডেলফিয়ায় এসেছে।যুবকটিকে দেখার জন্য তিনি নিজে একদিন কেইমারের ছাপাশালায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। বেঞ্জামিনের সরস এবং বুদ্ধি-দীপ্ত কথাবার্তা গভর্নর কে খুব মুগ্ধ করল। তিনি বেঞ্জামিনকে নিজের একটি ছাপাশালা  স্থাপন করার জন্য উপদেশ দিলেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্যও তিনি প্রস্তুত ছিলেন ।কিন্তু ছাপাশালা স্থাপন করার আগে একবার লন্ডন যাবার জন্য তিনি বেঞ্জামিনকে পরামর্শ দিলেন।লন্ডনে তিনি ছাপাশালার নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে পারবেন এবং পুস্তক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।

কিন্তু স্যার উইলিয়াম কীথ প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় যতটা উদার ছিলেন, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার প্রতি তাঁর আগ্রহ বা মনোযোগ ততটা ছিল না। তিনি বেঞ্জামিনকে কথা দিয়েছিলেন যে তিনি লন্ডনের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বেঞ্জামিনের পরিচয় জানিয়ে  একটা চিঠি লিখে দেবেন।এবং বেঞ্জামিন চিঠি গুলি সঙ্গে নিয়ে যাবে।গভর্নরের কয়েকজন বন্ধু ছাপাশালার যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বেঞ্জামিনকে কিছু টাকা ধরে দেবেন। কিন্তু গভর্নর নিজের কথামতো কাজ না করায় বেঞ্জামিনকে কোনো পরিচয়পত্র ছাড়াই লন্ডনে যেতে হল। উচ্চ পদে থাকা মানুষ কথা দিয়ে কথা না রাখার এই ধরনের আরও কয়েকটি তিক্ত অভিজ্ঞতা পরবর্তী কয়েক বছরে হল। ফলে তিনি উচ্চ পদে থাকা ক্ষমতাশালী মানুষের ছলনা ভরা কথায় বিশ্বাস করলেন না। 

১৭২৪ সনের ২৪ ডিসেম্বর বেঞ্জামিন লন্ডনে উপস্থিত হলেন। তখন তার হাতে ধন ছিল মাত্র বারো পাউন্ড। এত কম টাকায় ছাপাশালার যন্ত্রপাতি কেনার আশা বাদ দিয়ে বেঞ্জামিন চাকরি খুঁজতে লাগলেন।তাকে বেশি দিন বেকার হয়ে থাকতে হল না। লন্ডনের বার্থলোমিও ক্লজ নামের একটি জায়গায় সেমুয়েল পামার নামের একজন মানুষের একটি বড়োসড়ো এবং বিখ্যাত ছাপাশালা ছিল। নিজের যোগ্যতা বলে বেঞ্জামিন সেখানে চাকরি পেলেন। বেঞ্জামিন অতিশয় পরিশ্রমী ছিলেন। ছাপাশালায় কাজ করে তিনি যথেষ্ট টাকা পয়সা রোজগার করেছিলেন। ছাপাশলায় কাজ করে তিনি যথেষ্ট ধন রোজগার করেছিলেন। কিন্তু প্রথম অবস্থায় তিনি সঞ্চয়ের দিকে মন না দিয়ে লন্ডনের বিখ্যাত নাট্যশালা গুলিতে নাট্যাভিনয় দেখে এবং অন্যান্য আমোদ প্রমোদে উপার্জনের বেশিরভাগ টাকা খরচ করতেন। সেটাও ছিল তাঁর আত্ম-শিক্ষার একটি অংশ।

কিন্তু বেঞ্জামিন তাঁর অবসর সময়টুকু কেবল নাট্যাভিনয় দেখার জন্যই খরচ করতেন না। বেঞ্জামিন লন্ডনের যে বাড়িটাতে ছিলেন, সেই বাড়িটার প্রায় গায়ে লেগে থাকা একটি বইয়ের দোকান ছিল। দোকানটিতে অনেক পুরোনো বইপত্র ছিল। বেঞ্জামিন সামান্য দক্ষিণার বিনিময়ে সেই বইগুলি পড়ার জন্য দোকানের কাছ থেকে অনুমতি আদায় করলেন। এভাবে তিনি দোকানটার বেশিরভাগ বই পড়ে শেষ করে নিজের জ্ঞানের ভান্ডার আগের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে তুললেন। 

সেমুয়েল পামারের ছাপাশালায় প্রায় এক বছর কাজ করার পরে বেঞ্জামিন জেমস ওয়ার্ড নামের অন্য একজন মানুষের ছাপাশলায় কাজ পেলেন। এই ছাপার শালাটা পামারের ছাপা শালার চেয়ে  অনেক বড়ো ছিল। পামারের ছাপা শালায় বেঞ্জামিন প্রধানত কম্পোজিঙের কাজ করতেন। পরিশ্রমের ক্লান্তি দূর করার জন্য তারা প্রচুর পরিমাণে বিয়ার নামের এক ধরনের লঘু সূরা জাতীয় পানীয় পান করতেন। কিন্তু বেঞ্জামিন দিনরাত এই ধরনের সঙ্গে বসবাস করেও কেবল বিশুদ্ধ খাওয়ার জল ছাড়া কোনো কিছু খেতেন না। বিয়ার খাওয়া ইংরাজকর্মীরা বেঞ্জামিনকে’জল পান করা আমেরিকান’বলে ক্ষ্যাপাতেন; কিন্তু তারা একটা কথা দেখে আশ্চর্য হয়েছিল যে জল খাওয়া আমেরিকান ঠিক তাদের চেয়ে শারীরিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। ছাপাশালার টাইপের ভারী পাচিগুলি সিঁড়িবে অনায়াসে নিচ থেকে উপরে নিয়ে যেতে হলে ইংরেজ কর্মীরা দুটি হাতে একটি মাত্র পাঁচই ভার নিয়ে যেত, কিন্তু বেঞ্জামিন দুটো হচ্ছে দুটো নিয়ে যেত।

বেঞ্জামিন ইংল্যান্ডে আসার সময় জাহাজে টমাস ডেনহাম নামের একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয়েছিল। ডেনহাম একদিন বেঞ্জামিনের কাছে এসে প্রস্তাব দিল যে তিনি ফিলাডেলফিয়ায় ফিরে গিয়ে সেখানে গ্রাহকের প্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রী এক জায়গায় পাওয়ার মতো করে একটি বড়ো দোকান খুলতে চান এবং বেঞ্জামিনকে তিনি সেই দোকানের হিসেব রক্ষকের দায়িত্ব দিতে চান। বেঞ্জামিন প্রস্তাবটিতে সম্মত হলেন। ১৭২৬ সনের জুলাই মাসে তাঁরা লন্ডন ত্যাগ করে ফিলাডেলফিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। 

লন্ডনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা তার ব্যক্তিত্বের বিকাশে অনেকখানি সাহায্য করল কেবল একটি কথায় তার মনে কিছুটা অতৃপ্তি থেকে গেল। বেঞ্জামিন লন্ডনে থাকার সময় বিশ্ব বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক স্যার নিউটন জীবিত ছিলেন। তাকে একবার সশরীরে দেখার জন্য বেঞ্জামিনের খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছা পূর্ণ হল না।

ফিলাডেলফিয়ায় ফিরে এসে টমাস ডেনহাম তার প্রস্তাবিত দোকানটি আরম্ভ করলেন এবং আগের প্রতিশ্রুতি মতো তিনি বেঞ্জামিনকে হিসেবে রক্ষকের চাকরি দিলেন। কিন্তু দোকান খোলার কয়েক মাস পরে ডেনহামের হঠাৎ একদিন মৃত্যু হল। বেঞ্জামিন পুনরায় তার পূর্বের নিয়োগকর্তা কেইমারের ছাপাশালায় চাকরি নিতে বাধ্য হলেন। ১৭৩০ সনের পহেলা সেপ্টেম্বর তিনি দেবরারীভ নামের একজন মহিলাকে বিয়ে করে সংসার জীবনে প্রবেশ করলেন। 

কেইমারের ছাপাশালায় একজন অধীনস্থ কর্মচারী হিসেবে বেঞ্জামিনকে বেশি দিন কাজ করতে হল না। নিজের একটি ছাপা সাদা স্থাপন করার সংকল্প তিনি মনে মনে বহুদিন ধরে পোষণ করে আসছিলেন। সেই উদ্দেশ্যে লন্ডন ছাড়ার আগেই তিনি ছাপাশ খেলার নতুন টাইপ কেনার ব্যবস্থা করে এসেছিলেন। কেইমারের ছাপাশালায় কিছুদিন কাজ করার পরে লন্ডন থেকে নতুন টাইপ গুলি এসে গেল। ব্যন জামিন বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে নিজের ছাপাশালা আরম্ভ করলেন।

১২ বছর বয়সে ছাপাশালার শিক্ষানবিশ হিসেবে জীবন আরম্ভ করা পরিশ্রমী এবং অধ্যবসায়ী বেঞ্জামিন ছাপাশালার যাবতীয় বিদ্যা অতি নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করেছিলেন। কেইমারের ছাপাশালায় যাবতীয় বিদ্যা অতি নিখুঁতভাবে আয়ত্ব করেছিলেন। তাছাড়া কেইমারের ছাপাশালায় কাজ করার সময় শহরের প্রতিটি গণ্যমান্য ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। বেঞ্জামিন নিজেই আত্মজীবনীতে লিখে রেখে গেছেন যে ছাপাশালার মালিক কেইমারের তুলনায় তার অধ্যয়নের পরিধি ছিল বিশাল; ফলে মানুষ ছাপাশালার মালিকের চেয়ে তার সঙ্গে কথা বলে বেশি খুশি হতেন। বিভিন্ন কাজে ছাপাশালায় আসা মানুষেরা বেঞ্জামিনের সরস বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে উপযাচক হয়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলেন। তাঁরা বেঞ্জামিনকে নিজের বাড়িতে আহার করার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন এবং অন্যান্য বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এভাবেই কেইমারের ছাপাশালায় অধীনস্থ কর্মচারী হয়ে থাকার সময়েই ফিলাডেলফিয়ায় বেঞ্জামিনের গুণমুগ্ধ একটি বড়ো বন্ধু চক্র গড়ে উঠেছিল। ফলে তিনি নিজে যখন ছাপা শালার ব্যবসা আরম্ভ করলেন, তখন অতি কম সময়ের ভেতরে তার ব্যাবসায় দ্রুত উন্নতি হতে লাগল।

বেঞ্জামিনের স্বভাবের অন্য কিছু গুণাবলিও কর্মজীবনে কৃতকার্য হওয়ায় তাকে সাহায্য করেছিল। প্রচলিত অর্থে বেঞ্জামিনকে ধর্মভিরু মানুষ বলে বলা যায় না, কারণ ধর্মীয় আচরণ অনুষ্ঠান যান্ত্রিকভাবে পালন করার প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ছিল না। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে কিছু নীতি এবং আদর্শ মেনে চলার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দান করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত হওয়া উচিত  সত্য ,আন্তরিকতা এবং ন্যায় পরায়ণতা। এই কয়েকটি কথার উপরে তিনি এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে তিনি একটি সংকল্পের রূপে কথাগুলি একটি কাগজে লিখে নিয়েছিলেন এবং দৈনন্দিন জীবনে সেই সংকল্প নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতেন। সেই কাগজটি মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তার ডায়েরিতে ছিল।

নীল টিপ ।। এ কে সরকার শাওন ।। কবি

নীল টিপ

এ কে সরকার শাওন 




অস্তগামী গোল রক্ত-লাল সূর্যটাকে

ডান হাতের তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা

চেপে ধরে নীল টিপ বানিয়ে;

আমার কপালে পড়িয়ে দিলে

সেদিন শেষ বিকালে!


আমি লজ্জালাল রাঙ্গাবতী হয়ে

সুখের বন্যায় ভেসে

দু'চোখ বন্ধ করে

অনুভব করলাম সর্বসুখ-স্বর্গসুখ।


সেই থেকে আমার

আমিত্ব তোমাতে বিলীণ,

আমি তোমাতে খুঁজি সবসুখ

যেদিকে তাকাই তুমি আর তুমি

সর্বত্র তোমার মুখ!

আকাশের চেয়েও বিশাল তুমি

বিশাল তোমার বুক!

শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ৬ ।। হোমেন বরগোহাঞি ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস (Basudeb Das)

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন

হোমেন বরগোহাঞি

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস (Basudeb Das)





ছয়

সাংবোস্টন থেকে ফিলাডেলফিয়ায়

(৬)

 বেঞ্জামিন যদিও জেমসের নিজের ভাই ছিল তথাপি জেমস ভাইয়ের সঙ্গে নিজের অধীনস্থ কর্মচারীর মতো ব্যবহার করতেন। ছাপাখানার মালিক হিসেবে তিনি অন্যান্য কর্মচারীদের কাছ থেকে যতটুকু কাজ এবং যে ধরনের বাধ্যতা দাবি করতেন ঠিক ততটাই তিনি দাবি করেছিলেন নিজের ভাইয়ের কাছ থেকেও। বেঞ্জামিন এই কথাটা মোটেই পছন্দ করেন নি। জেমস তাকে করতে দেওয়া কতগুলি কাজ তিনি অতিশয় অপমানজনক বলে মনে করেছিলেন।ফলে দাদা-ভাই দুজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটির সৃষ্টি হত। জেমস কিছুটা রাগী প্রকৃতির লোক ছিলেন।মাঝে মাঝে তিনি ভাইকে মারধরও করতেন।পরিস্থিতি ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠায় বেঞ্জামিন ছাপাখানার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবলেন। কিন্তু সেটা করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না, কারণ একুশ বছর না হওয়া পর্যন্ত তিনি দাদার ছাপাখানায় চাকরি করতে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন।

 কিন্তু ঘটনাক্রমে বেঞ্জামিনের মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার একটা সুযোগ এসে গেল।The New England Courant এর কোনো একটি সংখ্যায় বোস্টনের বিধান পরিষদকে সমালোচনা করে লেখা একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। কাগজটির সম্পাদক জেমস প্রবন্ধ লেখকটির নাম প্রকাশ করতে রাজি না হওয়ায় তাকে বিধানসভার অধ্যক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী এক মাসের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হল। জেমসের অনুপস্থিতে বেঞ্জামিনকেই অস্থায়ীভাবে কাগজটি চালাতে হল। বেঞ্জামিন দাদার নানা কথায় অসন্তুষ্ট ছিল যদিও বোস্টনের শাসকরা খবরের কাগজের একজন সম্পাদককে এভাবে নিগ্রহ করা কার্যকেও সমর্থন করতে পারেননি। সেই জন্য কাগজটির সম্পাদনা করার অস্থায়ী দায়িত্ব গ্রহণ করেই বেঞ্জামিন শাসকদের আক্রমণ করে লেখা প্রবন্ধ প্রকাশ করতে লাগলেন। এর আগেও তিনি শ্রীমতি সাইলেন্স ডগ উডের ছদ্মনামে শাসকদের স্বৈরাচার এবং আতিশয্যের সমালোচনা করে প্রবন্ধ লিখেছিলেন।

 এক মাস পরে জেমস জেল থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন; কিন্তু বিধানসভা এই বলে হুকুম জারি করল যে জেমস ফ্রাঙ্কলিন The New England Courant নামের খবরের কাগজটা প্রকাশ করতে পারবেন না। এইরকম পরিস্থিতিতে কাগজটি বেঞ্জামিনের নামে প্রকাশ করা ছাড়া জেমসের অন্য কোনো উপায় ছিল না। এই উদ্দেশ্যে জেমস এবং বেঞ্জামিনের মধ্যে থাকা চুক্তিপত্রটি নতুন করে করতে হল, কারণ পুরনো চুক্তি-পত্র মতে বেঞ্জামিন একজন মাত্র শিক্ষানবিশ ছিলেন আর জেমস ছিলেন প্রকাশক। নতুন করে কোনো অভিযোগে যদি কাগজটি পুনরায় বিচারের সম্মুখীন হতে হয় এবং খানা তল্লাশির ফলে পুরোনো চুক্তিপত্রটা বিচারকের হাতে পড়ে, তাহলে বিধান সভার আদেশ উপেক্ষা করে জেমসই কাগজটির প্রকাশক হয়ে থাকা বলে প্রমাণিত হবে।

 বেঞ্জামিন কাগজটির প্রকাশক তথা স্বত্বাধিকারী হল সত্যি, কিন্তু তখনও দাদা তার ওপরে খবরদারি চালাতে ছাড়ল না। দুজনের মধ্যেই আগের মতো ঝগড়াঝাটি চড় থাপ্পড় চলতে থাকল। কিন্তু এখন যেহেতু বেঞ্জামিন কাগজটির মালিক, অন্তত নামে, সেই জন্য তিনি আগের মতো দাদার শাসন মেনে চলল না। ফলে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য বেড়ে চলল। অবশ্য এখানে বেঞ্জামিনের মহত্ত্ব যে দাদার সঙ্গে চলতে থাকা এই মনমালিন্যের জন্য তিনি কেবল দাদাকে দোষ দেননি। সব সময় আত্ম-সমালোচনা করে নিজের স্বভাব চরিত্র উন্নত করতে বেঞ্জামিন নিজেও আত্মজীবনীতে স্বীকার করেছেন যে দাদা তার ওপরে সব সময় ক্রুদ্ধ হয়ে থাকার জন্য তিনি নিজের স্বভাবকেও কিছু পরিমাণে দায়ী করেছেন।

 সে যাই হোক না কেন, বেঞ্জামিনের প্রতি দাদার দুর্ব্যবহার ক্রমশ এতটা বেড়ে চলল যে তা অবশেষে সহ্যের অতীত হল। তিনি ছাপাখানার চাকরি ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন। জেমস যখন জানতে পারল যে ভাই তার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার জন্য মনস্থির করে নিয়েছে তখন তিনি বোস্টনের ছাপাখানার মালিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেঞ্জামিনকে তাদের ছাপাখানায় চাকরি না দিতে অনুরোধ করলেন। বেঞ্জামিন তখন বুঝতে পারল যে বোস্টন ত্যাগ করে ভাগ্যের অন্বেষণে অন্য কোনো শহরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো গতি নেই।

 তিনি নিউইয়র্কে যাবার কথা ভাবলেন। নিজের বইয়ের সংগ্রহ থেকে কিছু বই বিক্রি করে জাহাজের ভাড়ার জন্য টাকা যোগাড় করলেন। তারপরে তিনি একদিন নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। তখন তার বয়স সতেরো বছর। ইতিমধ্যে তিনি ছাপাখানা পরিচালনার বিদ্যা সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করে নিয়েছেন। সেই কম বয়সে তিনি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের চেয়ে বেশি বই পড়ে ফেলেছেন। তাই ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি যখন বাড়ি ছেড়ে বের হলেন, তখন তার একমাত্র মূলধন ছিল গভীর আত্ম-বিশ্বাস।

 সমুদ্রপথে বোস্টন থেকে নিউইয়র্কের দূরত্ব প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার। তিন দিনে সেই পথ অতিক্রম করে বেঞ্জামিন যখন নিউইয়র্কে পা রাখলেন, তখন তার পকেট প্রায় খালি; অন্যদিকে কারও কাছ থেকে সাহায্য বা আশ্রয় চাওয়ার মতো পরিচিত কেউ নিউইয়র্কে ছিল না।

 যেহেতু বেঞ্জামিন একমাত্র ছাপাখানার কাজই ভালোভাবে জানেন, সেই জন্য তিনি নিউইয়র্কে একটা ছাপাখানা খুঁজে বের করলেন। ছাপাখানাটার মালিকের নাম উইলিয়াম ব্রেডফোর্ড। ব্রেডফোর্ডের ছাপাখানায় তখন কোনো পদ খালি ছিল না। কিন্তু তিনি বেঞ্জামিনকে চাকরি দিতে না পারলেও একটা আশার খবর জানালেন। নিউইয়র্ক থেকে একশো ষাট কিলোমিটার দূরে ফিলাডেলফিয়া শহরে ব্রেডফোর্ডের এক ছেলে থাকে। সে একটি ছাপাখানার মালিক। কিন্তু তার প্রধান সহকারীর কিছুদিন আগে মৃত্যু হয়েছে। বেঞ্জামিনকে ব্রেডফোর্ড বললেন যে তিনি যদি ফিলাডেলফিয়ায় যান, তাহলে ব্রেডফোর্ডের ছেলের ছাপাখানায় তিনি একটা চাকরি পেলেও পেতে পারেন।

 বেঞ্জামিন ফিলাডেলফিয়ায় নৌকায় যাবেন বলে স্থির করলেন। কিন্তু তার এবারের ভ্রমন ছিল অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ। প্রচন্ড তুফান তার নৌকাটিকে পথচ্যুত করে লং আইল্যান্ডের দিকে ঠেলে দিল। লং আইল্যান্ডের কাছে গিয়ে তিনি দেখলেন–শিলাময় উঁচু খাড়াইতে সাগরের ফেনিল ঢেউ গুলি আছড়ে পড়ছে; সেখানে নৌকা ভিড়ানোর কোনো উপায় নেই। এদিকে মুষলধারে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা নৌকায় বসে রইল। নৌকার ছইয়ের অসংখ্য ফুটো দিয়ে বৃষ্টি পড়ে তাদেরকে কাক ভেজা করে তুলল। ক্ষুধা- তৃষ্ণা তাদেরকে আধ-মরা করে ফেলল, কারণ প্রায় ত্রিশ ঘন্টা তাদের পেটে একটা দানাও পড়েনি। বিকেলের দিকে বেঞ্জামিনের তীব্র কম্পণের সঙ্গে জ্বর এল।

 রাতের দিকে জ্বর কিছুটা কমল। অন্য একটি পথ দিয়ে নৌকা পারে লাগিয়ে বেঞ্জামিন সেখান থেকে আশি কিলোমিটার দূরের বার্লিংটন নামের শহরে পায়ে হেঁটে যাত্রা করলেন।বার্লিংটন থেকে ফিলাডেলফিয়া নৌকায় যাওয়া যায় বলে তিনি জানতে পেরেছিলেন।

 বার্লিংটন যাওয়া পথটাও খুব একটা সুখের ছিল না। সারাদিন আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরে পড়ছিল।ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে বেঞ্জামিন আধমরা হয়ে পড়েছিলেন।তার চেহারা এরকম হয়েছিল যে লোকেরা তাকে কারও বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা চাকর বলে সন্দেহ করেছিল। এভাবে অশেষ দুঃখ কষ্ট সহ্য করে তিনি একদিন বারলিংটনে পৌছালেন এবং সেখান থেকে ফিলাডেলফিয়া যাওয়া নৌকায় উঠে তিনি অবশেষে তার গন্তব্যস্থল অর্থাৎ ফিলাডেলফিয়ায় পা রাখলেন।

 ক্ষুধায় আধমরা হয়ে এবং হাতে একটিও কড়ি না থাকা অবস্থায় ফিলাডেলফিয়ায় এসে উপস্থিত হওয়ার দিন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কি কল্পনা করতে পেরেছিলেন যে সেই দরিদ্র এবং অজ্ঞাত কুলশীল ভাগ্যান্বেষী যুবক শহরে প্রথম পা দেওয়ার ঘটনাটিকে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য ভবিষ্যতে ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তার বিশাল মূর্তি স্থাপন করা হবে?


বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

Soumyadip Roy: The Rising Star of India's Literary and Cinematic World, Dr. Dipali Maity , Literature, Cinema,

Soumyadip Roy: The Rising Star of India's Literary and Cinematic World

Dr. Dipali Maity 



Born on August 31, 2007, in the quiet town of Ghatal, West Bengal, Soumyadip Roy is quickly making a name for himself as one of India's youngest poets, actors, and writers. At just 17 years old, his achievements have already made him a remarkable figure in the world of literature and cinema, proving that age is no barrier to talent and creativity.

A Poet Beyond His Years

Soumyadip's journey into the world of literature began at a young age. By the age of 9, he had already written a collection of rhymes, which culminated in the release of his debut book,Ultopalta. This book, which translates to Upside Down, is a unique compilation of poems that reflect his early perspective on the world. The rhymes are both playful and insightful, a testament to his innate ability to craft language in a way that resonates with readers of all ages.

His early literary accomplishments caught the attention of several media outlets, including Ananda Bazar Patrika, one of India's leading newspapers. The newspaper recognized him as one of the youngest poets to publish a book at such a tender age, a milestone that many aspiring writers only dream of reaching.

In addition to his book, Soumyadip's poetry has appeared in numerous magazines, further establishing him as a young literary prodigy. His work continues to be recognized for its depth and ability to engage readers, making him a prominent voice in contemporary Indian poetry.

Awards and Recognitions

Soumyadip's literary talents have earned him several prestigious awards and honors. He was awarded at the West Midnapore Book Fair 2021, where his contribution to literature was recognized. Additionally, Soumyadip has received recognition from many magazines and literary programs held in Kolkata and Midnapore, further affirming his growing reputation as a young poet and writer of note.


His work has also been acknowledged at i-Fest, a program organized by i-Society, a well-known book publishing brand, where he was celebrated for his creative achievements. Soumyadip has been honored at various events, including Medinipur Kobita Utsav,

Dursanket (held in Kolkata), and numerous other local literary festivals in the region, where his contributions to the literary world continue to inspire both young and seasoned artists alike.

A Passion for Acting

While his literary work has earned him accolades, Soumyadip is also a budding actor with a passion for cinema. He has already made significant strides in the world of short films, having played lead roles in several projects. His natural flair for acting and his ability to immerse himself in diverse characters have made him a standout talent in the independent film scene.

Not only confined to short films, Soumyadip has also appeared in full-length feature films, where his performances have been noted for their maturity and emotional depth. His commitment to the craft of acting has made him a rising star in the Indian film industry, with many predicting a bright future for him on the big screen.

Education and Training



Despite his growing fame in both the literary and acting worlds, Soumyadip remains dedicated to his education. He currently attends Nava Nalanda High School in Kolkata, where he skillfully balances his studies with his artistic pursuits. His commitment to his academic work is a testament to his discipline and desire for personal growth, even as he continues to follow his passion for writing and acting.

Soumyadip is also focused on developing his acting skills. He participated in a prestigious acting workshop organized by the Film and Television Institute of India (FTII) in Pune, an institute renowned for producing some of the best actors in the country. This workshop provided him with valuable insights into the world of acting, further refining his craft and expanding his horizons as an artist.

A Bright Future Ahead

Soumyadip Roy's journey is just beginning, and the future looks incredibly bright for this young talent. With his passion for both literature and cinema, he is poised to become one of the most prominent names in India's creative industries. Whether through the written word or on the silver screen, Soumyadip's work continues to inspire and captivate, proving that age is no barrier when it comes to creativity and success.

As he continues to grow and evolve as both an artist and an individual, we can only imagine the heights Soumyadip will reach in the coming years. One thing is certain: he is a force to be reckoned with, and the world will be watching as his journey unfolds.

রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫

ইচ্ছে ।। দীপালি মাইতি ।। কবিতা, Dipali Maity

ইচ্ছে 

দীপালি মাইতি



বাতাসে 

এদিকে ওদিকে যায় 


রোদ-বৃষ্টিতে

হারায়

প্রসিদ্ধ ঠিকানা 



এখন সূর্যের দিকে 

মুখ তুলে দাঁড়িয়ে 

শুধুমাত্র 

অনন্ত প্রশান্তির খোঁজে

শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন হোমেন বরগোহাঞি মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস, Basudeb Das

 বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন

হোমেন বরগোহাঞি

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস





পাঁচ 

বেঞ্জামিনের আত্মশিক্ষার শুরু

 সাংবাদিক বেঞ্জামিন

 বেঞ্জামিন যখন তার দাদার ছাপাশালায় শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন তখন তার বয়স ছিল বারো বছর ।জেমস অর্থাৎ বেঞ্জামিনের দাদা নিজের ছাপাশালা থেকে ‘বোস্টন গেজেট’ নামের একটি খবরের কাগজ প্রকাশ করতেন। কাগজটা ভালো চলল না। জেমস সেটি অন্যকে বিক্রি করে দিয়ে The New England Courant নামের একটি নতুন খবরের কাগজ প্রকাশ করলেন। সেই কাগজে বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ লিখতে শুরু করে বেঞ্জামিন ১৬ বছর বয়সে নিজের সাংবাদিক জীবনের সূত্রপাত করেন।

 কিন্তু বেঞ্জামিনকে প্রবন্ধ গুলি লিখতে হয়েছিল ছদ্মনামে।নিজের নামে লিখলে দাদা তার লেখা না ছাপাতে পারে বলে তার মনে শঙ্কা ছিল।ছদ্মনাম হিসেবে তিনি বেছে নিলেন একজন মহিলার নাম— শ্রীমতি সাইলেন্স ডগ উদ।শ্রীমতি ডগ উদ লিখতে শুরু করে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন এই বলে —‘আমি অনাচারের শত্রু এবং সদাচারের বন্ধু।’ ছদ্মনামে বেঞ্জামিন যে সমস্ত প্রবন্ধ এবং ব্যঙ্গ রচনা লিখেছিলেন সেই গুলিতে তিনি মানুষকে নানা নৈতিক উপদেশ দেবার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ধরনের সামাজিক সমস্যা আলোচনা করে সেইগুলির সমাধানের পথ দেখাতে চেষ্টা করেছিলেন।বেঞ্জামিন তাঁর সময়ের তুলনায় যথেষ্ট অগ্রণী ছিলেন ।সেই ষোলো বছরের ছেলেটি তখনই ধর্মীয় ভণ্ডামির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন এবং নারী শিক্ষার সপক্ষে উকালতি করেছিলেন। তাঁর সমালোচনা মূলক ব্যঙ্গ রচনা গুলি পড়ে সমাজের মুখ্য ব্যক্তিরা ক্রোধে জ্বলে উঠেছিলেন; কিন্তু অন্যদিকে সেই রচনা গুলি The New England Courant কে করে তুলেছিল বোস্টনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খবরের কাগজ।

  বেঞ্জমিনের এই বয়সের আরও একটি বিশেষ ঘটনার কথা এইখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, কারণ ঘটনাটি তার মানসিকতা বুঝতে আমাদের সাহায্য করবে।

  জ্ঞানের সন্ধানে বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়াটা ছিল বেঞ্জামিনের নেশা বা অভ্যাস। প্রায় ষোলো বছর বয়সে তিনি কোনো একজন ট্রায়ন নামের লেখক লেখা একটি বই পড়ার সুযোগ পেলেন। বইটিতে আমিষ আহারের চেয়ে নিরামিষ আহারকে স্বাস্থ্যের জন্য বেশি হিতকর বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। লেখকের যুক্তিতে বিশ্বাস করে বেঞ্জামিন আমিষ আহার ত্যাগ করে নিরামিষাশী হওয়া স্থির করলেন। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে একটি সমস্যা দেখা দিল। তার দাদা অর্থাৎ ছাপাশালার মালিক জেমস মা-বাবার সঙ্গে না থেকে নিজের কর্মচারী এবং শিক্ষানবিশদের সঙ্গে আলাদাভাবে মেস করে থাকতেন। বেঞ্জামিন তাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু বেঞ্জামিন নিরামিষ আহার খাবেন বলে ঠিক করার ফলে তার জন্য আহার আলাদাভাবে রান্না করতে হল। জেমস সেই কথায় অসন্তুষ্ট হলেন। তখন বেঞ্জামিন দাদাকে এই বলে প্রস্তাব দিলেন যে বেঞ্জামিনের খাবার জন্য সপ্তাহে যতটুকু টাকা খরচ হয় তার মাত্র আধা টাকা যদি জেমস বেঞ্জামিনকে দিতে রাজি হয়, তাহলে তিনি নিজের আহার নিজেই রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। জেমস সেই প্রস্তাবে রাজি হলেন। বেঞ্জামিন তখন ট্রায়নের বইটি পড়ে নিরামিষ আহার প্রস্তুত করার কয়েকটি সহজ নিয়ম শিখে নিলেন। নিরামিষ আহার খেতে আরম্ভ করে দেখলেন যে জেমসের কাছ থেকে পাওয়া টাকার অর্ধেক তার খাওয়ার জন্য খরচ হয়; বাকি আধা টাকা বেঁচে যায়।। বেঁচে যাওয়ার ফলে সেই টাকা দিয়ে তিনি আগের চেয়ে বেশি বই কিনতে সক্ষম হলেন।কেবল তাই নয়, বই পড়ার জন্য তিনি আগের চেয়ে বেশি সময় বের করতে সক্ষম হলেন।

  জেমস এবং তার কর্মচারীরা দুপুরের আহার খাওয়ার জন্য বাড়িতে যায়। সেই সময়ে বেঞ্জামিন ছাপা শালায় একা থাকেন। কয়েক টুকরো পাউরুটি বা অল্প ফল টল আর এক গ্লাস জল– এটাই হল বেঞ্জামিনের দুপুরবেলার আহার।এই লঘু আহার খেয়ে নিয়ে তিনি বই পড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং দাদা এবং তার সঙ্গীরা কাজে ফিরে আসা না পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করতে থাকেন। বেঞ্জামিন বিশ্বাস করতেন যে সহজে হজম করতে পারা লঘু আহার মগজকে পরিষ্কার রাখে আর সেই অবস্থায় পড়া কথাগুলি বুঝতে বেশি সহজ হয়।

  কিন্তু বেঞ্জামিনের নিরামিষ আহারের প্রতি আসক্তি মাত্র এক বছর স্থায়ী হল। একবার তিনি বোস্টন থেকে জাহাজে উঠে কোনো একটি জায়গায় গিয়েছিলেন।সেটাই ছিল সমুদ্র ভ্রমণের তাঁর প্রথম অভিজ্ঞতা ।জাহাজের যাত্রীরা সমুদ্রের অনেক কড মাছ ধরে সেই সব ভেজে খেতে লাগলেন। ট্রায়ানের যুক্তিতে বিশ্বাস করে নিরামিষাশী হওয়ার আগে বেঞ্জামিন মাছ খেতে খুব ভালোবাসতেন। এখন ভাজা মাছের গন্ধ তার নাকে লাগার সঙ্গে সঙ্গে লোভে তার জিহ্বায় জল আসতে লাগল।কিন্তু তা বলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে লোভের কাছে নতি স্বীকার করলেন না। একদিকে তার নীতি, অন্যদিকে লোভ— এই দুটিকেই তিনি কিছু সময় দাঁড়িপাল্লার মাপতে শুরু করলেন। কী করা উচিত সেই কথা ভেবে থাকার সময় হঠাৎ একবার তাঁর মনে পড়ল যে একবার একটি বড়ো মাছের পেট চেরার সময় তা থেকে অনেক ছোটো মাছকে বেরিয়ে আসতে তিনি দেখেছিলেন।আমিষ আহারের বিপক্ষে ট্রায়নের একটি প্রধান যুক্তি ছিল এই যে আমিষ আহার খাওয়ার অর্থই হল প্রাণী হত্যা—যা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু বড়ো মাছের পেট থেকে ছোটো মাছ বের করার দৃশ্যটি মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্জামিন নিজেকে প্রশ্ন করলেন–‘মাছগুলি যদি একে অপরকে খেতে পারে তাহলে আমি মাছ খেলে কী আর এমন অসুবিধা হবে?’

 নিজের সঙ্গে এভাবে তর্কবিতর্ক করে অবশেষে বেঞ্জামিন আশ মিটিয়ে ভাজা মাছ খেতে শুরু করলেন।

 এই সম্পূর্ণ ঘটনাটিতে বেঞ্জামিন পুনরায় মাছ খেতে শুরু করার কথাটার চেয়ে যে কথাটি বেশি তাৎপর্যপূর্ণ সেটি হল ঘটনাটির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠা বেঞ্জামিনের যুক্তিবাদী মনের পরিচয়। তিনি নিজেই লিখে রেখে গেছেন—‘সমস্ত কথাকে যুক্তির মাধ্যমে বিচার করে দেখতে পারার ক্ষমতা থাকলে নানা প্রকারের সুবিধা হয়। তখন মানুষ যে কোনো কথার সপক্ষে বা বিপক্ষে নানা যুক্তি আবিষ্কার করতে পারে।’


মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এ কে সরকার শাওনের ৫৮ তম জন্মদিন পালন, বাংলাদেশ, Poet

এ কে সরকার শাওনের ৫৮ তম জন্মদিন পালন

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা



৬ ফেব্রুয়ারী ছিলো কবি ও কথাসাহিত্যিক এ কে সরকার শাওনের ৫৮ তম জন্মদিন। এইদিনে তিনি বদন বইয়ে লিখলেন

"কেক নয়, ফানুস নয় 

নয় মোম প্রজ্জ্বলন,

জীবন থেকে হারিয়ে গেলো 

আরো একটি কষ্টের সন!"


কষ্ট ভুলতে নাড়ীর টানে জন্মদিনে রাজধানীর বাড়ী ছেড়ে সস্ত্রীক সোজা চলে গেলেন জন্মভূমি সবুজ শ্যামল গ্রাম গোপালপুরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে একটি অপরূপা গ্রাম গোপালপুর। তাঁর ভাষায়


"সমতটের রূপসী তন্বী

গোপালপুর তার নাম!

সারি সারি সুন্দর বাড়ি

শত গুনী মানীর ধাম!"


সেখানে পৈতৃক বাড়ীতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে চলে গেলেন শস্য ক্ষেতে। সেখামে কবির কলম থেমে থাকেনি। সর্ষে ক্ষেতের হলুদ সায়রে বিমোহিত হয়ে লিখলেন 


"মৌমাছি ভ্রমর গুঞ্জে দিনভর

হলুদ সর্ষে ক্ষেতে।

বনে-জঙ্গলে পিয়া পিয়া ডাকে

পাপিয়া-মহুয়া তফাতে।"


গাঢ় সবুজ প্রচ্ছদে সফেদ ধনে পাতার ফুল নিয়ে লিখলেন 

"ধনে পাতার কী বাহার!

ঘ্রাণে আত্মহারা। 

ঘন সবুজ প্রচ্ছদে ফোঁটা

ফুলগুলি যেন তারা! "


এভাবেই "শীতের শান্ত সকাল" কবিতাটি লিখলেন ঘুরে ঘুরে। নীড় ফেরা পাখীর মত সন্ধ্যায় রাজধানীতে ফিরে এলেন। সারাক্ষণ গুনগুনিয়ে গাইলেন কালজয়ী পরিচালক সুবাস দত্তের আলিঙ্গন ছায়াছবির গান 

"ঘুরে এলাম কতো দেখে এলাম 

অশান্ত মন নিয়ে ছুটে গেলাম

আমার গাঁয়ের মতো কভু দেখিনি 

সে যে আমার জন্মভূমি। "


সাহিত্য চর্চায় নিবেদিত এই প্রতিভাবান কবি'র জন্ম ১৯৬৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের গোপালপুরে। পিতা মো: আবদুল গনি সরকার একজন সরকারী চাকুরে এবং মাতা মিসেস সালেহা গনি সরকার একজন আদর্শ গৃহিনী ছিলেন। তিনি পিতা-মাতার সাত সন্তানের মধ্যে ৪র্থ সন্তান। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ।


কলকাতার বাংলা এক্সপ্রেস পুরস্কার বিজয়ী কবি ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য ও সৃজনশীল সব ধরনের ধারার সাথে জড়িত আছেন। তাঁর লিখা গান, কবিতা, নাটক, টেলিফিল্ম ইত্যাদি দেশে বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়-হচ্ছে। তাঁর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হচ্ছে যথাক্রমে “কথা-কাব্য”, “নীরব কথপোকথন”, ও "আপন-ছায়া"। ২০২৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস " অতল জলে জলাঞ্জলি। এই উপন্যাসে তিনি ভিনদেশী শব্দ সম্পূর্ণভাবে পরিহার করেছেন। তাঁর একটি গল্পগ্রন্থ সহ অপ্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৯। কবি'র শিক্ষা জীবনের শুরু ঝালকাঠির উদ্বোধন উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৮৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৮৫ সালে নবীনগর কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হন। ১৯৯০ সালে বিমান বাহিনীর এটিআই থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ সহযোগী প্রকৌশলীর সনদ অর্জন করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ১০ বছর তিনি সেই এটিআই এর প্রশিক্ষক ছিলেন। ২০০৮ সালে থাইল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাসাম্পশন থেকে তথ্য প্রযুক্তিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রান গ্রুপ ও ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত "খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা" বিষয়ের উপর একাধিক সনদ রয়েছে কবি'র। এছাড়াও তিনি আইন শাস্ত্রেও সম্মান স্নাতক। সরকারি ছাড়া তিনি প্রান সহ দেশের কয়েকটি স্বনামধন্য শিল্পগ্রুপের উপ মহা-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসাবে কাজ করেন। ১৯৯১ সালে ৫ জুলাই তিনি যুগলবন্দী হন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ কে এম জহিরুল হক (ইব্রাহিম)সাহেবের দ্বিতীয়া কন্যার সাথে। কবি ও কবি'র শিক্ষাবিদ স্ত্রী নাজমা আশেকিন শাওনের তিন রাজকন্যাগণ বিশ্বের প্রথম সারির বনেদী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণ মেধা বৃত্তি নিয়ে অধ্যয়ন করছেন। এবারের বাংলাদেশের বই মেলায় তাঁর প্রথম উপন্যাস অতল জলে জলাঞ্জলি প্রকাশ করে ছিন্নপত্র প্রকাশন। বইমেলায় ষ্টল ষ্টল নং ৫৯৩।সরকারি ও বেসরকারি চাকুরির পাঠ চুকিয়ে বর্তমানে তিনি রাজধানীর উত্তরখানের নিজ বাসভবন কবিকুঞ্জ 'শাওনাজ ভিলায়' নিরবে নিভৃতে সাহিত্যচর্চা করে চলোছেন ।

শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস "অতল জলে জলাঞ্জলি" প্রকাশিত ।। নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা ।। বাংলাদেশ, Bangladdesh

এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস "অতল জলে জলাঞ্জলি" প্রকাশিত



নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা, ০১ ফেব্রুয়ারি ।। এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস "অতল জলে জলাঞ্জলি" প্রকাশিত হল। ২৪০ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে ছিন্নপত্র প্রকাশনী এবং প্রচ্ছদ একেছেন ভারতের ভুবনেশ্বরে অবস্থিত  কিট (KiiT) বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোস্পেস ইন্জিনিয়ারিং এর মেধাবী  ছাত্রী আঁকিয়ে   কামরুন সালেহীন তৃণা।  উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছেন কবির  তিন রাজকন্যাকে।  উপন্যাসটি ২০২৫ এর বইমেলার লিটল ম্যাগ চত্বরে, ছিন্নপত্র প্রকাশনীর স্টল নং ৫৯৩ ও রকমারিতে পাওয়া যাবে। গ্রন্থটির মূল্য রাখা হয়েছে ৭৫০ টাকা।একটি ত্রিভুজ প্রেমের কাব্যধর্মী সামাজিক উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” কবির ৪র্থ প্রকাশিত গ্রন্থ। গ্রন্থটি সম্পর্কে এ কে সরকার শাওন বলেন, ”এ সমাজ, সংসার ও চারপাশের আটপৌরে সুখ, দুঃখ, কান্না, হাসি ইত্যাদি ঘটনাকে উপজীব্য করেই অতল "জলে জলাঞ্জলি" র উপন্যাসের চরিত্রাবলী রূপায়ন করা হয়েছে। আশাকরি সবার হৃদয়ে আঁচড় কাটবে“। উপন্যাসের সারসংক্ষেপ হলো সমতটের মেধাবী কাব্যিক  ছেলে জগলু। বরেন্দ্রভূমিতে গিয়ে পড়াশুনা ও লেখালেখির মাঝে  পরিচয় হয় উঞ্চ পলির রাজকন্যা জুহি'র সাথে। পরিচয় ও প্রণয় ছাড়িয়ে পরিণয়ের পথে এগোতেই হোঁচট খায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে। মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে অর্ধ-চেতনে চিকিৎসার্থে কেটে যায় প্রায় অর্ধযুগ। নব জীবনে আলো হয়ে উদ্ভাসিত হয় আর এক বিদেশী   রাজকন্যা শায়লা। ত্রিভুজ প্রেমের আবেগী কাহিনীর সমাপ্ত হয় কারো হাসি কারো কান্নায়। জীবনে কাউকে না কাউকে দিতে হয় অতল জলে জলাঞ্জলিতে বিসর্জন। উপন্যাসটিতে বিদেশী ভাষার অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে বর্জন করা হয়েছে কলকাতার  বাংলা এক্সপ্রেস পুরস্কার বিজয়ী কবি  এ কে সরকার শাওন  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন  ১৯৬৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।  পিতা মোঃ আব্দুল গণি সরকার সরকারি চাকুরে এবং মা  সালেহা গণি সরকার আদর্শ গৃহিণী  ছিলেন। কবি'র শিক্ষা জীবনের শুরু ঝালকাঠির উদ্বোধন উচ্চ বিদ্যালয়ে।  ১৯৮৩ সালে নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৮৫ সালে  নবীনগর কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে  স্নাতক হন। ১৯৯০ সালে বিমান বাহিনীর এটিআই থেকে   অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ   সহযোগী প্রকৌশলীর সনদ অর্জন করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ১০  বছর তিনি সেই এটিআই এর প্রশিক্ষক ছিলেন। ২০০৮ সালে থাইল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাসাম্পশন থেকে তথ্য প্রযুক্তিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।  ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত "খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা" বিষয়ের উপর একাধিক সনদ  রয়েছে কবি'র। এছাড়াও তিনি  আইন শাস্ত্রেও সম্মান  স্নাতক। সরকারি ছাড়া তিনি প্রান সহ দেশের কয়েকটি  স্বনামধন্য শিল্পগ্রুপের উপ মহা-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসাবে কাজ করেন। অতল জলে জলাঞ্জলি কবি'র প্রথম উপন্যাস।  প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে  কথা-কাব্য, নীরব কথাপোকথন ও আপন-ছায়া। প্রকাশের প্রতীক্ষায় গ্রন্থগুলো হচ্ছে প্রণয়-প্রলাপ, আলো-ছায়া, চেয়ার ও চোর,  বাঁশিওয়ালা, সজনী, প্রান্তিক-প্রান্তরে, জলের নাচন, জলের ছল,  শিশুদের  জন্য বাঁকা চা়ঁদের হাসি, ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ Songs of Insane এবং দু'টো গল্পগ্রন্থ মেকআপ বক্স ও নিশুতি রাতের প্রলাপ। 


কবি ও কবি'র শিক্ষাবিদ স্ত্রী নাজমা আশেকিন শাওনের তিন রাজকন্যাগণ বিশ্বের প্রথম সারির  বনেদী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণ মেধা বৃত্তি নিয়ে অধ্যয়ন করছেন। সরকারি ও বেসরকারি চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করছেন রাজধানীর উত্তরখানের  কবিকুঞ্জ শাওনাজ ভিলায়।

রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৫

দারোগা বাড়ির স্মৃতিকথা ।। অণুগল্প ।। মো.রিমেল, Daroga Barir Itikatha

দারোগা বাড়ির স্মৃতিকথা

মো.রিমেল


গ্রীষ্মের সকালে দারোগা বাড়ির প্রধান ফটকে মেঘবালক দাড়িয়ে আছে। একটু পরে কৃষ্ণচূড়ার গাছের অদূরে একটা আম গাছের গুড়িতে বসে  সূক্ষ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ।

থাকার ঘরের সংকীর্ণ বাতায়নে তাকিয়ে কিছু একটা জিনিসে গভীর মনোনিবেশ করছে দারোগা বাড়ির দাদি। রতন,নিলয় মতিনরা ঢেঁকি ঘরের পূর্বদিকে মাটি খুড়ে চলছে।কারোর হাতে ছোট্ট লাঠি আবার কেউ কাঁচি নিয়ে মাটি খুড়েই চলছে। যেন রাজা গোবিন্দমানিক্য গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছে সে জায়গায়।

 

স্কুল ছুটি শেষে পাড়ার অনেকে খবর জানতে পেরে যোগ দিয়েছে রতন, নিলয়দের সাথে।কিন্তু কি চলছে?মেঘবালক আর দাদি কেউই অনুমান করতে পারল না।বাতায়নে দাদিকে আর দেখা যাচ্ছে না। হয়তো এই বিষয়ে নালিশ করতে গেছে তার ছেলে জসিম ও মহসিনের কাছে।

 একটু পরে রতনের উল্লাস শোনে বুঝা গেল হয়তো সে গোবিন্দমাণিক্য রাজার গুপ্তধন পাতে পেয়ে গেছে।সবাই আরো বেশি মাটি খুড়াতে ব্যস্ত, আমাকে ও পেতে হবে। রতনের খুড়াখুড়ি শেষ। মেঘবালক বলল,

“রতন কি রে?ছেলেমেয়েরা কি খুজে? আর তুই কি পেয়েছিস?

মিষ্টি আলু।

মিষ্টি আলু?

হুম।দেখছো না একপাশে মিষ্টি আলুর লতাগুলো স্তুপ করে রেখেছে। গতকাল পলাশ ভাই মিষ্টি আলু তুলেছে।

-তুলে নিলে তরা আবার কিভাবে এখন মিষ্টি আলু পাচ্ছিস?

পলাশ ভাই ভালো করে তুলে নি। অনেক আলু এখনো মাটির নিচে রয়ে গেছে।”

ঢাক-ঢোলের আওয়াজ ।রতন তার মিষ্টি আলু একটা গাছের তলায় রেখে নিলয়,মতিন নিয়ে পথের দিকে তাকাতেই দেখে একদল লোক ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দারোগা বাড়ির দিকে আসছে।

রত্না দিদির বিয়ে উপলক্ষে পানি নিতে ঢাক-ঢোল বাজাতে বাজাতে একটা দল আসলো দারোগাবাড়ির পুকুরে। তাদের পিছু পিছু চললো রতন নিলয় মতিন সহ বাকিরা। পুকুরপাড়ে বিয়ের গীত গাইতে দেখা গেল খোকাদার মা,রাতুলের দিদি সহ পাড়ার কিছু নারীদের যেন এক উৎসমুখর পরিবেশ।নিয়ম মেনে একটা ডিম পানিতে ফেলে কলস ভরে পানি নিয়ে রওনা হলো রত্না দিদির বাড়িতে।এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে সবাই।ঢাক-ঢোলের আনন্দে মগ্ন হয়ে নাচতে শুরু করে দিল রাতুল নিলয়।কিন্তু একটু পরে লক্ষ্য করল মতিন নেই।বাগান,পুকুর ঘাট,উঠোন
সব জায়গায় খুজেও মতিনকে পাওয়া গেল না।রতন,নিলয় বাড়ি চলে গেল।

ঢেঁকি ঘরের পিছনে আম গাছে বেশ টসটসে রসালো আম।আমের পাকা হলদে রঙ দেখে যে কারোর খেতে মন চাইবে। তবে খেতে অনেক টক বলে দারোগাবাড়ির কেউ খায় না। ঢেঁকি ঘরের পিছনে কিছু বিষাক্ত গাছ জন্মেছে। তাই সহজে কেউ যায় না। তবে আজকে জসিম মিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ টক আম খেতে বায়না ধরে।

 রতনকে ডেকে আনা হলো।

“একটা চগম লাগবো। চগম দিয়ে ঢেঁকি ঘরের উপরে উঠলে পাকা গুলো পাড়া যাবে।

জসিম মিয়া,নে উঠ। মই এর অবস্হা মোটেই ভালো নয়।

অনেক কষ্টে ঢেঁকি ঘরের চালায় উঠলো রতন।আম গুলো যাচাই বাছাই করে পাকাগুলো দেখতে লাগলো রতন। জীর্ণ দেহের ঢেঁকিঘরের মরিচাধরা চালায় পা দিলে যেন চালা ভেঙ্গে নিচে পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় অতি সর্তকতায় আম পাড়ার চেষ্টা।মই,জীর্ণদেহের ঢেঁকি চালার লগে লড়াই করে অর্ধেক বস্তা আম নিয়ে নিচে নিচে নামল।

রতন হাত পরিষ্কার করতে গেল পুকুর পাড়ের কলটাতে।এই কল নিয়ে অনেক অলৌকিক কথার প্রচলন আছে।শোনা যায় এই কলে রাতে নাকি পরির এক দল আসতো।কল থেকে পানি নিয়ে যেত।পানি নেওয়ার সময় তাদের পায়ের নুপুরের আওয়াজ শোনা যেত পুরো বাড়িজুড়ে।তাই রাতে কেউ কলে পানি নিতে আসে না।

পাশের বাড়ির সানু মিয়া একদিন রাতে বাড়ি ফিরছিল। পানি পিপাষা পাওয়ায় সেই কলটির কাছে যেতেই তীব্র আলো জ্বলজ্বল করতে দেখেছিল।সাথে নুপুরের আওয়াজ।ভয়ে সানু মিয়া পানি পান করা ছাড়াই বাড়িতের দিকে রওনা হল।

হাত ধোয়া শেষে পেছনে ফিরতে ছোট্ট আবদুল্লাহ দুইটি আম নিয়ে এসে,

নাও খাও,,,

রতন,না তুমিই খাও,,,

জসিম মিয়া,রতন কিছু আম নিয়ে যা বাড়িতে খাইস।ধর,,,

লাগবে না

আরে নিয়ে যা,

আজকে টক খেতে মন চাইছে না।

বিকেলে দারোগা বাড়ির বাগানের দক্ষিণপাশে বেশ বাতাস বইছে।উঠোন ও পুরো বাড়ি জুড়ে প্রশান্তির অনুভতি।

 

আজ বিকেলে কোনো গোল্লাছুট বা অন্য খেলায় কেউ আসে নি।সবাইকে বাগানের দক্ষিণপাশে আনন্দে মেতে  উঠেছে।সবাই নারিকেল পাতার পাখা বানিয়ে প্রতিযোগিতা করছে।দারোগা বাড়ির ছোট ছোট খেজুর গাছগুলোর আর রক্ষা নেই।সব কাটা গায়েব করে দিয়েছে ছেলেমেয়েরা।কারণ নারিকেল পাতার পাখাগুলো চালাতে খেজুর গাছের কাটা লাগে।

দারোগা বাড়ি থেকে মতিনকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল।

 মতিন মন খারাপ করে বাড়ি ফিরছে। কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে বুঝা গেল। কিরে মতিন মন খারাপ কেন?

রতন,নিলয়ের সাথে জামেলা হয়েছে।
কি নিয়ে?


মনে আছে কিছু আগে রত্না দিদির বিয়ের জন্য সবাই পানি আনতে গিয়েছিল?
হঠাৎ তাদের কথার কথোপকথন আটকে যায় স্বার্থময় পৃথিবীর ইটের দালানে।

বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৫

সেই বুড়ো মানুষটির জন্য ।। মীনাক্ষী বুঢ়াগোঁহাই ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ বাসুদেব দাস, অনুবাদ গল্প

 সেই বুড়ো মানুষটির জন্য

 মীনাক্ষী বুঢ়াগোঁহাই

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ বাসুদেব দাস



  গড়িয়া পুকুরে বড়শি বেয়ে থাকা দিগন্তকে দাদুল দূর থেকে চিৎকার করে বলল,’ এই দিগন্ত, রত্ন মাস্টার মারা গেছে ,জানিস কি?’ ঘন্টা দুয়েক আগে এদিক দিয়ে মাস্টার মাঠের উদ্দেশ্যে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল নাকি? তখন দিগন্ত বড়শির সাজসরঞ্জাম তৈরি করতে ব্যস্ত ছিল। কীভাবে মানুষটার মৃত্যু হল বলে জিজ্ঞেস করবে ভাবতে ভাবতেই দাদুল অনেক দূরে চলে গেল।ফোর জিরো সেভেন বুড়োকে ধাক্কা মেরেছে নাকি ?

 তাড়াতাড়ি করে দিগন্ত বড়শি গুছিয়ে রাখতে লাগল। সে যখন রত্নমাস্টারের বাড়ির কাছে গিয়ে পৌঁছাল , তখন জায়গাটা মানুষে ভরে পড়েছে। মাস্টারের ঘরের দরজার সামনে, ভেতরে বাইরে কেবল মানুষই মানুষ ।এতগুলি মানুষ এত তাড়াতাড়ি কীভাবে জানতে পারল যে রত্ন মাস্টারের মৃত্যু হয়েছে ।শোবার ঘর থেকে হাজরিকা ডাক্তার চোখের জল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছে। পেছন পেছন মাথা নিচু করে শইকীয়া কম্পাউন্ডার।ডাক্তারও কাঁদে? দিগন্তের মনে মনে হাসি পেয়ে গেল। রত্নমাস্টারের বড়ো ছেলে এবং হাজরিকা ডাক্তার স্কুলে একসঙ্গে পড়াশোনা করা, সেই জন্যই মানুষকে দেখিয়ে কাঁদছে বোধ হয়।

 কী হয়ে মানুষটার মৃত্যু হল জিজ্ঞেস করবে বলে ভেবেও সে জিজ্ঞেস করার মতো আশেপাশে কাউকে দেখতে পেল না। প্রত্যেকেই ভদ্র ঘরের মানুষ। দুই একজন অপরিচিত মানুষও রয়েছে। তখনই দূরে শৈলেনকে দেখতে পেয়ে সে কাছে এগিয়ে গেল। শৈলেনের হাতে চিমটি কেটে সে জিজ্ঞেস করল,’ কী হয়েছিল রে? আমি ভালো করে জানি না বুঝেছিস।’ হার্ট ফেল’ করেছে বলে শুনেছি।’

 ‘ হার্টফেল ?অন্তরে কোনো আঘাত পেলে তবে হে হার্টফেল করবে ।দিগন্ত শৈলেন কে বুঝানোর চেষ্টা করল। শৈলেন কী জানি বলে অন্য মানুষের ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেল। দিগন্ত এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়াতে লাগল।রত্নমাস্টারের স্ত্রী হাউ মাউ করে চিৎকার করতে থাকবে বলে সে ভেবেছিল। কিন্তু ভেতর থেকে কারও কান্না ভেসে আসছে না। কোনো ধরনের কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে না, কেবল গহীন গম্ভীর মানুষগুলি জমায়েত হয়ে রয়েছে। ধুর এটা কি মরা মানুষের ঘর? শৈলেনের কাছে গেল।’ দিদি বাড়িতে নেই নাকি? সে শৈলেনকে জিজ্ঞেস করল।

 রত্নমাস্টারের স্ত্রী এই অঞ্চলের প্রত্যেকেরই দিদি।উনিশশো একান্ন না বাহান্ন সনে তিনি এই অঞ্চলে মেট্রিক পাশ করা প্রথম মেয়ে। সেই তখন থেকে ছেলে বুড়ো প্রত্যেকেরই তিনি দিদি এবং এখন তার নাতি নাতনির বয়সের ছেলেমেয়েরাও তাকে দিদি বলেই ডাকে। নিজের সম্পর্কের মানুষগুলি ছাড়া অন্যেরা যদি তাকে কাকিমা মাসি বলে সম্বোধন করে, তখন তিনি খুব একটা খুশি হন না। বিশেষ করে কেউ যদি তাকে বড়োমা বা মাসি বলে ডাকে তাকে নির্ঘাত গালি খেতে হবে।—মাসি বলে ডাকা ছেলেটিকে বলবে—’ এই আমি তোর মায়ের দিদি নাকি? তোর মায়ের আগে জন্ম হয়েছিল না আমার আগে হয়েছিল— তুই দেখেছিলি নাকি পুনরায় বড়মা ডাকা ছেলেটিকে বলবে আমাদের মাস্টারকে বুড়ো পেয়েছিস নাকি যে আমি তোর বড়োমা হব। কেউ বুড়ি বলে মন্তব্য করলে তো তার অবস্থা শেষ ।

 দিগন্ত যদিও তার নাতি তথাপি মানুষটার স্বভাবটা জানে বলে সে শৈলেনের সামনে দিদি নাই নাকি বলে জিজ্ঞেস করল । শৈলেন বলল না দিদি গতকাল অরুণা দিদির বাড়িতে গিয়েছে। অরুণা দিদি মানে রত্নমাস্টারের বড়ো মেয়ে, কোনো একটি কলেজের অধ্যাপিকা— অঞ্চলের প্রথম এমএ,তাই তিনি সকলেরই দিদি। দিগন্ত এবার আশ্বস্ত হল।

 রত্নমাস্টার এবং দিদি ছাড়া এই প্রকাণ্ড বাড়িটাতে এখন কেউ থাকে না। তারা দুজনের মধ্যে একজন একজন করে কোথাও মানে ছেলেমেয়ের বাড়িতে গিয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই রত্নমাস্টারের আকস্মিক মৃত্যুর জন্য আশেপাশের প্রত্যেকেই বিমূঢ় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীরা। তাকেই প্রত্যেকে এটা কর,ওটা কর বলে চলেছে। কেউ বলছে— কাউকে পাঠিয়ে দে,কেউ বলছে ওয়ারলেস মেসেজ কর, আবার কেউ বলছে ছেলেদের ফোন নাম্বার খুঁজে দেখ, মারা গেছে বলে দে।তার মধ্যে আবার কেউ বলছে বড়ো ছেলেকে খবর দিলেই হবে— তার কাছ থেকেই বাকি সবাই জানতে পারবে ।মোটকথা চারপাশে মৃদু গুঞ্জন, চাপা উত্তেজনা।

 রত্নমাস্টারের সম্পর্কীয় ভাই চন্দ্রের চোখ হঠাৎ দিগন্তের উপরে পড়ল। ও, তুইও এসেছিস। অন্যেরা কেউ না এলে মুখাগ্নি করার দায়িত্বটা তুই পাবি, থাক থাক।’ বলে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। দিগন্তের শরীরটার মধ্যে যেন বিছা লেগেছে। সে সেখান থেকে চলে আসবে বলে ভাবল, কিন্তু এতগুলি মানুষের আকর্ষণ তাকে বেঁধে রাখল।

  এই বাড়ির ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী দিগন্তই হত। আজ এতগুলি মানুষের মধ্যে রত্নমাস্টারের একমাত্র আত্মীয় সেই। কিন্তু সেই আত্মীয়তা সমাজ স্বীকৃত নয়,, যার জন্য দিগন্তও এই মানুষগুলির সঙ্গে সাধারণ হয়ে রত্নমাস্টারের মৃতদেহটা ঘিরে আছে।

রত্ন মাস্টার মানুষের সামনে বলেছিল,’ সেই মেয়েটি বললেই হবে দিগন্ত আমার নাতি সে যে আমার নাতি তার লক্ষণ কিছু আপনারা দেখেছেন কি? তার চেহারাতেই রয়েছে নাকি তার বুদ্ধিবৃত্তিতে রয়েছে? আমার ছেলে মেয়েদের কেউ কোথাও সেকেণ্ড ডিভিসন পেয়েছে কি? সেই দিগন্ত নামে ছেলেটি –ক্লাস সেভেনে যে তিনবার ফেইল করেছে সে আমার নাতি হতে পারে কি?’রত্নমাস্টারকে সবসময় ঘিরে থাকা তাঁর গুণমুগ্ধরা তাঁর অন্য কথাতেও যেমন সায় দেয় সেভাবে এই কথাতেও সায় দিয়েছিল।

 কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা নেতা না হয়েও এই অঞ্চলে রত্নমাস্টারের প্রতিপত্তি অসীম। জীবনের মধ্যভাগ পর্যন্ত তিনি অবশ্য এত প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন না। একটি সামান্য হাইস্কুল খুলে তেমনই সমাজসেবা এবং জীবনসংগ্রাম আরম্ভ করেছিলেন। প্রচুর অভিজ্ঞতা এবং কঠোর শ্রমে তিনি স্কুলটা উজ্জীবিত করে তোলার সঙ্গে অঞ্চলটির উন্নয়নশীল কাজকর্মে এভাবে জড়িত হয়ে পড়লেন যে তাকে বাদ দিয়ে সেই অঞ্চলের জনগণ অন্য মানুষের কথা ভাবতেই পারে না।

 সেই প্রতিষ্ঠিত ,প্রতিপত্তিশীল রত্নমাস্টারের বড়োছেলের সঙ্গে বদনাম হল তরুলতা নামের সাধারণ ঘরের সাধারণ একটি মেয়ের। মাস্টারের ছেলেটি তখন ইঞ্জিনিয়ারিঙের প্রথম সেমিস্টারে। কিন্তু সে সেই সময়ে কোনোমতেই স্বীকার করল না যে তরুলতার গর্ভের সন্তানটির সেই পিতা। সে মাত্র বলেছিল যে ইঞ্জিনিয়ারিঙের টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে আসার পরে সে তরুর সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিল এবং ওদের একসঙ্গে থাকতে অন্য মানুষেরাও দেখেছিল। কিন্তু এই ধরনের সাংঘাতিক কিছু একটা ? না, না –মোটকথা জয়ন্ত জনসভায় না থেকে হ্যাঁ করল না।সেদিন তরুলতা কেবল চোখের জল ফেলতে ফেলতে তার দিকে একবার অঙ্গুলি নির্দেশ করল। তারপর থেকে সে সেই যে নিশ্চুপ হয়ে পড়ল এখনও সেই নিশ্চুপই রয়েছে।

 বর্তমানে তার সমস্ত কাজকর্ম ,চিন্তাধারা দিগন্তকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে জয়ন্ত ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে ,ঘর-সংসার করে বৈধ পিতৃ্ত্বের অধিকারীও হয়েছে ।

 আর দিগন্ত রত্নমাস্টারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিগন্ত নামের ছোটোখাটো গাধা ছেলেটি মাস্টারের জীবনবৃত্তের চারপাশে ঘুরতে থাকল।

 দিগন্তের জীবনের এই সতেরোটা বছর কেবল রত্নমাস্টার নামে মানুষটার কথা ভাবতেই পার হয়ে গেল। আশ্চর্যের কথা । তার ক্ষুদ্র জীবনের সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্নার কথা সে রত্নমাস্টারকে বোঝাতে চায়,দেখাতে চায় । সারাদিনে একবার রত্নমাস্টারকে না দেখলে তার ভালো লাগে না। এমন কী নতুন কাপড় পরলেও সে রত্নমাস্টারের চোখের সামনে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। তার জীবনের সবচেয়ে ইম্পরটেন্ট ব্যক্তিটিই হলেন রত্নমাস্টার। সে মাস্টারের চোখের সামনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেখাতে চাইছিল। কিন্তু হঠাৎ রত্নমাস্টারের মৃত্যু ঘটায় সবকিছুই কেমন যেন উলোট পালট হয়ে গেল।

 দিগন্ত মাঝে মধ্যে একা কথা বলে। অন্যের চোখে একা একা কথা বলা মনে হলেও আসলে দিগন্ত কল্পনায় রত্নমাস্টারের সঙ্গে কথা বলে। তার অজান্তে সে রত্নমাস্টারকে বলতে চাওয়া কথাগুলি তার মুখ দিয়ে শব্দ করে বেরিয়ে যায়। তরুলতা এই মুহূর্তগুলিতে তাকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কী আছে রত্নমাস্টারের শরীরে? দিগন্ত যে সেই মানুষটাকে এত গুরুত্ব দেয়। অথচ সে যে মানুষটাকে ভালোবাসে তা তো নয়। দিগন্তের বন্ধুরা দিগন্তের একমাত্র শত্রু বলতে রত্নমাস্টারকে বোঝে।

 আসলে মানুষের জীবনে শত্রু বলে ভাবা ব্যক্তিটিই বোধহয় জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।মানুষ শত্রুর চোখের সামনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে শত্রুর অন্তরে জ্বলনের সৃষ্টি করতে চায়। সেই শত্রুর মৃত্যুর পরে কাকে দেখাবে নিজের ঐশ্বর্য ,সুখ-শান্তি ?প্রেমিকা এবং শত্রুর মধ্যে পার্থক্য কি?ঘুম থেকে জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কার কথা ভাবা হয় ? শত্রুর না প্রিয়জনের?দুটিই দেখছি একাকার হয়ে যায়। রত্নমাস্টারের মৃত্যুতে দিগন্ত যেন হঠাৎ নিঃস্ব হইয়ে পড়ল।

 দিগন্ত বাড়ি এল।মাকে খবরটা দেওয়ার পরে মা তার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপরে স্বাভাবিক ভাবেই নিজের অর্ধ সমাপ্ত ঘরোয়া কাজগুলি করতে লাগল।

 দিগন্ত নিজের চারপাশটা ভালোভাবে দেখে নিয়ে ভাবল, এই সুন্দর পৃ্থিবীটা রত্ন মাস্টারের চোখের সামনে থেকে সরে গেল। সেও ইঞ্জিনিয়ার হবে বলে ভেবেছিল।তার পিতা জয়ন্তের মতো।সে কল্পনা করেছিল,ইঞ্জিনিয়ার হয়ে রত্নমাস্টারের দীর্ঘ পদূলিতে সে গাড়ি থেকে নামবে।দুই হাতে কোট-টাই ঠিক করে বারান্দায় বসে থাকা রত্নমাস্টারের কাছে গিয়ে বুক ফুলিয়ে বলবে, ‘আমি ইঞ্জিনিয়ার হলাম।’

 শেষ রাতে রত্নমাস্টারের পত্নী বড়ো ছেলে জয়ন্ত এবং মেয়ে অরুণা এসে উপস্থিত হল। বাড়িতে তখন কান্নার রোল উঠল। দিগন্তদের বাড়ি থেকেও কান্নার রোল ভেসে আসতে লাগল ।সকালবেলা মৃতদহ নিয়ে খোল বাজিয়ে শবযাত্রা আরম্ভ হল। দিগন্ত বাড়ির ভেতরেই থাকবে বলে ভেবেছিল যদিও এক দুর্বার আকর্ষণ পুনরায় তাকে রত্নমাস্টারের মৃতদেহের কাছে নিয়ে গেল।

 সেদিনই একটার সময় শব দাহ করা হল। চিতার আশেপাশে তখনও পুরুষ মহিলারা জায়গাটা পরিপূর্ণ করে রেখেছিল। বেশিরভাগ মানুষ যে যার বাড়িতে চলে যাবার পরে দিগন্তও বাড়ি ফিরে এল। মা তাকে স্নান করার জন্য জল- গামছা এগিয়ে দিল। স্নান করে এসে অন্যান্য দিনের মতোই সে মাকে বলল, ‘মা খুব ক্ষুধা পেয়েছে। তাড়াতাড়ি ভাত দে।’ মা তার হাত ধরে বাড়ির পেছনদিকে বাগানের কাছে টেনে নিয়ে গেল। মা তাকে আস্তে করে বলল—‘তোকে আজ ভাত খেতে হবে না। তুই আজ এক বেলা উপোস করবি।’

  দিগন্ত যেন ক্রোধে ফেটে পড়বে। যে বাড়ি তাকে আজ পর্যন্ত স্বীকৃতি দান করেনি, যে মানুষটা রাস্তাঘাটে দেখলেই তাকে উপহাস ছাড়া আর কোনভাবেই সম্ভাষণ জানাতো না–সেই মানুষটার মৃত্যুতে দিগন্তকে একবেলা উপোস করতে হবে। ‘কেন উপোস করব’বলতে না বলতেই মা ফিসফিস করে তাকে বলতে লাগল—‘আমার শপথ দিগন্ত, তুই অন্য কারও কাছে বলবি না। আসলে রত্ন মাস্টারই তোর পিতা।পিতার বয়সের একজন মানুষকে বদনাম করতে ইচ্ছা হল না বলেই আমি জয়ন্তই তোর পিতা বলে বলছিলাম।পিতার মৃত্যুতে তুই … ।

 দিগন্তের পায়ের পাতা থেকে উপর পর্যন্ত ঝিনঝিন করতে লাগল। মা তার পরের কথাগুলি কী বলছে তার কানে প্রবেশ করল না। সে মায়ের মুখের দিকে কখনও না তাকানো অদ্ভুত মুখাকৃতির একজন মানুষকে দেখার মতো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

------------

 লেখক পরিচিতি-মেঘালয়ের তুরা গভর্ণমেন্ট কলেজের অসমিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা।প্রকাশিত গ্রন্থ –হাতি খুতরার সপোন,অনুবাদ-লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার,বিভিন্ন পত্র পত্রিকার লেখিকা।একজন প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন লেখিকা।


বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

একগুচ্ছ অনুবাদ কবিতা ।। নীলিম কুমার মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস, Nilim Kumar


একগুচ্ছ অনুবাদ কবিতা ।। নীলিম কুমার

 মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস 



কবি পরিচিতি--সাম্প্রতিক অসমের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত কবি নীলিম কুমার ১৯৬১ সালে অসমের পাঠশালায় জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় চিকিৎসক। প্রকাশিত গ্রন্থ ‘ অচিনার অসুখ’,’ স্বপ্নর রেলগাড়ি’,’ জোনাক ভাল পোয়া তিরোতাজনী’, নীলিম কুমারের শ্রেষ্ঠ কবিতা‘ ইত্যাদি। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ২৪।




কবিতা ।। মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস

 


অতিথি


মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস

কিছুই জিজ্ঞেস না করে আমার বুকের দরজা খুলে সে

ভেতরে প্রবেশ করল

এসেই আমার প্রেমের ফুলদানিটা

ভেঙ্গে ফেলল

কোথাকার আপদ একটা

সকালেই চলে এসেছিল

খাওয়ালাম

দাওয়ালাম

বিকেল হল

অতিথি তো যায় না

রাত হল

অতিথি আমার বিছানায় গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল

মধ্যরাতে আমার হাতে বুক থেকে একটা পুঁটলি বের করে দিয়ে

হঠাৎ সে যাবার জন্য প্রস্তুত হল

রাতের রেলে যাবে

পুঁটলিটা খুলে দেখে

দেখলাম আমার প্রেমের ফুলদানিটার মতো

ভেঙ্গে আছে তাঁর হৃদয়

কোথাকার অতিথি এসেছিল

রাতের রেলে সে কোথয় বা চলে গেল

 

 

নিরুদ্দেশের বিজ্ঞপ্তি


মানুষগুলি হারিয়ে যাচ্ছে।

তাই আজকাল মানুষগুলি ফোটো উঠে বেশি।

নিরুদ্দেশের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জুনুন নিজেই ফোটোগুলিতে

খুঁজে বেড়ায় নিজেকে। আমরা ফোটোগুলিতে

খুঁজে বেড়াই নিজেরই মুখটি এবং দেখতে পাই

অবিকল নিজের অপরিচিত মুখটা।

নিজের সেই অপরিচিত মুখটিকে আমি

ভালোবাসতে বাধ্য করাই নিজেকে।

না হলে আমার উপায় থাকেনা।

কারণ আমরা হারিয়েছি

আজকালকার ফোটোগুলিতে আমাদের সঙ্গে থাকে—

প্রিয়, অপ্রিয়, অর্ধপ্রিয়, অর্ধ শত্রু, অর্ধ মিত্র

বিশ্বাসী অবিশ্বাসী ভবিষ্যতের শত্রু হতে চলা প্রত্যেকেই।

—এই সবার মধ্যে নিজেকে দেখে করুনা জন্মায়।

কেননা সেই জন নিজের ভবিষ্যতের বিষয়ে

কোন আন্দাজ করতে পারেনা যে সেই জন হারিয়েছে।

 

যত ফোটো উঠেছে মানুষগুলি, ততই নিজেকে হারিয়েছে।

 

  

বাতাস এবং নারী


মূল অসমিয়া  বাংলা অনুবাদ‐ বাসুদেব দাস

প্রচন্ড গরম।

গোধূলি হয়েছিল কেবল,

হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ চলে গেল।

দেখা গেল

আটমহলের বাড়িটির ছাদে

একজন মহিলা উঠে আসছে,

হাতে একটা পাখা!

আর কিছু ভাবতে ভাবতে

নিজেকে হাওয়া করতে থাকল

 

কিছুক্ষণ পরে

তাঁর ভাবনা

তাঁর হাতের মুঠি থেকে

পাখাটা নিচে ফেলে দিল

ঠিক এই মুহূর্ত পর্যন্ত

পথ চেয়েছিল বাতাস

বাতাস দৌড়ে এল

একটু অভিমান নিয়ে,

আর মহিলাটিকে বলল না যে

উদাস ভাবনাগুলি অপকারী।

কারণ বাতাস ভালোভাবেই জানে‐

নারী অবিহনে ভাবনাগুলি বেঁচে থাকে না

বাতাস মহিলাটির চুলগুলি

উড়াতে লাগল,

আর শাড়ির আঁচলটাও!

 

বাতাসের প্রতি কৃতজ্ঞতায়

মহিলাটির মুখে হাসি ফুটে উঠল

বাতাস বহুদিন দেখেনি

এরকম হাসি





এই শহরের সবচেয়ে

বুড়ো মানুষটি

প্রতিদিন বারান্দায় বসে অপেক্ষা করে থাকে খবরের কাগজটির জন্য

 

তার খবরের কাগজটি না পড়া পর্যন্ত যেন এই শহরে

সকালগুলি আসতেই পারে না।

 

খবরের কাগজটি  না পড়া পর্যন্ত

তাঁর গলা সকালের

এক কাপ চা ও গিলে না।

 

তাঁর পত্নী চায়ের কাপ নিয়ে

ঠিক তখনই উপস্থিত হয়

যখন তাঁর চোখ পড়তে শুরু করে

প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনামগুলি

 

চায়ের কাপের সঙ্গে তিনি খবরের কাগজটি পড়ে শেষ করে

 

তারপরে তিনি

স্নান করতে যান

এবং

খবরের কাগজের সমস্ত অক্ষরগুলি ধুয়ে ফেলেন

 

তিনি খাওয়া চায়ের কাপটা ধুয়ে ফেলেন তাঁর

পত্নী।


প্রদীপ

 

জ্বলছিস হয়তো তুই 

পোড়ানোর জন্য আমার  বুকের  অন্ধকার?

তোর অর্ধেক জীবন গেল

 

একটুও অন্ধকার দূর হল না

জ্বলে জ্বলে এখন দেখছি

তুই শেষ হবি

নিজে  দেখছি ডুবে যাবি অন্ধকারে

 

কেবল ঈশ্বরই তোর খোঁজে আসবে

তিনি তো খুঁজে পাবেন না

এত অন্ধকারে তোর আত্মা

তোর খোঁজে পুনরায়

তোকেই জ্বালাবে ঈশ্বরও

ওহে অবোধ প্রদীপ

অন্ধকারও   দুঃখী

তোকে দেখে

কীভাবে বলি শুভ দীপাবলী???


 


Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...