মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০

কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার

কিছু বই কিছু কথা  । নীলাঞ্জন কুমার

জন্মের ভিটেমাটি । সপ্তর্ষি রায় । সারঙ্গ প্রকাশনী । একশো টাকা ।

অগোছালো কিছু কবিতা, তাতে মুক্তিরাম মাইতির রঙ সর্বস্ব দায়সারা  প্রচ্ছদ বাঁধাইছাঁদাই করে কাব্যগ্রন্থ হিসেবে পাঠকের কাছে বিতরণ করার মধ্যে ব্যক্তি আনন্দ থাকতে পারে । কিন্তু তা কতটা বিরক্তিকর
সপ্তর্ষি রায়ের ' জন্মের ভিটেমাটি ' পড়া পাঠক নিশ্চিত বুঝেছেন । কাব্যগ্রন্থের ভেতরে যে টিউনিং পাঠককে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন তা এখানে অনুপস্থিত । তিনি : ' মাটির ভেতর বীজের মতো/ উঠবে জেগে এক প্রভাতে ' কিংবা ' শব্দহীন মৃত্যু আজ / অমোঘ আশার শব্দ খোঁজে' র মতো মুছে যাওয়া পংক্তি  উপহার দেন ।
তাকে গ্রহণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে ।
      যারা কবিতা খুব তুচ্ছ বিষয়,  প্রতিদিন দশটি করে লেখা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি ভেবে থাকেন ,সিরিয়াস পাঠক তাদের মধ্যে একজন  হিসেবে এই কবিতাকারকে  বিবেচনা করলে তা দোষের হবে না । তা  আরওয়ালের ওপর অথবা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়র উদ্দেশ্যে হোক না কেন ।
         কোন ভালো পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ হলে তিনি যে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের উপযোগী তা নিশ্চয়ই নয়, এ কবির বোঝা উচিত ।

হার || দীপক মজুমদার || কবিতা

হার 
দীপক মজুমদার


 গালওয়ান ভ্যালিতে বীর যোদ্ধারা প্রাণ দেয়
দেশের মাটি বেহাত হতে হতে
একদিন হয়ত  আমরাই বিদেশী  হয়ে ওঠব

তবু রাষ্ট্রনেতার  চোয়াল শক্ত  হয়না

শত্রু-বিমান মাথার ওপর অনবরত  চক্কর কাটে
আমাদের মাথা নত করা কাজ

সুযোগ বুঝে চুনোপুঁটিরাও গলার কাঁটা হয়ে যাচ্ছে ...
                         
                                              ***

তোমার সাথে || রোশেনারা খান || কবিতা

তোমার সাথে
রোশেনারা খান



তোমার সাথে হারিয়ে যেতে পারি,
শহর থেকে সুদূর সাহারাতে।
কিন্তু আমায় ফিরতে হবে রাতে,
চেনা মানুষ চেনা বিছানাতে।

তোমার সাথে ভেসেও যেতে পারি,
সাগর বুকে বন্দরে বন্দরে।
কিন্তু আমায় আসতে হবে ফিরে,
নিজের কাছে নিজেরই অন্দরে।


তোমার সাথে উড়েও যেতে পারি,
উড়োমোটর কিম্বা হাওয়ায় ভেসে।
কিন্তু আমায় ফিরতে হবে শেষে,
আমার ঘরে আমারই এই দেশে।


             
                 

নস্টালজিয়া ৫ || পৃথা চট্টোপাধ্যায় || ন্যানো টেক্সট

নস্টালজিয়া ৫
পৃথা চট্টোপাধ্যায়


ছোটবেলার দিনগুলো যে এতো আনন্দের মুঠোয় ভরা ছিল তখন বুঝতে পারি নি। আজ লিখতে বসে মুঠো খুললেই তা ফুলঝুরির মতো ছড়িয়ে পড়ে । আমার এই আনন্দের ফল্গুধারা ছিল আমার ঠাকুমা যাকে আমি ও অন্য ভাই বোনেরা  'দাদা' বলেই ডাকতাম। আমিই প্রথম ঠাকুমাকে এই অদ্ভুত নামে (কারণ দিদি হলে তবু মানাত) ডাকতে শুরু করেছিলাম ।' দাদা ' শব্দটি আমি প্রথম বলতে শিখি ,কিন্তু আমার দাদা বা ঠাকুর্দা না থাকায় আমার প্রথম উচ্চারিত শব্দটি  ঠাকুমা সাদরে গ্রহণ করে এবং তাকেই দাদা বলা শুরু করি। গঙ্গাস্নান করতে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেলায় যাওয়া সিনেমা দেখতে যাওয়া সব কিছুতে তার সঙ্গ ধরতাম । তাহলে মাও খুব একটা কিছু বলতে পারত না, মায়ের অমত ধোপে টিকতো না।শুধু বলতো লেখাপড়াটা মন দিয়ে করতে তাহলে তারও মুখরক্ষা হবে মায়ের কাছে। শ্যামবর্ণ হলেও ঠাকুমার মুখের গড়নটি ভারি মিষ্টি ছিল। টিকালো নাক, হাঁটু ছাড়িয়ে কোঁচকানো চুল ।আমি তার মাথায় চুল বেঁধে বিনুনি করতে শিখেছিলাম। সকাল থেকে অ-দরকারি  সব কাজ সেরে একটু বেলা করে গঙ্গাস্নানে যেত ঠাকুমা।  আমি এবং পাড়ার দুতিন জন আমার বন্ধু তার সঙ্গ ধরতাম ।স্নানে যাবার আগে অসাধারণ দুটো গোলারুটি বানিয়ে চা দিয়ে খেত। আমার জন্যেও বরাদ্দ ছিল একটা। তার সঙ্গে কোথাও যাওয়া মানেই অবাধ স্বাধীনতা, অগাধ মুক্তির স্বাদ । জলে যতক্ষণ খুশি সাঁতার,  ঝাঁপাঝাঁপি করা যেত। স্নান সেরে অপেক্ষা করত আমাদের জন্য,  কখনো একটুও বকাবকি করত না বা মায়ের কাছে নালিশ করে বকা খাওয়াতো না। নশিপুর রাজবাড়ির রথযাত্রা আর ঝুলনের মেলায় যেতাম তার সাথে, অনেকটা রাস্তা হলেও হেঁটে যেতাম অনায়াসে। রিক্সা বা টাঙ্গা  (ঘোড়ার গাড়ি) করে যেতে পছন্দ করতো না,  হেঁটে গেলে পথে অনেকের সাথে দেখা আর গল্প  হোতো সেটা তার খুব ভালো লাগত।পৌষ মাসে যেতাম কিরীটেশ্বরীর মেলায়। নৌকায় চড়ে গঙ্গা পার হয়ে হলুদ সর্ষে খেতের মাঝখানে পথ ধরে  আমি আর ঠাকুমা যে কতবার গেছি এই মেলায় আমার আজও সেই দিনগুলো ছবির মত  মনে পড়ে। ঠাকুমা  ঠিক যেন আমার বন্ধুর মতো ছিল ।  কত বৃষ্টিঝরা অন্ধকার রাতে তার কোল ঘেঁষে আমি  রূপকথার রাজকন্যা-রাজপুত্র-দৈত্যর গল্প, সুয়োরানি দুয়োরানির গল্প, আলিবাবা-চল্লিশচোরের গল্প, টুনটুনির গল্প, ফিঙেপাখির গল্প শুনেছি। সেই স্বতঃস্ফূর্ত বাল্যকালে এখনকার  বাচ্চাদের মতো টি ভি দেখা,  গেম খেলা,  কার্টুন দেখা এসব কৃত্রিম আনন্দের জোগানের দরকার ছিল না আমার শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলোতে । ঠাকুমার হাতের  রান্না ছিল অনন্য,  খুব সাধারণ নিরামিষ রান্নাও তার হাতের ছোঁয়ায়  অমৃত লাগত। কুল, তেঁতুল, আমের আচার করতো দারুণ,  আমচুর করে রোদে দিত শুকোতে , আর সেই আমচুর তৈরি হবার আগেই কুলো থেকে বারবার শেষ হয়ে যেত।

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য ৫৭ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক বিভাগ

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী


 ৫৭.
কবিতার নতুন মানচিত্র প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছিলাম  আগের মানচিত্রে যেখানে জলাভূমি ছিল সেখানে তৈরি হবে নগর। এখানে একটা কথা পরিষ্কার করে জানিয়ে রাখতে চাই জলাভূমি ভরাট করে হাউসিং কমপ্লেক্স করার কথা বলিনি।সে ক্ষমতা আমার নেই। আমি শাসকের মদতপুষ্ট প্রমোটার নই। আমার কাজ কবিতা লেখা। নতুন কবিতা লেখা। যে কবিতা আমার আগে কেউ লেখেননি , সেই কবিতা লেখা। আর সেই কবিতা লেখার কারণেই কবিতার নতুন মানচিত্র নির্মাণের প্রসঙ্গ এসেছিল।
এই প্রসঙ্গে কিছুটা বিশদে যাবার জন্য আমি আমার 
' কবিতার মানচিত্র ' প্রবন্ধটির সাহায্য গ্রহণ করছি ।সেই প্রবন্ধটিতে আমি যা লিখেছিলাম , তার কিছু কিছু অংশ আমি আপনাদের পড়াতে চাইছি ।
১. Map Projection বা মানচিত্র অভিক্ষেপণ ভূ - বিজ্ঞানীদের একটি জরুরি বিষয়।
২. মানচিত্র নির্মাণ একটি জরুরি কাজ।সেই সমুদ্র- অভিযানের যুগ থেকে কিংবা তীর্থযাত্রীদের কাল থেকে মানচিত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য।কিন্তু কবিতার মানচিত্র তো আগে কেউ বলেননি। নতুন কবিতা লেখার জন্য নতুন মানচিত্র একটি আবশ্যিক আইটেম।
৩.  ৩ জুন, ২০০০ পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সভাঘরে কবিতা বিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য বলতে উঠে বলেছিলাম : নতুন মানচিত্র নির্মাণের অর্থ হল যেখানে সমুদ্র আছে সেখানে নিয়ে আসতে হবে পাহাড় বা মালভূমি , যেখানে ব- দ্বীপ আছে সেখানে আসবে মরুভূমি , নদীর পরিবর্তে রেললাইন ইত্যাদি কিছু কথা।
সেসময় যা বলেছিলাম তার মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক একটি বর্ণও ছিল। মানচিত্রে যা যা থাকে সেগুলিকে বর্জন না করে কেবলমাত্র স্থান পরিবর্তন করেছিলাম। এর প্রতিক্রিয়ায় সেসময় যাঁরা 'গেল- গেল ' রব তুলে হইচই  করেছিলেন তাঁরা নিজেদের কানে হাত না দিয়ে কাকের পেছনে দৌড়েছিলেন।
আমি চেয়েছিলাম কবিরা এখন নতুন কবিতা লিখুক  । একঘেয়েমি থেকে মুক্ত হোক । এই টুকু চাওয়াটা কি খুব অন্যায় ছিল আমার ! জানি না। রক্ষণশীলদের একটা নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে সব কালে। সব যুগে। ইতিহাসে এর অসংখ্য নজির আছে।
আর মনে রাখবেন চিরদিন রক্ষণশীলরাই সংখ্যাগুরু। আর পরিবর্তনকামীরা সংখ্যালঘু 
শেষকথাটি হল : ইতিহাস পরিবর্তনকামীদেরই মনে রেখেছে । কবিতার কী কী পরিবর্তনের সূচনা আমরা করেছিলাম তার প্রতিফলন হল আজকের কবিতা ।
এখন অল্প দু-একটি উদাহরণ পেশ করছি।
১.  একটা মন্ত্রমুগ্ধ ক্রাচ হেঁটে আসছিল সাঁকো পেরিয়ে ॥ প্রভাত চৌধুরী
২. ভালোবাসা আমার কাছে একটা বৃত্ত এই বৃত্তের ব্যাস আছে ব্যাসার্ধ আছে জ্যাও রয়েছে॥ কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়
৩.   একটি বুদবুদের গঠনতন্ত্রে রয়েছে একটি জলবিন্দুর প্রতিবাদ॥ সমীর রায়চৌধুরী
৪. তৎসম শব্দের মতো ঝরে পড়ছে বৃষ্টি ॥ নাসের হোসেন
৫. মানুষের মন মানে নানারকম আয়নায় তৈরি কোনো কুয়াশা ॥ বাপন চক্রবর্তী
৬. ক্ষীণ গোধূলির মাথা একখানা ফুলস্কেপ কাগজ দিয়েই ঢেকে দেওয়া যায়॥ অনিন্দ্য রায়।
৭. আমাদের সম্পর্কও বহুব্রীহি সমাসের মতো ॥ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ।
৮. আলোকবর্ষ শব্দটা বললেই মেহগিনির ছবি তৈরি হয় ॥ রুদ্র কিংশুক।
৯.  পিছুডাকগুলি কখনো-সখনো পালিয়ে বাঁচতে চায় ॥ মুরারি সিংহ।
১০. হাসপাতালমুখী সব রাস্তাই মিতভাষী হয়॥ রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই ১০ টি মাত্র উদাহরণ দিলাম। মাননীয় পাঠক আপনারা বিচার বিবেচনা করে দেখুন আমাদের নতুন মানচিত্র নির্মাণের নমুনাগুলি। প্রতিটি লাইন ধরে ধরে পড়তে থাকুন। দেখুন এগুলি প্রকৃতই নতুন কিনা।
আগামীকাল এগুলির ব্যাখ্যা দেবো না , কথা দিলাম।ব্যাখ্যা যে যাঁর নিজের মতো করে করবেন। আমি পাঠকের সামনে হাজির করলাম মাত্র।

গ্রিসের নতুন কবিতা রুদ্র কিংশুক ইভা স্টেফানি-র কবিতা

গ্রিসের নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক
ইভা স্টেফানি-র কবিতা


গ্রিক কবি, চিত্র-পরিচালক এবং চিত্রশিল্পী
ইভা স্টেফানি (Eva Stefani, 1964)-র  জন্ম আমেরিকায়।তাঁর পিতা-মাতা অবশ্য গ্রিক।  সিনেমা ও নৃবিজ্ঞান নিয়ে স্তেফানি পড়াশোনা করেছেন পারি, লন্ডন ও ন‍্যুইয়র্কে‌। তাঁর বিখ্যাত সিনেমাগুলি:
আথিনি ১৯৯৫
আক্রোপলিস, ২০০১,
দ্য বক্স  ২০০৪ প্রমুখ।

 টানা গদ‍্যে লেখা কবিতায় তিনি এনেছেন পশুপক্ষীর চিত্রকল্প । কিন্তু সেগুলো মানুষের নানান অনুভবের অভিব্যক্তির চিহ্নায়ন বা চিহ্নকল্প।

১.
নববর্ষের পূর্ব সন্ধ্যা

নতুন বছর আর কেক নেই। দোকানপাট বন্ধ।। আমি দিলাম আমার বাম স্তন হালকা মিষ্টি রুটি হিসেবে। আমার বাবা ছুরি দিয়ে কাটলেন।খ্রিষ্টের জন্য এক টুকরো,, গরিবদের জন্য এক টুকরো, বাড়ির জন্য একটুকরো। বাবা-মা-বোন। নতুন বছর সবার খুব ভালো হোক।

২.
 পরিবার

 আমরা সবাই একসঙ্গে রান্না ঘরে ঘুমাই যাতে আমরা টিভি দেখতে পাই। আমরা একে অপরের ওপড়ে শুই। প্রথমে বাবা উপুড় হয়ে। মা বাবার পিঠে। তাদের মাঝখানে এক ভাই।
যমজ দু'জন ওপরে । এবং অন্তিমে সবার ওপরে কন্যা মুখ নামিয়ে। আমাদের কম্বলের দরকার হয়না কারন আমরা পরস্পরকে উষ্ণ রাখি। আর আত্মীয়রাও হেঁটে যায় এই বিছানায় যদি তারা নিয়ে আসে তাদের নিজস্ব রিমোট কন্ট্রোল ।
৩.
আমি হারিয়েছিলাম আমার বুটজুতো এবং ঘরে আটকে থাকলাম কারণ খালি পায়ে আমি কোথায় যাব? যখন ভোর হলো আমি দেখলাম আমার পিঠে সবুজ কুঁজ। আয়নায় দেখলাম একটা পিস্তা গাছ আমার দুই কাঁধের মধ্যে গজিয়ে উঠেছে। গাছের নিচে মায়েরা এবং ছেলেমেয়েরা ছায়ার উপভোগে এদিকে ওদিকে শুয়ে আছে।

৪.
গভীরতা

আমার পেটে একটা ওজন আছে। আমি তাদের অপারেট করতে বলি। খননে সাহায্য করতে আমি ধরে ছুরি-কাঁচি। প্রথমে একটু বালি আর সাদা নুড়ি‌। আমি আরো গভীরে যাই আর একটা নরম দলায় ধাক্কা খাই।  সমুদ্র আগাছার ঢিপি। আমি খুজে চলি কিন্তু ছুরি-কাঁচি বৃথা নড়ে চলে। সব সারল? আমার সন্দেহ। আমি যন্ত্রপাতি ছুড়ে ফেলি এবং দগ্ধ শরীরে হাত চালাই। কিছু একটা খুঁজে পাই। একটা বিশাল শিকল। আমি টেনে বার করি। শেষ সব যন্ত্রণার কারণ। আমার বাবার পুরানো ঘড়ি।

আটপৌরে কবিতা ৩৯১- ৩৯৫ || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ


আটপৌরে কবিতা
নীলাঞ্জন কুমার

৩৯১

পুঁই/ লাউ/ নটে
     )শাক(
না খেলে জন্ম বৃথা ।

৩৯২

সংঘাত/ দ্বন্দ্ব/ প্রতিবাদ
      ) বিদ্রোহ  (
বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে ।

৩৯৩

স্থাবর/অস্থাবর/ সর্বস্ব
      ) সম্পত্তি  (
থাকলেও অশান্তি না থাকলেও ।


৩৯৪

জমি/ জিরেত/ ফসল
     )  সচ্ছল  (
মানুষ দেখতে গ্রামে যান ।

৩৯৫

অংশ/ ভাগ/ বেড়া
      )  নিজস্ব  (
আমার জায়গায় আমি রাজা ।

সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০

মাইকেল মধুসূদন দত্ত- এর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জানাই

মাইকেল মধুসূদন দত্ত
(১৮২৪–১৮৭৩)

ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি: দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক),বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ ইত্যাদি। মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় কপর্দকশূন্য করুণ অবস্থায় মৃত্যু হয় এই মহাকবির। ৃৃৃৃ  ৃৃৃৃৃতথ্য ৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃঋণ~ উইকিপিডিয়া

শীলাবতী অববাহিকার ইতিহাস ও কৃষ্টি~ ৫ || মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি || প্রতি সোমবার

শীলাবতী অববাহিকার ইতিহাস ও কৃষ্টি~ ৫
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি

আমার নিজের গ্রাম রাজবল্লভপুর সহ বৃকভানুপুর, কিশোরপুর, গড়বেড়িয়া, এলনা, লাউমারা, রঘুনাথপুর, বড়াই, দেওয়ান, কালিন্দীপুর, পাঁচামি, নিত্যানন্দপুর, চৈতন্যপুর, ধর্মপোতা ইত্যাদি গ্রামগুলি এই শীলাবতী নদী এবং তার খালের মধ্যবর্তী স্থানে অর্থাত্‍ বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থান করছে। স্বাভাবিকভাবেই বর্ষাকালে এই গ্রামগুলির মানুষজনের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। প্রায় বছরই শীলাবতীর বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়ে গ্রামগুলি। বাইরের সঙ্গে তখন সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এলাকাগুলি। যাতায়াতের একমাত্র যোগাযোগ তখন নৌকা। বন্যাতে প্রায় প্রতি বছরই এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ১৯৭৮ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যার কথা ভাবলে তো শিউরে উঠতে হয়। সেবার শীলাবতীর বিধ্বংসী বন্যায় সে যে কী ক্ষতি হয়েছিল তা এককথায় অবর্ণনীয়।
কাঁচা মাটির বাড়ি একটিও ছিল না সেবার। সব বন্যার জলে তলিয়ে গিয়েছিল। কত নিরীহ গবাদি পশুর যে প্রাণহানি ঘটেছিল তার ইয়ত্তা নেই। বিঘার পর বিঘা চাষযোগ্য জমি সেই বন্যাতে বালিচাপা পড়ে গিয়েছিল। তার রেশ এখনো এত বছর পরেও এলাকার মানুষজনকে বহন করে বেড়াতে হচ্ছে। ১৯৭৮ সাল। তখন এই প্রবন্ধকারের বয়স ছিল ১৩ বছর। ক্লাস এইটের ছাত্র ছিলাম। সচোক্ষে দেখেছিলাম সেই প্রলয়ঙ্করী বন্যার মারাত্মক রূপ। মনে পড়ছে সেই বন্যার সময় আমাদের পরিবারকেও বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র উঁচু ভিটায়
গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। প্রায় এক মাস অন্যত্র বসবাস করতে হয়েছিল। শুধু আমাদের নয় এরকম দুর্ভোগ অসংখ্য মানুষকে পোয়াতে হয়েছিল। এখনো পোয়াতে হয়। এমনিতেই শীলাবতী বেশ শান্ত, ধীর। কিন্তু বর্ষার জল পেলেই সে ফুলে ফেঁপে উঠে। ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়ে আছড়ে পড়ে গ্রামগুলিতে। আমরা প্রতি বছরই ঘাটালে যে বন্যার কথা শুনি, শুনি ঘাটাল বন্যায় ভেসে গেছে তা এই শীলাবতী নদীর জন্যই।
   একসময় শীলাবতী নদী এবং তার খালের মধ্যবর্তী গ্রামগুলিতে রাস্তাঘাট বলতে কিছু ছিল না। হাঁটু অব্দি, কোথাও কোমর অব্দি কাদায় ভরাট থাকত। মোটর বাইক তো দূরের কথা সাধারণ বাই সাইকেল পর্যন্ত নিয়ে যাতায়াত করা যেত না প্রায় অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত। এখন রাস্তাঘাটগুলির অনেক উন্নতি ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষই যে যার এলাকায় সারাবছর নদী পারাপার হওয়ার জন্য বাঁশের সেতু বানিয়েছে। কিন্তু বর্ষাকালে সে সেতু আর থাকে না। বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়। বন্যার জল সরে গেলে গ্রামের মানুষ নিজেদের উদ্যোগে আবার সে সেতু বানায়। সারা বছর ভাঙাগড়ার খেলা চলে। ভাঙাগড়ার অনন্য নজির বোধহয় এই এলাকাতেই আছে।
 
 
   যাইহোক শীলাবতী নদী তীরবর্তী জমিগুলি বেশ পেলব এবং উর্বর। যার ফলে নদীর দুধারের জমিগুলিতেই ব্যাপক চাষবাস হয়ে থাকে। ধান, আলু গম, তিল সর্ষে, মটর, মুগ ইত্যাদির রমরমা চাষ এখানে। আর হয়ে থাকে ব্যাপক শাক-সবজি ও কাঁচা আনাজপতির চাষ। কপি, বেগুন, মূলো, পালং, করলা, উচ্ছে, বরবটি, সিম, ওল, কচু, তরমুজ, কুঁদরি, পটল ইত্যাদি। কী চাষ নেই এখানে? সব চাষ হয়ে থাকে শীলাবতীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। আর সেসব বাজারজাত করার জন্য যত্রতত্র গড়ে উঠেছে সবজিবাজার। এখান থেকে প্রচুর শাকসবজি কলকাতা হয়ে অন্যত্র দূর-দূরান্তে চলে যাচ্ছে। এই কাঁচা আনাজপাতির চাষবাস করে এলাকার অনেকেই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। তবে বর্তমানে এখানে অর্থনৈতিক কাঠামোটি দাঁড়িয়ে আছে মূলত আলু চাষের উপর। শীলাবতীর অববাহিকা জুড়ে আলুর ব্যাপক চাষ। টন টন আলু এখানে উত্পমন্ন হয়। তা সংরক্ষনের জন্য গড়বেতা, হুমগড়, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোণা, ঘাটাল, আরামবাগ প্রভৃতি এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য হিমঘর। আলু চাষ হওয়ার জন্য এই সব এলাকায় অনেকেই আলু ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। গড়ে উঠেছে আলু ব্যবসায়ী সমিতি। তাই যে বছর আলুর দাম থাকে সে বছর এলাকার চাষিদের মুখে আনন্দের সীমা পরিসীমা থাকে না, কিন্তু যে বছর আলুর দাম ঠিকমতো থাকে না সে বছর চাষিদের মাথায় হাত পড়ে যায়। আলু চাষের পাশাপাশি ধান চাষও হয়ে থাকে প্রচুর। আউশ, আমন এবং বোরো এই তিন রকমেরই ধান চাষ হয়ে থাকে বিভিন্ন এলাকায়। বর্ষাকালে যেহেতু ঘাটাল এলাকাটি শীলাবতীর জলে ডুবে থাকতো তাই এখানে বর্ষাকালে তেমন ধান চাষ হোত না, হোত বোরো চাষ। যা শীতের মরশুমে হয়। তবে ইদানিং বন্যার প্রকোপ কিছুটা কম হওয়ার এই এলাকাতেও আমন ধানের চাষ হচ্ছে।
  একসময় শীলাবতীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আখ এবং পাট চাষ হোত প্রচুর। জমির পর জমি আখ চাষ হোত। বছর শেষে শাল বসত, গুড় তৈরি হোত। কিন্তু সেসব আজ ইতিহাস। আলু চাষ এসে যাওয়ায় আখ ও পাটের চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। একবছর তো আর একটা চাষের জন্য একটা জমিকে ফেলে রাখা যায় না। আলু চাষ আসায় আর একটা সুবিধা হল, জমিগুলো প্রায় তিনফসলি হয়ে গেল। যার ফলে এখনকার বেশির ভাগ জমিই তিনফসলি, কোনো কোনো জমি দোফসলি। একফসলি জমি আর নেই বললেই চলে।

উনত্রিশ পয়েন্ট ফাইভ - ২১ || সোমনাথ বেনিয়া || কবিতা

উনত্রিশ পয়েন্ট ফাইভ - ২১
সোমনাথ বেনিয়া


জানি না, দূর বলতে যতটা দেখি, সেটাই জীবন কিনা
ওপাড় বলতে বুঝি কেউ বঁড়শি ঝুলিয়ে রেখেছে, টোপ
কোন ইন্দ্রিয়কে ধামাচাপা দেবো, নিজের কি, সেটাও প্রশ্ন
এই তো সন্ধ‍্যা মানে অনেকেই নিজেকে অপরাধী ভাবে
মনে থাকার কথা নয়, দেবীর ঋতুস্রাবে দেবতার জন্ম
শুধু ভাবছে হৃদয়, পানকৌড়ি, ডুব দিলেই মাছের ঝাঁক
কে কাকে শিকার করে, রক্ত এক্সপায়ারি ডেট পেরোলে
তবে কি সব আনন্দঘন পথের শেষে নো ম‍্যানস ল‍্যান্ড
বিষ মাখানো তর্জনীর সূচিপত্র, তফাত যাও, তফাত ...
অন্তরকে বেশি গুরুত্ব দিও না, একটু পাগলাটে ধরণের
জিজ্ঞাসা উঠতে পারে, কবেই-বা সে সুস্থ ছিল, অসুখপ্রিয়
কোলাহল শেষে কার চোঁয়াঢেকুরের কাছে টোকেন চাইবে
কাঁধে হাত রাখলে যে নিশ্বাস দীর্ঘতম, তাকে কী নামে ডাকবে

কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার || প্রাত্যহিক বিভাগ

কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার


চন্দন বনের রুদ্ধ সংগীত । বিশ্বজিৎ রায় । সারঙ্গ প্রকাশনী । একশো টাকা ।

' সম্ভাবনাগুলি মিহি গুঁড়ো হয়ে মিশে যায়/  অন্তর্জালে বেজে ওঠে/  স্বপ্ন মাদল ...' নয়তো ' ধুলোমাটি মেখে/ নদীতে পা ডুবিয়ে বসে থাকব, আর/ ভাটিয়ালি বাজিয়ে লিখব/  নতুন জীবনের কবিতা ...'-র মতো কবিতার লাইন উপহার দেওয়ার কবি বিশ্বজিৎ রায় তাঁর সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ ' চন্দন বনের রুদ্ধ সংগীত ' -এ ক্রমশ আরো বেশি প্রত্যাশা গড়ে তোলেন । বিশ্বজিৎ লেখেন তাঁর মতো নিজস্ব কৌশলে, তাঁর লেখার ডিকসনে থাকে জীবনকে ধরাছোঁয়ার সঙ্গে লেগে থাকা মায়ান্ঞ্জন, যা অস্বীকার করা যায় না । সে কারণে: ' রাতে টুকরো চাঁদের আলো নেমে এসে/  স্নিগ্ধ আদর বুলিয়ে দিয়ে যায় আমার সর্বাঙ্গে ....' -র মতো পংক্তি চিত্তে  আরাম দিয়ে যায় ।
            বিশ্বজিৎ ঠিক যতখানি ভালোমানুষ  তাঁর কবিতায় ঠিক ততটাই ভালোমানুষির সন্ধান পাই । তাঁর কবিতা অহেতুক স্মার্ট নয়, সচেতন কবিতা পাঠক যা চান তাই তিনি নিরিবিলিতে ছড়িয়ে দেন । অহেতুক জটিলতার ভেতরে তিনি নেই ।
          কবির সমস্ত বই পড়ে ফেলার কল্যাণে বলতে পারি , তাঁর কবিতা প্রতিটি কাব্যগ্রন্থে আলাদা আলাদা উচ্চারণ দিতে সচেষ্ট । ব্যন্জ্ঞনায় ঘিরে রাখে পাঠককে ।
সেখানে কবির  ত্রুটি ধরা গৌণ ।
            আমরা আশা করব বিশ্বজিৎ ' আমার পোশাক খুলে পড়ে, / আমার উর্ধাঙ্গে আলো/ নিম্নাঙ্গে অন্ধকার খেলে যায় '-এর মতো বোধকে বশ করে নেওয়া কবিতা আরো উপহার দেবেন । মুক্তিরাম মাইতির প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে একটাই শব্দ উচ্চারণ করা যায়,' ওয়াও ' ।

উড়ে যাবো || বন্দিশ ঘোষ || কবিতা

উড়ে যাবো
বন্দিশ ঘোষ



বৃষ্টি ডাকছে, ডাকতেই পারে
রোদ্দুর বলে আয় আয় -
নেচে মেতে দু-চারখানা শব্দ হয়ে
ভাবি উড়ে যাবো রাগ রাগিণীর সাথে,
ভাসতে থাকবে সজানা বলামা
সাথে আরো থাকবে সেই অবশিষ্টাংশ -
যার কোনো ধর্ম নেই ভয় নেই
সাধ্য নেই অসাধ্য নেই
তফাৎ নেই নকশা নেই
নতুন নেই পুরাতন নেই...

একটা দুটো বাক্য নিয়ে
এদিক ওদিক অদল বদল করে
যোগ বিয়োগ করে
উড়ে যাবো..


                     

আটপৌরে কবিতা || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ

আটপৌরে কবিতা
নীলাঞ্জন কুমার


৩৮৬

উৎকন্ঠা/ আশঙ্কা/ শ্বাসরোধী
           ) বিষয়  (
ঠান্ডা মাথায় সমাধান হয় ।

৩৮৭

সুরক্ষা/  নিরাপত্তা/ জীবন
         ) সেনা  (
রাতে নিরাপদে ঘুমোতে পারি ।

৩৮৮

রিমঝিম/ রুমঝুম/ ঝুমঝুম
     ) শব্দ  (
আনন্দে রক্তে বাজতে থাকে ।

৩৮৯

পিশাচ/ ডাইন/ প্রেম
      ) অপদেবতা  (
সব আমাদের ভেতরে আছে ।

৩৯০

কৌশল/ মানুষ/ আলো
       ) ম্যাজিক  (
হাতসাফাই ভেলকি বিস্ময় আনন্দ ।

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য ৫৬ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী

৫৬.
গতকাল লিখেছিলাম আজ নতুন এপিসোড -এর কথা লিখব। কী সেই নতুন এপিসোড তা কিন্তু গতকাল জানতাম না। এই দীর্ঘ ৭৭ বছর জীবনে ঠিক কতগুলি নতুন এপিসোড থাকতে পারে বা আছে তা জানার জন্য কোনো যন্ত্র আমাদের হাতের কাছে মজুত নেই।  যন্ত্রটির প্রাপ্তিস্থানও জানি না । যতটুকু জানি ঠিক ততটুকু দিয়েই খেলাটা খেলে যেতে হবে। অর্থাৎ লেখাটা চালিয়ে যেতে হবে।
আমি তখন যেটুকু জানতাম , তার একটা তালিকা করা যেতে পারে।এই তখনটা ঠিক কখন ? যখনকার কথা এখন লিখছি। অর্থাৎ কবিতাপাক্ষিক - এর তৃতীয় বর্ষ পূর্তি উৎসবের সময়। কিংবা কবিতাপাক্ষিক-এর বইপাড়ায় একটা বসার জায়গা পেয়ে যাবার সময়।ক্যালেন্ডারের মাপকাঠিতে 1995- 96 ।
এখন আমার নির্বাচিত ঘটনাগুলি পরপর লিখছি :
১. 19 নভেম্বর 1995-এ সাক্ষাৎকার সিরিজের প্রথম
       কবিতাটি লেখা শুরু করি।
২. কবিতাপাক্ষিক ৬৩ সংখ্যায় প্রথম ২০ টি
      সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় 09 ডিসেম্বর 1995।
৩ . কবিতাপাক্ষিক ৬৯ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল
      09 মার্চ 1996 ।
       ওই সংখ্যা থেকেই কবিতাপাক্ষিক-এর প্রথম
        মলাটে লেখা শুরু হয়েছিল নতুন শ্লোগান :
        কবিতার নতুন মানচিত্র নির্মাণের জন্য
                            কবিতাপাক্ষিক
 এখন একবার সময় ও দূরত্বের অঙ্ক করা যাক। 1995-এর 19 নভেম্বর থেকে 09 মার্চ 1996 -এর ভিতর কতবার নতুন সকাল হয়েছিল বা কতগুলি তারিখ পার হতে হয়েছিল সেটি নির্ধারণ করতে সমর্থ হলেই নতুন মানচিত্র-র প্রকল্পনাটি বোঝা যাবে।অর্থাৎ এই সময়সীমার মধ্যেই ঘটে গিয়েছিল সেই অলৌকিক ঘটনাটি।
মানচিত্র তো দেশের হয় , বিদেশের হয়। ভৌগোলিক হয় , সামাজিক / রাজনৈতিক হয়। নদীর হয় , পর্বতের হয়। মালভূমির হয় , মরুভূমির হয়।
তার সঙ্গে যোগ করলাম কবিতার মানচিত্র ! কই , কবিতার মানচিত্র-র কথা তো আগে কখনো শোনা যায়নি। না শোনার কারণ হল : কবিতার যে মানচিত্র হতে পারে এই কনসেপ্টটা এর আগে তৈরিই হয়নি।
আমরা , গৌরবার্থে বহুবচন , প্রথম কবিতা প্রসঙ্গে মানচিত্র -কে যুক্ত করলাম। বললাম আগের কবিতায় যেখানে জলাভূমি ছিল , এখনকার কবিতায় ঠিক সেখানেই নগর গড়ে তুলতে হবে।  অর্থাৎ কবিতার  আগাপাছতলা পাল্টে দিতে দিতে হবে। আর এই মহান কাজটি সম্পন্ন করতে হবে আমাদের। হ্যাঁ , আমাদেরই।
এর জন্য আবিষ্কার করতে হবে নতুন নতুন পরিসর।
ঠিক তখন থেকেই আমরা আধুনিকতা থেকে মুক্ত হতে সচেষ্ট হয়েছিলাম।
তার অল্প কিছু নিদর্শন আগামীকাল।

গ্রিসের নতুন চিন্তাচেতনার কবিতা || রুদ্র কিংশুক || কিরিয়াকস সিফিল্টজোগলু-র কবিতা

গ্রিসের নতুন চিন্তাচেতনার কবিতা
রুদ্র কিংশুক
কিরিয়াকস সিফিল্টজোগলু-র কবিতা


কিরিয়াকস সিফিল্টজোগলু (Kiriakos Sifiltzoglou, 1983)-র জন্ম  গ্রিসের ড্রামাতে। ২০০৪ এ তিনি আইনশাস্ত্রে স্নাতক হন এবং ২০১১ তে তিনি ইউনিভার্সিটি অব থেসালোনিকি  থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রি সায়েন্সে দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রী দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রী দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রী থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রী দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রী সায়েন্সে দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রী দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রী সায়েন্সে দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রী থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন । এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থ। সেগুলি হল:
To Each His Own Grave, 2007
Half Truth, 2012
In the Style of an Indian, 2014
এবং
In the House of the Hanged 2015 প্রমুখ।

Austerity Measures:The New Greek Poetry, edited by Karen Van Dyck (Penguin Books, 2016), Futures: Poetry of the Greek Crisis, edited by Theodore's Choti (Penned in the Margins, 2015)--- এই দুই  সংকলনে তাঁর কবিতা অন্তর্ভুক্ত। ২০১৩ থেকে তিনি পরিকল্পিতভাবে ফটোগ্রাফিও করে আসছেন। তাঁর তোলা ফটো থেকে দুটো সাহিত্য পত্রিকার প্রচ্ছদ নির্মিত হয়েছে । এছাড়া তাঁর অনেকগুলি ফটোগ্রাফি বিভিন্ন কবিতা-গ্রন্থের প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

১.
পরিযায়ী পাখি

দেশ ভুগছে
ভাইরাল রক্তস্রাবী জ্বরে

দুর্বল বসন্ত
আর মাথাব্যথা
 আতিথেয়তা হঠকারী প্রকাশ প্রকাশ

অসময়ের জলপরী
সেনেগাল থেকে আসা
ঘুমিয়েছে অ্যান্টিকিথেরাতে

ঘুম হতে পারে
ভবঘুররানির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা

 পরিবেশ ঠিক
ততটা প্রাকৃত নয়
অপ্রাপ্তবয়স্ক স্তন্যপায়ীরা
দুধ খায় অপটুভাবে
  কী এসে যায়  যদি আমরা হই
শ্রেষ্ঠ  আপ‍্যায়ক

দোষারোপ
সবসময় পরে
লাল
             বক্ষের
                          ওপরে

২.
পথচ‍্যূতি
সিদ্ধান্তকারীরা পারলে পাল্টে দিত
এমন কি বজ্রপাতের দিক
কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে
যেখানে বুলেট আছরে
 পড়ে যখন অন্ধকার নামে
আর মোরগগুলো ডেকে উঠেছিল

                                            অনেক যুগ আগে

৩.
অর্ধসত্য থেকে
উচ্চতা অদৃশ্য হয়েছে
 ঘটনার উচ্চতা থেকে

এখন আমরা কেবল সওদা করি ঘটনার

 তারা জানত এটা ভালোমতোই : সেইসব  সাজনেদার
যারা ভেসে বেড়াতো মনে হয়
চিহ্নিত।



কতবার দেখেছি যে তাকে || শংকর বাজাল || কবিতা

কতবার দেখেছি যে তাকে
শংকর বাজাল

কতবার দেখেছি যে তাকে
খেলার মাঠে
কলেজ ক্যাম্পাসে
অফিস টেবিলে
আর হাসপাতালেও
 চিকিৎসাকারীর বেশে।

আশ্বিনের আলো ছোঁয়া
সকালের স্নিগ্ধ মুখ।
শরৎ শিশির মাখা
কোমল বিশ্বাস।

প্রেম যে সুন্দর সেই
আলোর মত এসে
 লেগেছিল প্রাণে।

চোখ ছুটে চলে যায়
তার পায়ে পায়ে।
যেতে কি পেরেছি আমি !

সঙ্গীহীন বিষণ্ণ দুপুর
ডেকে নিয়ে আসে তাকে
হয়না কোনো ই কথা
আজো শুধু চেয়ে থাকা।

চোখে তার সেই আলো
আশার হাতছানি দেয়;
যেতে আমি পারি কি আজও ?


রবিবার, ২৮ জুন, ২০২০

কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার || প্রাত্যহিক বিভাগ

কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার

স্বরবর্ণ জলে পড়ে গেছে । অদীপ ঘোষ । পাঠক । একশো টাকা।

সমালোচনা করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি বেশির ভাগ কবির ভেতরে অহেতুক বেশি বেশি কথা বলার প্রবণতা  মজ্জাগত । দামী কমদামী মধ্যদামী কবিদের ভেতর এই প্রবণতা যে কি সর্বনাশ করে যাচ্ছে তা সে সব ধৃতরাষ্ট্রদের কে বোঝাবে! একই কথা বলার মধ্যে পাঠককে গবেট ভেবে নেওয়া ছাড়া আর যে কিছু থাকে না তা গরিষ্ঠাংশ কবিরা ভাবে না।অবশ্য কবি অদীপ ঘোষ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম । তাই তিনি কবিতা সেরে ফেলেন দুই থেকে পনের কুড়ি লাইনের মধ্যে যা এক লহমায় কবির ভাবনা সচেতন পাঠকের মনে সন্ঞ্চারিত করতে যথেষ্ট বলে মনে করি । আর যখন তাঁর সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ  ' স্বরবর্ণ জলে পড়ে গেছে '-র ভেতরে: ' মদের নেশায় চুর আরেক ঈশ্বর মুখে চালান করল ঈশ্বরের ভগ্নাংশ/ বাড়ি ফিরে মাতালটা কালসিটে এঁকে দিল বৌয়ের গতরে । ' ( ' জীবশীব ') তখন কবিতার ক্যারিশমা বোঝা যায় ।
        কবি আগের কাব্যগ্রন্থগুলির থেকে বেশ সরে এসেছেন , তাঁর কবিতায় সামাজিক অবস্থান টের পাওয়া যাচ্ছে ।  নেই শব্দের কেরামতি, আছে জীবনভিত্তিক কবিতার উপাদান । তার প্রমাণ তিনি দেন  এসব কবিতায় : ' পাহাড় কতটা উঁচু মানুষ তা মাঝে মাঝে মাপে/  পাহাড়ের তাতে কোন হেলদোল নেই ' ( 'মহান ') , ' অহংকার আসলে একটা অসুখ/ চূড়ান্ত নিঃসঙ্গতায় তার নিরাময় ' ( ' রোগারোগ্য ')-র মতো দুলাইনের কবিতাগুলি ।
          অদীপের কবিতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার অবকাশ আছে,  তবে এখন নয় । অন্য কোথাও অন্য কোনখানে । দেবাশিস সাহার  প্রচ্ছদ কেবলমাত্র ভালোই বলা যায় ।

রম্যরচনা || ভুল ভুলাইয়া~১ || কাশীনাথ সাহা

রম্যরচনা

ভুল ভুলাইয়া ( ১ম পর্ব)
কাশীনাথ সাহা

মানুষ মাত্রই ভুল করা। এক্কেবারে হক কথা। ভুল করা মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার। ভুল করুন ক্ষতি নেই, তবে ব্রাদার ভুলের মাত্রা জ্ঞানটা ঠিক রাখা চাই। ডোজ কমবেশি হলেই সব্বোনাশ। এমন ভুল করবেন না যে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত নেই।
আমাদের প্রথম ভুল কিশোর বয়সে। ওই বয়সেই বুকে কৃ্ষ্ণচূড়ার ফুল ফোটে। থোকা থোকা লাল নীল হলুদ বেগুনি ফুল।গন্ধ না থাকুক বাহার আছে। সেই সুগন্ধিতেই মানুষ প্রেমের গাড্ডায় পড়ে খাবি খায়। তুম মেরী দিল কা ধড়কন!  বার তের বছরের কিশোর, যার ভাল মতো দিল-ই তৈরী  হয়নি তারও ধড়কন!  ক্লাসে শিক্ষক মোগল সাম্রাজ্য বিস্তার পড়াচ্ছেন, আর ছাত্রের মাথায় তখন টুনি- টুনটুনি। টুনি বাল্ব জ্বলছে নিভছে। ঘোষাল পাড়ার টুনি দুপাশে বিনুনি ঝুলিয়ে স্কুলে যায়, ছাত্রের মন বৃন্দাবন। সেই টুনির টানে টালমাটাল। স্যর জিজ্ঞেস করলেন, দীপক দিল্লির সিংহাসনে প্রথম কোন মহিলা প্রথম সম্রাজ্ঞী হয়েছিল? দীপকের সিংহাসনে তখন টুনির ফোকাস। হাসি হাসি মুখে দীপক বলল, টুনি স্যর। টুনি? কোন টুনি?  মেরা দিল কা মোরব্বা। পাশ থেকে গনশা ত্রুটি সংশোধন করে দেয়। মোরব্বা নয় উল্লুক, মোহাব্বত। দিল কা মোহব্বত। সারা ক্লাসে তখন হাসির সুনামি। স্যর বললেন, বাবা দীপক এই বয়সে সকলেরই একটু আধটু ঘোর লাগে।  মোহব্বতের ঘোরটা কাটাও বাবা, নইলে গাড্ডায় পড়বে। সেই ঘোর আর কাটলো না। গীয়ার পাল্টে পাল্টে কোনরকমে ক্লাস নাইন। নাইনে তিনবার। ঘোর যখন কাটলো তখন জীবন এগিয়ে গেছে দীপক খাবি খাচ্ছে পচা ডোবায়।
বিয়ে করাও একটা মারাত্মক ভুল। মানুষ বিয়ে করে কেন? সারাজীবন গুঁতোগুঁতি করবার একটা হৃষ্টপুষ্ট পার্টনারের জন্য। সারাজীবন এ ওকে আঁচড়ায় ও একে গুঁতোয়। প্রেম ফ্রেম বোগাস। ওসব সিনেমা, গল্প উপন্যাসে হয়। বাস্তব জীবনে বসন্তকাল নেই। হয় গ্রীষ্ম নয় বর্ষা। জ্ঞানপাপী হয়ে তাই বিয়েটাই করে ফেলি। জীবনে বিয়ে করাও ভুল, বিয়ে না করাও ভুল। মানুষকে যে কোন একটা ভুল করতেই হয়। অতএব বিয়ে।। দিল্লীকা লাড্ডু না খেয়ে কেন পস্তানো!  খেয়েই দেখি যা থাকে কপালে। বউ মানে জ্যোৎস্না রাতে দীঘার সী বিচ। পূর্ণিমা রাতে খোলা ছাদে, সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে...। বিয়ের প্রথম প্রথম জ্যোৎস্না থাকে, দীঘা মন্দারমনির সী বিচ থাকে। রবি ঠাকুরের গান থাকে।বউয়ের নরম কোলে মাথা রেখে জয় গোস্বামী, সুনীল গাঙ্গুলিও লেজ ঝাপটায়। সবেতেই সুর। শ্যাওড়া গাছকেও দেবদারু মনে হয়। তারপর বছর ঘুরতেই সব প্রেম ফরসা। সব ধূ ধূ মরুভূমি। এই ভুলের হাত ধরে সন্তান জন্মায়। সেই সন্তানও ভুল করে  হিসেবের গন্ডগোলে এসে গেছে। মা বাবার দিন গোনার হিসেবের গন্ডগোলে ল্যান্ড করেছে। ভুল করে এসেই যখন পড়েছে, তখন গ্রীনরুমে থাকুক। এই নিয়ে স্বামী স্ত্রী তে অশান্তি। এখন স্ত্রী রা সহজে মা হতে চায় না  ওতে চটক কমে যায়। গ্লামার চটকে যায়। স্ত্রীর অভিযোগ, দিলে তো আমার জীবনটা বরবাদ করে!  এখন আমি কি করি!  বোগাস।
এই রকম ভুলের হাত ধরে সন্তান জন্মায়। নার্সিং হোমে নার্সের ভুলে সেই সন্তান আবার অদলবদল হয়ে যায়। বহুৎ কাঠখড় পুড়িয়ে থানা পুলিশ করে সেই সন্তান আবার স্ব মহিমায় স্বস্থানেই ফিরে আসে।
সংসার জীবনে ছোটখাটো ভুলও মারাত্মক হয়ে যায়। স্কুলের ফাস্ট বয় মাধ্যমিক পরীক্ষায় ব্যাক পেয়ে দুঃখ হতাশা অপমানে জীবনকে গুডবাই বলে ঝুলে পড়লো সিলিং ফ্যানে।পরে রিভিউ করে জানা গেল ছাত্রটি শুধু পাশই করে নি সব বিষয়ে ষ্টার মার্কস পেয়েছে। কিন্তু ছাত্র তখন ষ্টার হয়ে দূর আকাশে জ্বলজ্বল করছে।
বোঝার ভুলে বিপরীত প্রতিক্রিয়াও ঘটে যায়!  আমার বন্ধু সতীশকে ওর অফিসের বস বললেন, সতীশ প্রায় দেখছি, তোমার কাজকর্মের ভুল হচ্ছে। তুমি বড্ড অমনোযোগী হয়ে পড়ছো। আমারও প্রথম প্রথম ওরকম হতো। সেই সময় আমি ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যেতাম।সেখানে কিছুক্ষণ আমার স্ত্রী র সাথে সময় কাটিয়ে তার আদর সোহাগ একটু খেয়ে নিয়ে আবারও অফিসের কাজে মন দিতে পারতাম। আমার উপদেশটা মনে রেখ। পরদিন সতীশ বসের কথা মতো টিফিনের পর সময় কাটাতে আর আদর সোহাগ খেতে বসের বাড়ি চলে গেল। সবই ঠিকঠাক চলছিল। বসের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে  পালন করে আদর সোহাগও বেশ খাচ্ছিল তবুও বস যে কেন ওর চাকরিটা কেন খেয়ে নিয়েছিল সতীশ সেটাই এখনও বুঝতে পারলো না। ভুল একটা কোথাও হয়েছিল নিশ্চয়ই।
এই যে আমার কবি বলে একটুখানি পরিচিতি আছে।আমার এই কবি হওয়ার পেছনেও একটা ছোটখাটো ভুল আছে। খুব গোপনে বলি, পাঁচকান করবেন না। তখন সদ্য কলেজ থেকে বেরিয়ে মল্লিকার প্রেমে ( শেরওয়াত নয়)  হাবুডুবু খেতে খেতে গোটা দশেক জম্পেশ প্রেমের কবিতা নামিয়ে দিলাম। লিখেই যখন ফেললাম, তখন সে কবিতা বাক্সবন্দী থাকে কেন!  ভাইকে বললাম কবিতা গুলো একটা পত্রিকার শারদ সংখ্যার জন্য ডাকে পাঠিয়ে দিতে। ভাই চটজলদি ভুল করে ( ইচ্ছাকৃতও হতে পারে)  আমার কবিতার বদলে দিদির ছেলের অন্নপ্রাশনের লম্বা ফর্দ খানা খামে ভরে পত্রিকা দপ্তরে পাঠিয়ে দিল। পত্রিকা সম্পাদক সেই ফর্দটাই কবিতা বলে ছাপিয়ে দিলেন। তিনি ভাবলেন নতুন আঙ্গিকের পোস্ট মর্ডান কোন কবিতা হবে। কবিতাটা বাজারে হেবি হিট করে গেল । যাকে বলে সুপার ডুপার হিট। আরও মস্ত বড়ো খবর সেই বছর আমি ওই কবিতাটির জন্য  জেলার শ্রেষ্ঠ কবির পুরস্কারটাও পেয়ে গেলাম। সেই যে দাঁড়িয়ে গেলাম তখন থেকে দাঁড়িয়েই আছি। মঞ্চ ছাড়া এখন আর কোথাও বসিই না! 😄
সৎ চরিত্রবান মানুষও সামান্য ভুলে জীবন থেকে হড়কে যায়।
ইদানিং বিচারকদেরও ভুল হচ্ছে। নিম্ন আদালত যাকে বেকসুর খালাস বলে রায় দিচ্ছে, উচ্চ আদালতের রায়ে সেই ব্যক্তিই যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। উল্টোটাও হয়। ভুলটা যে কোথায় হচ্ছে ঠিক ধরতে পারছি না!
নেতা নেতৃদেরও ভুল হয়। কখনো ঐতিহাসিক কখনো প্রাগৈতিহাসিক ভুল। এই ভুলের জন্য বাংলার কপালে যদিও বা একবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শিকে ছিঁড়েছিল সেটাও জুটলো না!
ছুটির দিন স্বামী স্ত্রী নিকোপার্কে বেড়াতে গেছে।সেখানে স্ত্রী র হঠাৎ মনে পড়লো, এ্যাই তোমাকে ঘরের চাবিটা লাগাতে বলেছিলাম, ঠিক মতো লাগিয়েছিলে তো? স্বামী আধ হাত জিব কাটে, এই যাঃ এক্কেবারে ভুলে গেছি। কি হবে! রইলো নিকোপার্ক ঘোরা। দু'জন দুজনেই দোষ দিতে দিতে বাড়ি ফিরে দেখে দরজা হাট করে খোলা। ফাঁকা ঘর পেয়ে চোর সব ফাঁকা করে দিয়ে গেছে। রসিক চোর যাবার সময় সাদা কাগজে লিখে রেখে গেছে। দাদা দিদি আপনারা কি ভাল মানুষ। আমার কাজটা সহজ করে দেওয়ার জন্য বিজয়ার শুভেচ্ছা রইল। ইতি আপনাদের স্নেহধন্য - চোরভাই।

ক্রমশ....

রুদ্র কিংশুক || পাঁচটি "লুন" || কবিতা

রুদ্র কিংশুক
পাঁচটি "লুন"


১.
পাতার আড়ালে
মৌটুসি
গাছের হৃদস্পন্দন।
২.
গাছেরা স্তব্ধ
চলমান
মাটির অন্ধকারে।
৩.
হারানো চাবির
ফেরতে
বিড়ম্বনা খুব ।
৪.
ভিজে কলাগাছ
প্রণত
মাটির খুব কাছে ।
৫.
সকালের সূর্য
আয়নাতে
শিশির ভেজা ঘাস। 

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য ৫৫ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী

৫৫.
অন্নপূর্ণা প্রকাশনী-র বিজয় দাস-এর মেয়ের বিয়েতে আমরা শংকরপুর গিয়েছিলাম। এই আমরা অর্থাৎ অজয় দাশগুপ্ত এবং আমি।
যাত্রাপথটি দ্যাখার চেষ্টা করছি। সেই পথটি আলোকিত করে ছিল ভোরে ট্রাম , বড়োঘড়ি  , সাউথ ইস্টান রেলের লোকাল ট্রেন ,কিছুটা বাসরাস্তা , বাকিটুকু  সাইকেলভ্যান ।বেশ মনোরম ছিল সেই যাত্রাপথটি।
বিজয় দাস-এর ভাই অজয় দাশ আমাদের রিসিভ করেছিলেন। আমাদের দেশের বাড়ির যে গ্রাম তার সঙ্গে অনেকটা মিল। শুধুমাত্র সমুদ্র-টিকে সংযোজন করে নিলেই বাঁকুড়া -মেদিনীপুরের ব্যবধান মুছে যাবে। অতএব প্রথমেই সমুদ্রদর্শন ।অজয় দাস সব ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিলেন। দেখেছিলাম সমুদ্র-বন্দরের একাংশ , গেস্ট হাউস , আর অফুরন্ত জলরাশি।
একটা সময় অজয় দাস আমাদের এক গল্পকারের হাতে সমর্পণ করে বাড়ি ফিরে গেলেন।
গল্পকার বিধান মাজী , সমীরণ মজুমদার- এর পত্রিকা অমৃতলোক -এ প্রকাশিত হয়েছিল ওর গদ্য। আমার যাবতীয় বায়োডাটা বিধানের জানা ছিল। অর্থাৎ আমার পছন্দ-অপছন্দের সঙ্গে পরিচিত ছিল বিধান।
বিধানের মাছধরার ট্রলার ছিল। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়াটা ছিল ওর যাপনপ্রক্রিয়ার অন্তর্গত।
আমি ওকে ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি পড়তে বলেছিলাম। বলেছিলাম ওর ডিপ-সি ফিশিং নিয়ে লেখা শুরু করার কথা। আরো বলেছিলাম ওর লেখার ব্যাপারে আমি ওর পাশে থাকব।আর বলেছিলাম আমাকে একটা ট্রিপে নিয়ে যাবার কথা। বিধান রাজিও হয়েছিল। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য সে সুযোগ আমার কাছে আসেনি।
বিধান এক সময় বলেছিল -- কী খাবেন ?
আমি বলেছিলাম তুমি কী খাওয়াতে পারবে ?
--- আপনি যা চাইবেন।
--- চিংড়ি।
বিধান আমাকে একটা হোটেলে নিয়ে গিয়ে ফ্রিজের পাল্লা খুলে বের করে এনেছিল প্রকৃত লবস্টার। বিশাল সাইজের চিংড়ি ।
আমার নির্দেশ মতো নুন এবং গোলমরিচ মাখিয়ে মাখনে ভাজা হয়েছিল । সঙ্গে উপাদেয় পানীয়।
সেই আসর যখন শেষ হয়েছিল তখন সূর্য অস্ত গেছে
[27/06, 8:37 pm] Kobi Prabhat Chowdhury: মাখিয়ে মাখনে ভাজা হয়েছিল । সঙ্গে উপাদেয় পানীয়।
সেই আসর যখন শেষ হয়েছিল তখন সূর্য অস্ত গেছে।বিয়ের আসর বসে গেছে।
রাতে পঙ্ ক্তি ভোজনে বসা হয়নি। আমাদের শোয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল দোতলার বারান্দায় , বেশ ভালো বিছানায়। ওখানেই খাবার পৌঁছে গিয়েছিল।
ডিনার এবং ঘুম শব্দদুটি বেশ সুসম্পর্কে ছিল।

পরদিন অজয় দাশগুপ্ত-র সঙ্গেই ফিরেছিলাম। তবে একটা কথা বলা হয়নি অজয়দা কিন্তু আমার সঙ্গে লবস্টার-প্রযুক্তিতে ছিলেন না। তিনি বিয়েবাড়িতে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।
পরবর্তীকার বিধান মাজী-র সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। সমীরণ-কে বলেছিলাম ধরে আনতে।
বিধান এখন কোথায় আছে জানি না। ও কি গভীর সমুদ্রে মাছধরার পটভূমিকায় কোনো উপন্যাস লিখেছিল কিনা জানি না।
তবে সেদিনের  মাত্র কয়েক ঘণ্টার স্মৃতি এখনো আমি ভুলে যাইনি , এজন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।
আগামীকাল অন্য একটি দিন। অর্থাৎ ভিন্ন এপিসোড।

সীমান্তযুদ্ধ || ভজন দত্ত || কবিতা

সীমান্তযুদ্ধ
ভজন দত্ত


পাপিয়ার সঙ্গে আধঘন্টার আনন্দ সংবাদ
দেখতে দেখতেই অনসূয়া এসে জানালো
ক্ষেপণাস্ত্র যন্ত্র রেডি।

সীমান্তের ঘষাঘষি থেকে আরো আরো গভীরে গিয়ে কে করে কার মোকাবিলা!

চিত্ত সংযত রেখে বাক চালাচালি  করতে করতেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ছিড়েখুঁড়ে যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ে মুখ থুবড়ে।

উল্লাসে ছিঁড়ে-ফেটে যায় রাষ্ট্রের হাসি
আম-মানুষ দেওয়ালে লেখে শান্তি ভালোবাসি...

ভজন দত্ত

লক্ষ্মীছাড়া || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় || অণুগল্প

লক্ষ্মীছাড়া 
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

পত্রিকা সম্পাদক শীতলদা হাতে পোড়ামাটির ছোট্টো গণেশমূর্তিটা
তুলে দিতেই সন্তু চিৎকার করে ওঠে,আমাকে গণেশ ক্যানে দাদা!
লকখি দিতে পারতে!চিরকালই তো লকখিছাড়া হয়ে রইলম।
গণেশ পেলে তো ব্যাবসা কোরতে হবেক,উটা আমি পারবো নাই,খ্যামা দাও!
তিনটে দকানে কাজে ঢুকাই ছিল বাবা,খোদ্দারদের বুঝাতে
পারি নাই।চাকরি নট।চারবিঘা জমি চাষ আমার অসাধ্যি।
এখন দুটো পাইভেট ব্যাচ করি আর কবিতা লিকি।একটা
লকখি যদিবা জুটেছিল কন্যাশ্রীর পুঁচিশ হাজার পেতেই
তার বাপ তাকে কোন দেশে যে পাচার কর‍্যে  দিলেক জানতেই
লারলম।বুজে গেচি লকখি আমার কপালে নাই।ইটা লিয়ে
আমার কীইবা হবেক?
শীতলের নাছোড় হাসিতে জানলো বদল হবে না।তাই বিরক্তি
মেখেই ফিরছিলো বাড়ির দিকে।জগুর পানগুমটিতে এসে
 বলে,একটা
পান দেত।সে মনেমনে ঠিক করে নিয়েছে গণেশটা জগুর গুমটিতে রেখে যাবে।
চোখ পড়লো তাকটার দিকে।দেখে একটা গণেশ তার পাশে দুটো লক্ষ্মী।
জিজ্ঞাসা করাতে জগু বলে,গণেশের বাহন আগের গণেশ ভেঙে
ফেলায় তার বউ নতুন গণেশ আর লক্ষ্মী কিনে দিয়েছে।কিন্তু
পুরনো লক্ষ্মীটাও রয়ে গেছে।কাল রাত্রে আবার বাহনেরা
গণেশ ভেঙেছে।
 সন্তুর করুণ কাহিনি,যদিও জানা,জগু একটা লক্ষ্মীমূর্তি তাকে দিয়ে দিল।
খুশিমুখে সে বুকপকেটে লক্ষ্মীলাভ করে প্যাডেলে পা দিল।জগুও লকখি
পেয়ে ধন্য।দাসপাড়ার গলির অন্ধকার পার হবার সময় কীযে হলো
সে ঠিক বুঝলো না।তবে সাইকেল উলটে সে মাটিতে আর মূর্তিটা যে
কোথায় গেল তা দেখার জন্য দাসকাকিমা টর্চ আনা পর্যন্ত অপেক্ষা
করতে হলো।মালক্ষ্মী তখন পোড়ামাটির কয়েকটা বিচিত্র খণ্ড হয়ে তাকে ব্যঙ্গ করছেন।



গোপেশ্বরপল্লি,বিষ্ণুপুর,বাঁকুড়া-৭২২১২২
কথা-৭০০১৪৫৬৭২১/৯৭৩২২৩৭৬০৮

আটপৌরে কবিতা ৩৮১- ৩৮৫ || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ


আটপৌরে কবিতা
নীলাঞ্জন কুমার

৩৮১

বিস্কুট/ সিঙ্গাড়া/ বেগুনি
       ) মুচমুচে  (
চায়ের সঙ্গে অনবদ্য হয়!

৩৮২

পশরা/  সাইনবোর্ড/ বাটখারা
     ) দোকান  (
হিসেব ভেজাল ছলনা মনোরঞ্জন ।

৩৮৩

নবারুণ/ নাটক/ অভিনয়
      ) ফ্যাতাড়ু(
ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাঁই সাঁই ।

৩৮৪

অদাহ্য/ অগলন/ অকাট্য
          ) অস্থি  (
চোখের সামনে বিপুলা বিস্ময় ।

৩৮৫

প্রাণ/ বিবর্তন/ পর্বান্তর
      ) আবর্তন  (
তবু বিতর্ক ডিম মুরগির !

শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০

খোলা আকাশের নীচে "খোলা আকাশে" প্রকাশ || সংস্কৃৃৃৃতি সংবাদ

খোলা আকাশের নীচে "খোলা আকাশে" প্রকাশ


নিজস্ব সংবাদ ; মেদিনীপুর ; ২৪-০৬-২০২০ || আজ মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে উন্মুক্ত আকাশের নীচে ভার্চুয়াল লাইভের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হল "খোলা আকাশে" পত্রিকা প্রকাশ ৷ পত্রিকাটির সম্পাদক শ্রীকান্ত ভট্টাচার্য ৷ ভার্চুয়াল লাইভে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করলেন সৌমিত্র রায় ৷ অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্যানিটাইজার হাতে দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় অতিথিদের ৷ অতঃপর পত্রিকাটির মোড়ক উন্মোচন করেন ছড়াশিল্পী বিদ্যুৎ পাল এবং বাচিক শিল্পী রত্না দে ৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপত্যকা সম্পাদক তাপস মাইতি ৷ কবিতাপাঠ করেন, বক্তব্য রাখেন সায়নদীপ পাণ্ডা সৌম্যদীপ রায় নরোত্তম দে শান্তনু পাণ্ডা মৃৃৃৃত্যুঞ্জয় জানা অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় প্রমূখ ৷ বট-শিরীষের সবুজ আবহে জেলা পরিকল্পনা ভবনের প্রাঙ্গনটি কবিতার ধ্বনিতে মুছে ফেলে করোনাপর্বের যাবতীয় গ্লানি ৷ ভার্চুয়াল মাধ্যমে অপরপ্রান্তে ছিলেন "খোলা আকাশে" পত্রিকার অসংখ্য গুণগ্রাহী ৷

সবাই মিলে , সিনেমাহলে~ ২ || কান্তিরঞ্জন দে || প্রতি শনিবার

সবাই মিলে , সিনেমাহলে~ ২ 
কান্তিরঞ্জন দে



বায়োস্কোপ- মুভি - ফিল্ম - সিনেমা

       চল্ , সিনেমায় যাবি ? কথাটার আদত অর্থ হল , সিনেমা হলে যাবি ? এখন মানুষের মুখের দৈনন্দিন কথায় কথায় সেটাই              " সিনেমা " দেখতে যাবি ----এই অর্থে এসে দাঁড়িয়েছে ।

         আসলে , আমরা হলে বা প্রেক্ষাগৃহে যা দেখতে যাই , তা হচ্ছে , চলমান চিত্রমালা  বা মুভিং ইমেজেস । ছবির পর ছবি সাজিয়ে পর্দায় একটি গল্প ( কাহিনীচিত্র ) , একটি চিত্রপ্রবন্ধ ( ডক্যুমেন্টারী বা তথ্যচিত্র ) তুলে ধরা হয় । তাই বাংলায় সিনেমার অপর নাম ---- চলচ্চিত্র । ইংরিজিতে বলে -- মুভি । এমনকি , ফিল্ম বললেও ভুল কিছু বলা হয় না । বরং সেটাই একমাত্র মোক্ষম শব্দ । অন্তত কয়েকবছর আগে পর্যন্ত তাই ছিল ।

       পাঁচ - দশবছর আগে পর্যন্ত হত পাতলা করে রাসায়নিক আস্তরণ মাখানো পাতলা প্লাস্টিকের সরু পাতের ওপরে ক্যামেরা কাচে ঢাকা সরু ফুটো-র ( লেন্স ) মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত আলোয় আঁকা বস্তুজগত , মানুষ এবং  প্রকৃতির চলমান বা গতিময় ছবি পরপর তোলা হত । এখন সেটাই হয় , ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে , ডিজিট্যালি ।

       তাই সিনেমা মানে আসলে ফিল্ম । শুধু সিনেমা মানে হল , অডিটোরিয়াম বা প্রেক্ষাগৃহ ---- যেখানে অনেক মানুষ একসঙ্গে ফিল্মে বলা গল্পটি বা বিষয়টি দেখতে - শুনতে যায় ।

        এককথায় , চলমান চিত্রমালাকে যদি ফিল্ম , মুভি , মোশন পিকচার বলা হয় , তবেই ঠিক বলা হল । কিন্তু , কালের নিয়মে দেশে বিদেশে মানুষের মুখে মুখে সিনেমা শব্দটিই বেশি চালু হয়ে গেছে । যাহা ফিল্ম , তাহা-ই সিনেমা ।
     সত্যি তো , নামে কি আসে যায় ?

      আজ থেকে পঞ্চাশ - ষাট বছর আগেও প্রবীণ মানুষদের মুখে বায়োস্কোপ শব্দটা শোনা যেত । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে , সিনেমার সেই আদি যুগে  সারা পৃথিবীতেই  দর্শকেরা সিনেমাকে বায়োস্কোপ-ই  বলত । কালে কালে সাহেবদের দেশে সেটা ফিল্ম, মুভি , পিকচার ইত্যাদিতে এসে দাঁড়িয়েছে ।

        আমাদের দেশে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য রাজ্যে পিকচার বা ফিলিম  শব্দটাই বেশি চলে । বাংলায় বলা উচিত , চলচ্চিত্র দেখতে যাচ্ছি । কিন্তু আমরা বাঙালিরা , পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে সাধারণত বলি ---- সিনেমা দেখতে যাচ্ছি ।

        উঁহু , শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে  আমরা বাঙালিরা বলি ------ বই দেখতে যাচ্ছি । অথবা , দারুণ একটা  বই দেখে এলাম । টিভিতে আজ প্রসেনজিতের বই দেখাবে ।
দশজনের মধ্যে ন' জন বাঙালি সিনেমাকে  ' বই ' বলবেই ।

      কথাটা একদম ভুল প্রয়োগ । চলচ্চিত্র না বলতে পারেন , সিনেমা বলুন । নিদেনপক্ষে ফিল্ম , পিকচার , মুভি যা কিছু একটা বলুন ।

     কিন্ত , সিনেমাকে বই বলবেন না , প্লীজ !!!

       কেন ? সে ব্যাপারটা খোলসা হবে পরের সপ্তাহে ।

চাকা ফেরেনি || কল্লোল দত্ত গুপ্ত || অণুগল্প

চাকা ফেরেনি 
কল্লোল দত্ত গুপ্ত

আজ বেস্পতিবার। এবার রথের চাকা ঘুরেছে কিন্তু মন ভরেনি। সংসার করেছি, ভালোতেই বাসা বেঁধেছি, তবু আরেকটা বুলবুলি প্রতি রথে মেলায় আসে নিজে হাতে জিলিপি আর ফাটিয়ে খাওয়া বাদাম কিনে দেবে বলে, শুধু আমি ভালোবাসি বলে। সে আসেনি। ভেবেছিলাম মুখে মাস্ক নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে, এই নাও রথের বেদনা, ব’লে ধরিয়ে দেবে ঠোঙা। দাঁড়ায়নি। ইচ্ছে হচ্ছিল খুব, সব্বার মুখোশগুলো টান মেরে খুলে খুলে দেখি, জিজ্ঞেস করি, তুমি? তুমি? না, কারোর মধ্যে সে নেই। আমার রথের চাকা এবার ঘোরেনি। আমি মেলার প্রান্তে এসে চিৎকার করে ডেকেছি, ‘ফিরে এসো চাকা…’, আসেনি। এই গল্প তো বিয়োগান্তক। বিনয়ের চাকাও ফেরেনি।

বুলগেরিয়ার নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || নিকোলাই ভ্লাডিমিরভ- এর কবিতা

বুলগেরিয়ার নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক 
নিকোলাই  ভ্লাডিমিরভ- এর কবিতা


নিকোলাই ভ্লাডিমিরভ (Nikolay Vladimir, 1981)- এর জন্ম  বুলগেরিয়ার সোফিয়া শহরে। সোফিয়া ইউনিভার্সিটিতে তিনি ইংরেজি ভাষা ও আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। এর মধ্যে ছয়টি কবিতার বই, একটি উপন্যাস এবং দুটি গ্রন্থের তিনি সহ-লেখক । তরুণ কবিদের  কবিতার পাবলিক রিডিং-এর একটি সংস্থা তৈরি করেছেন।

কবিতা
***
প্রত্যেক ভালোবাসার শেষ আছে
কেবল আমাদের ভালোবাসার
নেই কোনো আরম্ভ

***


আমরা নীরব
 যেমন একটা বইয়ের
পাতাগুলো
যে আমরা পড়েছি
আলাদা আলাদা
 কিন্তু আমাদের আঙ্গুলের দাগগুলো
সেখানে আছে একসঙ্গে
***

যদি আমি হতাম একটা গির্জা
তুমি প্রবেশ করতে ভেতরে
এমনকি বিদায় জানাতেও
 আর তখন আমি ভেঙে পড়তাম
তোমার উপর
আর বিশ্বাসের ধ্বংসাবশেষের মাঝে
আমরা থাকতাম একসঙ্গে
***

যদি তুমি ভালোবাসতে পারতে
 যেমন তুমি পারো হত্যা করতে
 আমাদের ভালবাসা হয়ে উঠত
চিরন্তন
যেমন মৃত্যু
***

কোনদিন

 কেউ তোমাকে ভালোবাসবে
যে তুমি কখনো প্রত্যাশা করোনি
 যদি তুমি সেটা না হারাও
অতীতের চুম্বনে
***

 নিঃসঙ্গতা
একজন মানুষ
 যে পান করছে
 কফি
অন্য কারো নারীর
চোখ থেকে

***

আমরা পরিপূর্ণ
অনাস্বাদিত সূর্যোদয়ের
কারণ আমাদের চিরন্তন ভয়
 সূর্যাস্তের সূর্যাস্তের

***

বসে আছি || ফটিক চৌধুরী || কবিতা

বসে আছি
ফটিক চৌধুরী


এই দেখো আমার কুটির
                              দীর্ণ
সময়ও হয়ে এলো ছুটির।
এই দেখো আমার শরীর
                             জীর্ণ
দেখা মিলবে না কোন পরীর।
এই দেখো আমার সময়
                        ‌‌     কীর্ণ
আর কেউ দেবে অভয়?

বসে আছি ক্ষীণতোয়া নদীটির তীরে
সন্ধ্যার শেষ পাখি ফিরে গেছে নীড়ে।

কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ

কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার

বৃষ্টিলেখা । কুমারেশ চক্রবর্তী । দি সী বুক এজেন্সি । একশো টাকা ।

কবি কুমারেশ চক্রবর্তীর 'বৃষ্টিলেখা ' কাব্যগ্রন্থের ভেতরে  কুমারেশের চিরাচরিত প্রতিবাদী দিকটি অনেক বেশি উন্নতির পথে গেছে ও তা গভীর থেকে গভীরতর পর্যায়ে এখন । তাই পড়তে ভালো লাগে: ' আর অসংখ্য রাস্তায় বিভাজিত মানুষ/ পরস্পরকে লুকিয়ে চুরিয়ে পরস্পরের অন্ধকারে/ অগনন মৃত তারাদের এক মিথ্যে  আকাশের দিকেই স্বপ্ন ফোটাচ্ছে  ....'('অলীক গন্তব্যে') ,
' আমরা কে কাকে পণ্য করে বাঁচি ? / আমাদের মুক্তির পথে কেন এই আলোয় লেখা/  এত অন্ধকার? ' ( 'আলোয় লেখা অন্ধকার ')।
           কবিতার স্বাদ নিয়ে কোন কথা বলার সুযোগ দেন না কবি ।শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক প্রতিবাদে তিনি সমান দড় তা তাঁর পংক্তি বুঝিয়ে দেয় :
' অনেক চুমুর স্বয়ম্বর সভায়/  তুমি তাকে ব্লক করেছ পাকাপাকিভাবে! ' ( ' ব্লক '), ' মধ্যরাতের পাড়াগাঁর থুতুকফে- / মার্কসবাদের অপরিপক্ক ব্যাখ্যায় উচ্ছিষ্ট হতে থাকে ...' (' বিশ্বায়ন ')।
          কুমারেশের সন্ধানী দৃষ্টি আগের থেকে আরো গভীর । আছে ব্যঙ্গের চমক । আছে সত্য বলার তাগিদ । তাই পাই: ' সময় সুযোগে এরা আবার নাগরিকও- / ভোট  দেয়!এরা ভোটে দাঁড়ায়! এম এল এ ...মন্ত্রী হয়ও! '(' পোকা ')। শ্যামল  জানার জলরঙের প্রচ্ছদকে
শুধু প্রশংসা করলে ছোট করা হবে । এ প্রচ্ছদের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায় ।

আটপৌরে কবিতা ৩৭৬- ৩৮০ || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ


আটপৌরে কবিতা 
নীলাঞ্জন কুমার 

৩৭৬

প্রার্থনা/ শুভেচ্ছা/ স্নেহ 
    ) অমূল্য  (
সহজে কারো জীবনে আসে না ।

৩৭৭

নন্দন / সুন্দর/ সুসৃষ্টি
       ) উন্মাদনা(
ছুটে আসে বাইরে ভেতরে ।

৩৭৮

কৃষ্টি/  সংস্কৃতি/ শিল্প 
     ) কলা  (
ভেতরে কিভাবে মিশে যায় ।

৩৭৯

ঝুমুর/ ছৌ/পাতা 
   ) নাচ (
জঙ্গল মহলে সকলের প্রাণ ।

৩৮০

প্রতিদান / গুরুদক্ষিণা/ নৈবেদ্য 
          ) উপকরণ (
কিভাবে কার কাছে আসে!

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য ৫৪ || প্রভাত চৌধুরী || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী


 ৫৪.
অন্নপূর্ণাকথা। শুরুতেই একটা দোমনা-ভাব ! কীভাবে বা কোন সূত্রে। সুতো-র সংখ্যা দুই। সম্ভবনা-র সংখ্যাও দুই।
প্রথম সম্ভাবনা ডাক্তারবাবু বা ভূমেন্দ্র গুহ। দ্বিতীয় সম্ভাবনা অজয় দাশগুপ্ত। সাম্প্রতিক- কবিপত্র - অমৃত - তিনসঙ্গী কোনো সূত্রেই অজয় দাশগুপ্ত-র সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। কবিতাপাক্ষিক-এর সময় ভূমেন্দ্র গুহ-র মারফত অজয়দার সঙ্গে যোগাযোগ এটা বেশ মনে আছে। কারণ অজয়দা আগে বিমল কর - এর সহযোগী ছিলেন বিভিন্ন কাজকর্মে। আর আমি ছিলাম বিমল কর - এর পাঠক মাত্র। ব্যক্তিগত পরিচয়ও ছিল না।
ভূমেন্দ্র গুহ-র সঙ্গে পৃর্ব পরিচয় ছিল না। শান্তিময় মুখোপাধ্যায় সূত্রে পেয়েছিলাম। সেকথা আগেই লিখেছি।
১৯৯৭-এ কবিতাপাক্ষিক প্রকাশনার বেশ অনেকগুলি বই প্রকাশিত হয়ে গেছে। কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায় কোনো কাউন্টার নেই। দে বুক স্টোর কিংবা অন্য দোকানে অর্ডার থাকলে কালীঘাট থেকে ব্যাগে করে বই নিয়ে আসতে হত। বিপদ হত বাংলাদেশের অর্ডার এলে। নয়াউদ্যোগ- এ বই দেবার জন্য ট্যাক্সি করতে হত। আমাদের এই সমস্যার কথা আমাদের পরিচিত সকলেই জানতেন।
ঠিক এই পরিস্থিতিতে অজয়দা অথবা ভূমেনদা , দুজনের একজন পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন বিজয় দাশ -এর সঙ্গে।বিজয় বুক স্টল বিশ্বাস বুক- এর লাগোয়া। রাস্তার বা ফুটপাতের ওপর একটা স্টল বা দোকান। বিজয়দা-কে একটা ঘর দেখে দিতে বলেছিলাম। উনি এককথায় বলেছিলেন --- আমাদের কলেজ রো-তে একটা ঘর আছে। ওই ঘরটা আপনারা ব্যবহার করুন। বিকেলে চাবি নিয়ে ঘর খুলবেন , রাত্রে চাবি ফেরত দিয়ে যাবেন। কোনো ভাড়াটাড়ার কথা মনেও আনবেন না।
ভাবতে পারেন এ রকম বড়ো মনের মানুষ সেই সময় কবিতাপাক্ষিকের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই এগিয়ে যাবার কথা ভাবতে পরেছিলাম।
আজ অন্নপূর্ণা-য় ফোন করেছিলাম। বিজয়দার ভাই অজয় দাস বললেন অজয় দাশগুপ্ত সূত্রেই আমি অন্নপূর্ণায় পৌঁছেছিলাম। বিজয়দা দেশের বাড়িতে আছেন।উনি আসার পর সঠিক তথ্য জানা যাবে। তবে সূত্র যা-ই হোক না অন্নপূর্ণা-র কলেজ রো -র ঘরটা প্রতিদিন জমজমাট থাকত। যোগাযোগ আরো সহজ হয়ে গেল। আমরা বইবাজারে প্রবেশ করলাম।

কলেজ রো- তে আমার একটা অতীত ছিল। ' তিনসঙ্গী '- র অতীত। নিজের কায়িক পরিশ্রম দিয়ে বানিয়েছিলাম তিনসঙ্গী। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর প্রকল্পনাটিতে আমি ছিলাম জাস্ট আজ্ঞাবহ।
তিনসঙ্গী-ঠিকানা ছিল ৫৭/সি , কলেজ স্ট্রিট। যদিও যাতায়াত সব কিছুই কলেজ রো দিয়ে। ওখানেই সন্তোষ -এর মিষ্টির দোকান। শুভাপ্রসন্ন-র বাড়ি।
তখন আমি টিফিন করতাম খুব শস্তার একটা দোকানে। ভাজারুটি আর তরকারি।সম্ভবত একটাকায় তিনটি। তরকারি ফ্রি।
ঠিক এই পর্বে বিজয়দার মেয়ের বিয়েতে অজয় দাশগুপ্ত এবং আমি ওদের দেশের
বাড়িতে গিয়েছিলাম।শংকরপুর। সে-গল্প আগামীকাল।

শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০

পূরবী~ ১১ || অভিজিৎ চৌধুরী || ধারাবাহিক উপন্যাস

পূরবী~ ১১
অভিজিৎ চৌধুরী

আমি বললাম,কে তুমি!
সে বলল,মৃত্যু দেবতা তোমার।
আমি বললাম,বা- রে তুমি এতো সুন্দর।
হাসল সে।বলল,ব্যথা হবে খুব।
তিনি এবার বললেন,চোখ বোজো।
হাসলাম আমি,বললাম- বেঁচে থাকার চেয়েও!
অন্ধকার হয়ে যাবে চারপাশ!
সামান্য সময়।
সেই যে মাথায় স্ট্রিচ হয়েছিল সেই ব্যথা!
টের পাবে না।শেষ কষ্ট।
সব ভুলে যাব এই যে ছিলাম।
পাবে।নক্ষত্রলোক দিয়ে যেতে যেতে তুমি দেখবে যা তুমি জীবনভর দেখতে চেয়েছো।
তারপর সবুরে মেওয়া পাব   তো"
রবীন্দ্রনাথ বললেন,মৃত্যু মানে রাত্রি।জীবন মানে দিন।প্রতিমা বললেন মৃত্যু কি তবে নির্বাণ!
মনে রাখতে ইচ্ছেই হবে না।
সে- কি সম্ভব!
দীর্ঘশ্বাস পড়ল তাঁর।ছুটির মৃত্যু কাছ থেকে দেখেছি।সে বড় সহজ ভাবে নিয়েছিল।
যদি সহজ ভাবে নিতে পার বউমা।
বলো বউমা।
প্রতিমা বললেন,বাবামশাই।
আমার কথা মনে থাকবে"
না,আপনি তো দেবলোকে যাবেন।
সেই প্রেতলোক থেকে"
ভালোবেসেছিনু এই ধরণীরে।বাকি যে জানি না।
তীর্থ এসব ভাবছিল।যদিও জানে মোক্ষ,নির্বাণ সে যাই হোক বহু দূরে।
ড্রাইভারকে প্রায় মধ্যরাতে বলল,ভাই চলো একটু কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে।

বুলগেরিয়ার নতুন কবিতা || রুদ্র কিংশুক || ক্রিস্টিনা গুটেভার কবিতা

বুলগেরিয়ার নতুন কবিতা 
রুদ্র কিংশুক
ক্রিস্টিনা গুটেভার কবিতা


ক্রিষ্টিনা গুটেভা (Hristina Guteva, 1966)-র জন্ম বুলগেরিয়ার বুরগাস শহরে।  ১৯৯১-এ তিনি ভার্নার একটি একটি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হন। ১৯৯৯-এ প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম ছোটগল্প ও প্রবন্ধ সংকলন এসকেপ ইন দ‍্য লাইট। ২০১৮ তে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় বই, একটি কবিতা সংকলন  দ‍্য রুট ইজ আ ফ্লাওয়ার। তাঁর কবিতা এবং গল্প প্রকাশিত হয়েছে বুলগেরিয়ার বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও দৈনিকে। ২০১৯ থেকে তিনি সোফিয়ার অধিবাসী।


কালো ঘুঘু

কালো ঘুঘু
বসেছে জানালার ধারে
তার চোখ আমার ওপর
 ছন্দময় খোলা বন্ধ
জানালা আমাদের আলাদা করে
সংযুক্ত করে
জানালা

***
*
নিঃসঙ্গতা

দরকারী
পাথর টুকরো থেকে
নিজেকে নির্মাণে

খুব ভারী লাগে
যখন তাদের সাজানোর
 পথ পাও না খুঁজে

***
*
 প্রথম পাতায় আমি কেঁদেছি
হেসেছি দ্বিতীয় পাতায়
তৃতীয়ের ওপর কেটেছে আঙ্গুল
চতুর্থ পাতায় আমার রক্ত লিখছিল
এবং এখনো লিখছে
এবং লিখছে

***
*
চোখ খোলা
এবং গতকালের বাইরে আসা

দীর্ঘতম পথ

***
*
 যখন জুলাই বৃষ্টি
 ক্ষমতা দরকার
চোখের মুখোমুখি হওয়া যা কাঁদে
তার চেয়েও বেশি
সাহস
স্বীকার করা
সেগুলো তোমারই

***
*

 সময়ের
একমাত্র অর্থ
 যে আমরা একসঙ্গে আছি
আমরা তাকে বলছি আমাদের

***
*
 লোকে বলে
হৃদয় বড়ো
মুঠোর মতো
 যদি তারা বন্ধ হয়
 তুমি কি সাঁতার কাটতে পারবে

***
*
 যখন আমি লিখতে চেষ্টা করছিলাম
কীভাবে বৃষ্টি আমায় ভাসাচ্ছে
আর আমার কাছে  মেলে ধরছে
 নতুন অর্থ ছবি না হওয়ার
 আমার মেয়ে তার ফোনে
আমার ছবি তুলে মজা পাচ্ছে
আটকে রাখছে আমাকে ছবির মধ্যে
 যেগুলোকে দেখাচ্ছে বৃষ্টি -আঁকা

কিছু বই কিছু কথা || নীলাঞ্জন কুমার || প্রাত্যহিক বিভাগ

কিছু বই কিছু কথা । নীলাঞ্জন কুমার

মানব অশ্রু । ভবেশ বসু । কবিতিকা । আশি টাকা

সুন্দর পারিপাট্য, ভালো কাগজ দিয়ে সৌন্দর্যে ভরা কাব্যগ্রন্থ ভবেশ বসু- র ' মানব অশ্রু ' পড়ে একথা বলতে পারি , পড়ার পর হিন্দি সিনেমার মতো সব উধাও হয়ে যায় । আকর্ষণ করার মতো কিছু অবশিষ্ট থাকলে খুশি হতাম , কিন্তু আকর্ষণের জন্য যা করা প্রয়োজন তা এই কাব্যগ্রন্থে অনুপস্থিত ।
           কবির নিজস্ব একটা ভাবনার দিক আছে কিন্তু তা এত বেশি কথার ভেতর দিয়ে যায়, যা বিব্রত করে ।তবু শিরোনামহীন এ গ্রন্থে যখন পাই: ' আমি বাঁচতে চাই/ ইট কাঠ লোহা দিয়ে আমি কি করবো? / আমি ক্ষুধার্ত খুব/  পূজার জন্য লাগবে আমার আগুন কিছু ।' তা ভেবেচিন্তে যুক্তি খুঁজে পেলেও শব্দচয়ন ও দ্যোতনার দিক থেকে ভাবনাচিন্তার অবকাশ থেকে যায় ।
            যদিও ভবেশ বসু কবিতা নিয়ে দীর্ঘ দিন আছেন,
একই ভাবে লিখছেন তাই মনে করি তাঁর কবিতার ধারা পাল্টানো প্রয়োজন । নাহলে তাঁর আমার পঠিত কাব্যগ্রন্থগুলির সঙ্গে এটিকে আলাদা করা কঠিন হচ্ছে ।
      ' মানব অশ্রু ' র ভেতরে পরিমিতিবোধ নেই , তাই স্পর্শ করে না । ভবিষ্যতে তাঁর কাছ থেকে পেয়ে যাব অন্য ধারার কবিতা যা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা সম্ভব হবে । কমলেশ নন্দের প্রচ্ছদ বুদ্ধিদীপ্ত।

প্রভাত চৌধীরী || সৌমিত্র রায়- এর জন্য গদ্য || ধারাবাহিক গদ্য

সৌমিত্র রায় -এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী



৫৩.
২৯ জুন ১৯৯৭ , দুপুর ২টো ।পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সভাঘর । শুরু হল সেমিনার। বিষয় :
কবিতার নতুন মানচিত্র --- পোস্টমডার্নিজম।
অংশগ্রহণ করেছিলেন : ড. প্রদীপ বসু সমীর রায়চৌধুরী অশোক বিশ্বনাথন সুজিত সরকার
সঞ্চালক :  উৎপলকুমার বসু।
এদিনের আলোচনা ছিল বেশ জোরালো এবং আকর্ষণীয়।

ওইদিনেও ছিল আধ ঘণ্টার বিরতি। বিরতির পর কবিতাপাঠ। অংশগ্রহণ করেছিলেন : রত্নেশ্বর হাজরা প্রমোদ বসু শবরী ঘোষ কামাল হোসেন সুবোধ সরকার প্রদীপচন্দ্র বসু ধীমান চক্রবর্তী মল্লিকা সেনগুপ্ত  সর্বজিৎ সরকার গোপাল আচার্য জয়ন্ত ভৌমিক আবীর সিংহ পঙ্কজ মণ্ডল নমিতা চৌধুরী
তীর্থংকর মৈত্র শ্যামলকান্তি দাশ হিমাদ্রিশেখর দত্ত বিভাবসু অমিত নাথ রামকিশোর ভট্টাচার্য সুশান্ত মুখোপাধ্যায় প্রদীপ রায়গুপ্ত সুধীর দত্ত কাজল চক্রবর্তী প্রফুল্ল পাল অর্ণব সাহা গোপাল দাশ দীপঙ্কর সরকার সমীর চট্টোপাধ্যায় প্রদীপ হালদার বিশ্বজিৎ লায়েক আনন্দ দাস উত্তর বসু অরূপ পান্তি অংশুমান কর অজয় নাগ শম্ভু রক্ষিত নীলাদ্রি ভৌমিক সৈয়দ হাসমত জালাল সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিময় মুখোপাধ্যায় চৈতালী চট্টোপাধ্যায় পলাশ বর্মন সমরেন্দ্র দাস অমৃতেন্দু মণ্ডল অশোককুমার দে শুভব্রত দত্তগুপ্ত স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায় প্রদীপ কর দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় তাপস দত্ তো জয়ন্ত জয় চট্টোপাধ্যায় অরূপ দত্ত।
এই কবিতাপাঠের আসরের সঞ্চালক ছিলেন মঞ্জুষ দাশগুপ্ত।
সবশেষে সকলকে  ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলাম আমি।
দু-দিনের এই উৎসবের মুখ্য দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ কওসর জামাল।
পত্রপত্রিকা এবং বই বিক্রির দায়িত্বে ছিল তরুণ কবি পলাশ বর্মন।

কবিতাপাক্ষিক ১০১ সংখ্যায় এই কবিতা উৎসবের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। লিখেছিল নাসের হোসেন। সেই রিপোর্টাজ থেকেই আমার যাবতীয় হম্বিতম্বি। আমি কখনোই স্মৃতিধর ছিলাম না । ভুলে যাই।
একমাত্র অপমানগুলি ভুলে যাই না। জমিয়ে রেখে দিই। কোনো প্রতিকার কিংবা প্রতিশোধের জন্য নয়। অপমান জমিয়ে জমিয়ে অপমানের একটা সৌধ রেখে যেতে চাই । যাঁরা আমাকে অপমান করেছেন , আমি তাঁদের একটি অপমানও ভুলে যাইনি। সেই অপমানগুলিকে আমি ইঁটে রূপান্তরিত করে নিয়েছি। সেই ইঁটগুলি দিয়েই সৌধটি নির্মাণ করা হবে। সেই নির্মাণের কাজই এখন শুরু করেছি।
 এই কবিতাপাক্ষিক১০১ সংখ্যার ব্যাক কভারে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছিল। বিজ্ঞাপনটি পড়ুন :
                       কাছাকাছি নয়
        বইপাড়ার কেন্দ্রে পৌঁছে গেল
                         কবিতাপাক্ষিক
সোম থেকে শুক্র  □ বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধে ৭ টা
শনিবার □ দুপুর ২টো থেকে সন্ধে ৭টা
       পত্রিকা এবং প্রকাশনা সংক্রান্ত
        যাবতীয় যোগাযোগ কেন্দ্র
প্রযত্নে : অন্নপূর্ণা প্রকাশনী
৩৬ কলেজ রো , কলকাতা ৭০০০০৯
 আমাদের তিনসঙ্গী-র খুব কাছেই। অথচ বহু দূরে।
সেই অন্নপূর্ণাকথা আগামীকাল।


আটপৌরে কবিতা ৩৭১-৩৭৫ || নীলাঞ্জন কুমার || ধারাবাহিক বিভাগ

আটপৌরে কবিতা 
নীলাঞ্জন কুমার 


৩৭১

হঠাৎ/  অজান্তে/ মুহূর্তে 
     ) দুর্ঘটনা  (
কারো কোন হাত নেই ।

৩৭২

স্তব্ধ/  শান্ত/ অপ্রাণ 
    ) মৃত্যু  (
নির্বিঘ্নে এলে তাই হয় ।

৩৭৩

লাঠি/ গুলি/ কুড়ুল 
    ) সংঘর্ষ  (
হাতের কাছে যা আসে ।

৩৭৪

তালিকা/ স্মারক/ কাজ 
     ) প্রয়োজন  (
কিভাবে অভ্যেসে পরিণত হয়। 

৩৭৫

হালচাল/  ভালোমন্দ/ হালহকিকত 
       ) ভালোবাসা  (
থাকলে তবে জানতে চায় ।

আমাদের ধর্মযুদ্ধ || দেবব্রত রায় || কবিতা

দেবব্রত রায়
আমাদের ধর্মযুদ্ধ

আমার দুটো হাত ডানা
হয়ে উঠতেই , আমি
আকাশচারী হয়ে যাই
অথচ, এই প্রজনন নির্ভর শরীর
শুধুমাত্র, প্রজন্মকে  এগিয়ে
নিয়ে যাওয়ার জন্যেই 
ডানা খসিয়ে
আবারও মানুষ হয়ে ওঠে

++++

গুজব এতটাই রোমাঞ্চকর
যে সত্যও কখনো কখনো
তার সামনে নতজানু  হয়ে পড়ে
সকাল সকাল রিফিল টুথপেষ্ট
গঙ্গার ঘাটে কুলকুচি সেরে
পবিত্র হয়
আর, এখান থেকেই
উৎপন্ন হয় একটি গুজব গর্ভিণী
দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু
যার গলাটি জিরাফের মতোই লম্বা

**
যারা বলেন মাটি জল
ও বায়ু মিশিয়ে ঈশ্বর
তিলে তিলে পশু পাখি
এবং মানুষ তৈরি করেন
তারা ঠিকই বলেন
কারণ, মাটি জল ও বায়ু
ছাড়া এরা কেউই বেঁচে
থাকতে পারেনা
পৃথিবীকে কর্দমাক্ত
করার জন্য মানুষ
কখনো কখনো মাটি
জল ও বায়ুর ধর্ম নষ্ট করে
তিল থেকে একটি তালপুকুর
বানিয়ে ফেলে
***

বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০

পূরবী~ ১০ || অভিজিৎ চৌধুরী || ধারাবাহিক উপন্যাস

পূরবী~ ১০
অভিজিৎ চৌধুরী



কে আপনি!
কে?
উত্তর দিন।
সেদিন ছিল হেমন্তের সন্ধে।শীত পড়েছে বেশ শান্তিনিকেতনেও।বুলা মিডিয়ম হয়েছে।
উত্তর এলো,জ্যোতিদাদা।তোমার নতুন বউঠান পাঠালেন।
একবার তখন বিলেতে।রাতে আত্মাটা দেহ থেকে বেরিয়ে জোড়াসাঁকো গেলো।ছোট বউ,দিব্যি তোমার পাশে গিয়ে শুলুম।বড় খাটে আর ছিল বেলি আর খোকা।ফিরে গিয়ে শুধাবো,তুমি টের পেয়েচিলে সেই যে বিলেত থেকে তোমায় দেখতে এসে সামান্য আদর করলুম।
তীর্থও ভাবছিল,সংসার মিথ্যে নয়।সবটাই সত্যি।কেউ চলে গেলে আবার একজন আসছেন।তাতে রোদ ওঠায় নতুন চলায় কোন ছেদ নেই।এ যেন দিন থেকে রাতে প্রবেশ।
ছোট বউ,রথীর বিয়ের পাত্রী কিছুতেই পছন্দ করতে পারছি না।তুমি বারবার নাকচ করচ।আজ বলতেই হবে- কে!
প্রতিমা।কায়াহীনা উত্তর দিলে।
রাতচরা পাখি ডানার ঝাপট শুনিয়ে উড়ে গেলো।
একবার দেবাশিসবাবু,জয়ন্তী মহোদয়ার আমন্ত্রণে জোড়াসাঁকো গেলাম।ঘরগুলি ঘুরছি যেন মনে হল ওরা কথা বলছেন।শমী বেলা মৃণালিনী সকলেই।শুধু আমি দেখতে পাচ্ছি না।
তোমার জ্যোতিদাদা কি বললে!
 নতুন বউঠাান,জীবন কি একটা মস্তো ফাঁকি!
হাসলে শুধু।
শমী বললো,সে একটা বৃক্ষালোকে রয়েছে,ভারী সুন্দর।
তীর্থ ভাবছিল,তাদের বাড়িতেও প্ল্যানচেট হতো।পেন্সিল চলতে শুরু করতো।এখন মনে হয় সবটাই কল্পনা।
রবীন্দ্রনাথ কি জানতেন না,প্ল্যানচেট সত্যি নয়।তবুও ওপারের জীবনে বিশ্বাসী হওয়া।যেন কিছু হারায়নি।কথার কথাও নয়।
সেদিন বড়পিসি মিডিয়ম হয়ে যা উত্তর দিয়েছেন,সবটা নিজেদের চাওয়া।রবীন্দ্রনাথও তাই।কল্পনাকে নিজের কাছেই সত্যি করা।

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...